ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিনোদন

‘সরাসরি বলে দিয়েছি, আপনার কাজ করবো না’

খায়রুল বাসার নির্ঝর, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৯, ২০১৫
‘সরাসরি বলে দিয়েছি, আপনার কাজ করবো না’ মাহমুদ দিদার

গতানুগতিক ধারার বাইরে দাঁড়িয়ে মাহমুদ দিদারের নির্মাণ। ঈদ আয়োজনে রয়েছে তার দু’টি টেলিছবি।

১৯ জুলাই দুপুর ২টা ১০ মিনিটে বাংলাভিশনে প্রচার হয়েছে ‘পাপারাজ্জি’। ২০ জুলাই দুপুর আড়াইটায় এনটিভিতে থাকবে ‘মেট্টোপলিটন প্রেম’। চলচ্চিত্র ‘বিউটি সার্কাস’-এর জন্য এ বছর সরকারি অনুদান পেয়েছেন তিনি। সবকিছু নিয়ে মাহমুদ দিদার কথা বললেন বাংলানিউজের সঙ্গে।

বাংলানিউজ: ইদানিং আমরা টিভি নাটকে কেন যেন ক্রাইমের দিকে খুব ঝুঁকে গেছি। পিস্তলের গুলি, উড়োজাহাজ ছিনতাই, সবকিছু মিলিয়ে অ্যাকশন, ক্রাইম, ভায়োলেন্স এই দিকটা প্রাধান্য পাচ্ছে। আরেকটা বিষয় হচ্ছে, কিছু অ্যাডাল্ট কনটেন্ট ঢুকছে। ডায়লগে, এক্সপ্রেশনে ঢুকছে, দেখানোর চেষ্টাও করছেন কেউ কেউ। এটা কেন হচ্ছে বলেন তো? আপনার পর্যবেক্ষণ কী?
মাহমুদ দিদার: যে প্রশ্নটা উঠছে সেটা খুবই দূর্দান্ত। আপনি বলছিলেন, টেলিভিশনে হিংস্র ট্রিটমেন্টটার কথা। গোলাগুলি, স্টাইলিশ নারী একটা জিন্স পরলো, এভাবে দেখিয়ে দিলো শরীর, স্লো মোশনে দৌড়াচ্ছে, হাঁটছে- এগুলো হচ্ছে বিকৃতির চূড়ান্ত পর্যায়। মানে জিনিসটা ধ্বংস হয়ে যাবে তো। নাটকপাড়া কিন্তু ধ্বংস হয়ে গেছে ইতোমধ্যেই। শুধু নামে মাত্র কিছু এজেন্সী বাঁচিয়ে রেখেছেন তাদের বিভিন্ন ব্যক্তিগত, ব্যবসায়িক চাহিদা পূরণের জন্য। এখানে এক ধরণের বিজনেস পলিসিকে জায়েজ করার জন্য নারীকে ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রচন্ডভাবে। সকাল হতে গভীর রাত পর্যন্ত। এটার কারনে ছেলেপ্রধান চরিত্রের ধারাবাহিক আপনি বেশিদিন চালাতে পারবেন না। চালাতে পারেন, একশো’র মধ্যে পাঁচটা। পঁচানব্বইটা নারী লাগবে। সবমিলিয়ে একটা নৈরাজ্য চলছে। এটা খুবই ভয়ানক সংকেত।

বাংলানিউজ: বলছিলেন যে, নাটকপাড়া ধ্বংস হয়ে গেছে বা যাবে। এটা কোন অর্থে? কাজের স্বাধীনতা নষ্ট হয়ে যাওয়ার কথা বলছেন?
মাহমুদ দিদার: আমাদের যে কাজগুলো হতো, আমরা স্বপ্নের মতো যে কাজগুলো করতে পারতাম। চলচ্চিত্রের বুনিয়াদ তৈরি করে দিতে পারতাম- সেটা এখন সংকটের মধ্যে পড়ে গেছে।

বাংলানিউজ: যারা এগুলো বানাচ্ছেন, তাদের যুক্তি হচ্ছে, ফ্যান্টাসি। এখন এই ধরণের ফ্যান্টাসি আসলে দর্শকের মধ্যে কতোখানি আছে?
মাহমুদ দিদার: এগুলো হচ্ছে ভন্ডামি। সস্তা জনপ্রিয়তা, খুব কম সময়ের মধ্যে মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে আসার প্রতিযোগিতা। এই প্রতিযোগিতা মূল গল্পের চর্চা, সিনেমার চিন্তাকে ক্ষতিগ্রস্থ করে মাধ্যমটিকে সংকুচিত করে দিচ্ছে।

বাংলানিউজ: জনপ্রিয়তার প্রসঙ্গ আসলো। নির্মাতা হিসেবে তো আপনি জনপ্রিয়তা কিংবা ব্যবসাকে অস্বীকার করতে পারেন না।
মাহমুদ দিদার: কিন্তু আমরা এগুলো কেন ধরে নিচ্ছি যে, দর্শক মাত্রই যৌনতা কিংবা সহিংসতা পছন্দ করে? প্রতিনিধিত্বমূলক মাধ্যম হিসেবে, আমাদের ভিজ্যুয়াল মিডিয়ার প্রচন্ড দায় আছে। মানুষের রুচি কি এমনি তৈরি হবে? চারপাশের প্রতিবেশগত আচরণ তার রুচি ঠিক করে দেবে। আমার অডিয়েন্সের সামনে আজকে আমি যদি এগুলো না করে, একটা দার্শনিক গল্প বলতাম, সে প্রথমে অভ্যস্ত না হতো। দ্বিতীয়বার সে ঠিকই গল্পটা নিতো। আমার দর্শকগুলো খুবই স্মার্ট। কিন্তু এখন তারা ভালো কিছু নিতে পারছে না। এখানে আর্ট ফর্ম ডেভোলপমেন্টের যে প্রধান লক্ষ ছিলো, চিন্তার জগতকে কাঁপিয়ে দেয়া; সেটা বন্ধ হয়ে গেছে। গল্পের এখন দু’টো ধারা। একটা হচ্ছে যৌনতা নির্ভর, আরেকটা খুবই মুমূর্ষু মানবিক গল্পের ন্যারেটিভ। এখন প্রথমটিরই জয়জয়কার চলছে।

বাংলানিউজ: কিন্তু এ সবের মধ্যেও তো আপনি একদিক দিয়ে সংগ্রাম করছেন...
মাহমুদ দিদার: আমরা চেষ্টা করছি। এখনও পর্যন্ত একটা গল্পও সস্তা করে বানাইনি। ওটা করলে আমার দশটা সিরিয়াল হয়ে যেতো এতোদিনে। মাহমুদ দিদারের দু’টো গাড়ি থাকতো, ফ্ল্যাট থাকতো।

বাংলানিউজ: একটা প্রশ্নও তো উঠতে পারে, দর্শককে ভাবানোর দায়ভারটা মাহমুদ দিদার কেন কাঁধে তুলে নিলেন?
মাহমুদ দিদার: এটা হচ্ছে ওরিয়েন্টেশন। সস্তার যেখানে জয়জয়কার, সেখানে সবাই যদি মিশে যায়, তাহলে তো হবে না। দিন শেষে তো কিছু না কিছু টিকে থাকবে। একটা সংগ্রাম টিকে থাকবে। ওইটার জন্য।

বাংলানিউজ: নির্মাতা হিসেবে কাজের ক্ষেত্রে আপনি কি পুরো স্বাধীনতাটা এখন পাচ্ছেন?
মাহমুদ দিদার: পেতাম না। কিন্তু আমি স্টান্ড নিতে পারি। একজন প্রযোজক বাংলাভিশনে বসে আমাকে বললেন, তোমাকে প্রডিউস করতে চাই। আমি সরাসরি বলে দিয়েছি, ‘আপনার কাজ আমি করবো না। ’ শামীম ভাইকে বলেছি, সে মুনাফাখোর। আমাদের এখানে ধরেন যে, ছয় লাখ টাকার একটা কাজের মধ্যে এক লাখ গায়েব করে ফেলা যায়। কিন্তু আমরা কোন কাজেই ছাড় দিচ্ছি না। ফলে প্রতি কাজেই টাকা গচ্চা যাচ্ছে। যদি বলেন, চলছে কিভাবে? বলবো যে, আমি জানি না। সত্যিই জানি না।

বাংলানিউজ: ঈদে প্রচার হবে আপনার ‘পাপ্পারাজ্জি’ ও ‘মেট্রোপলিটন প্রেম’। প্রেম কি ইদানিং আপনাকে খুব ভাবাচ্ছে? নাকি প্রচলিত গল্পের সঙ্গে এক ধরণের সমঝোতায় আসার চেষ্টা করছেন?
মাহমুদ দিদার: ‘মেট্টোপলিটন প্রেম’ নামের মধ্যে হয়তো প্রেমের আঁচ পাওয়া যায়। কিন্তু সেটা পুরোপুরি সত্য না। এর ভেতরে এক ধরণের দ্রোহ আছে, বিদ্রুপ আছে। এর ভেতরে যে কি পরিমাণ স্যাটায়ার আছে, সেটা গল্পগুলো না দেখলে বোঝা যাবে না। আমাদের কাজগুলো দেখতে হবে। আমি যে জার্নিটা করছি, সেটা অন্তঃসারশুণ্য জায়গা থেকে না। এটা চ্যালেঞ্জ দিতে পারবো। তাছাড়া প্রেম তো জরুরী এবং অনিবার্য বিষয়। এখন যে হুলুস্থুল প্রেমের মিছিল চলছে, সেটাকে আমরা প্রেম বলছি না। বলছি অপ্রেম। প্রেমটা কি তাহলে? সেটার ঈঙ্গিত গল্পের মধ্যে আছে।

বাংলানিউজ: আপনার চলচ্চিত্র ‘বিউটি সার্কাস’ সরকারি অনুদান পেয়েছে। কাজ শুরু হচ্ছে কবে থেকে?
মাহমুদ দিদার: শুরু হয়ে গেছে। দু’তিন দিনের ভেতরেই আমরা বেরিয়ে পড়ছি লোকেশন খুঁজতে। চিত্রনাট্যের সঙ্গে লোকেশন মেলানো খুবই জরুরী বিষয়। জয়া আহসানের সঙ্গে কথাবার্তা হয়ে গেছে। বাকি চরিত্রগুলোতে কারা অভিনয় করবে, সেটাও খোঁজাখুঁজি চলছে।



বাংলাদেশ সময় : ১৭১০ ঘণ্টা, জুলাই ১৯, ২০১৫
কেবিএন/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।