ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিনোদন

ঈদের ছবির টিকিটের জন্য হাহাকার!

জনি হক, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৩ ঘণ্টা, জুলাই ১০, ২০১৬
ঈদের ছবির টিকিটের জন্য হাহাকার!

প্রাণ ফিরে পেয়েছে চলচ্চিত্র! প্রেক্ষাগৃহগুলোর অবস্থা রমরমা। এবারের ঈদে মুক্তি পাওয়া ‘সম্রাট’, ‘শিকারী’, ‘রানা পাগলা-দি মেন্টাল’ ও ‘বাদশা-দ্য ডন’ সরগরম করে রেখেছে দেশের প্রেক্ষাগৃহগুলো।

সবখানেই ব্যাপক ভিড়ভাট্টা।

দর্শক সমাগম দেখে মনে পড়ছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত কবিতা- ‘নীল নবঘনে আষাঢ় গগনে তিল ঠাঁই আর নাহিরে/ওগো আজ তোরা যাসনে ঘরের বাহিরে। ’  দেশের বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহের কাউন্টারে হাজারও মানুষের ভিড়। ক্রমেই লোক সমাগম বৃদ্ধি পাচ্ছে।  প্রেক্ষাগৃহে বিপুল দর্শক উপস্থিতি দেখে ভুল করে অনেকে বিরোধী দল কিংবা সরকারি দলের সমাবেশ ভেবে বসবেন না!

ঈদকে ঘিরে বাংলা ছবি তথা দেশীয় চলচ্চিত্র শিল্পে জোয়ার উঠেছে বলা যায়। দর্শকদের উপচেপড়া ভিড় আর তুমুল চাহিদা থাকায় অনেককেই টিকিট না পেয়ে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে।

আবার ভিড় ঠেলে ভেতরে ঢুকে আসন না পেয়ে অনেকে দাঁড়িয়েই ছবি দেখেছেন। পাবনার জাহিদ হাসান জয় জানান, সেখানকার রূপকথা সিনেমা হলে সব শো হাউসফুল হওয়ার পরও মানুষের চাপে পুলিশ নিয়ে আসতে হয়েছে প্রেক্ষাগৃহ মালিককে।

কেআর সিয়াম নামে এক ভক্ত শনিবার জানান, সিনেমা হলের সামনে লোকজনের ভিড়ে ঘেমে গোসল করার মতো অবস্থার মধ্যেও কষ্ট করে টিকেট কেটে হলের ভেতর দাঁড়িয়ে ছবি দেখতে হয়েছে তাকে। সবশেষ শাকিব খানের ‘প্রিয়া আমার প্রিয়া’ (২০০৪) দেখতে গিয়ে এমন ভিড়ের সম্মুখীন হয়েছিলেন তিনি। এদিন সিফাত অর্ণব রেহান জানান, দুই ঘণ্টা চেষ্টা করে ব্ল্যাকে টিকিট কেটেও আসন খালি না পেয়ে বেঞ্চে বসতে হলো তাকে। এর আগে নাকি এতো ভিড় তিনি দেখেননি।  ভক্ত নিশাদ মাহমুদ শনিবার জানান, এদিন বাগআঁচড়ার ‪‎ময়ুরী‬ সিনেমা হলে দুপুর ১২টার শো দেখতে গিয়েছিলেন তিনি। এতো দর্শক নাকি তিনি এর আগে কখনও দেখেননি।  

ফেসবুকে শাকিব খানের ফ্যানপেজে কবির হোসেন সাদ্দাম জানিয়েছেন, প্রচুর মানুষ সিনেমা না দেখে প্রেক্ষাগৃহ থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন। কারণ টিকিট কাউন্টারে টিকিট নেই। তার অভিযোগ, ব্ল্যাকারদের হাতে তিন থেকে পাঁচ গুণ বেশি মূল্যে বিক্রি হচ্ছে টিকিট। ৫০ টাকার টিকিট ৪০০ টাকায়ও বিক্রি হয়েছে। ঢাকার পূর্ণিমা সিনেমা হলে কাউন্টারের পরিবর্তে টিকিট বিক্রি হচ্ছে ব্ল্যাকে।

তবুও দমে যাচ্ছেন না দর্শকরা, বিশেষ করে শাকিব ভক্তরা চড়া দামেই টিকিট কেটে ছবি দেখছেন। ফলে প্রেক্ষাগৃহের ভেতর আসন তো ফাঁকা নেই-ই, দাঁড়ানোর জায়গাও পাওয়া যাচ্ছে না।

ছয় বন্ধু মিলে ৮ জুলাই ছবি দেখতে গিয়েছিলেন হাসান হাবীব শান্ত। কিন্তু দেখা হলো না। কাউন্টারে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পরও তাদেরকে বলা হয় সব  টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। তারা জানতে পারেন, টিকিট কালোবাজারিদের হাতে চলে গেছে। পাশের একটি দরজার সামনে টিকিট বিক্রি করে ওখান দিয়েই প্রেক্ষাগৃহের ভেতরে লোক ঢুকানোর অভিযোগ এসেছে।

ফেসবুকে আরজে টম অ্যাকাউন্ট থেকে শনিবার (৯ জুলাই) বলা হয়েছে, কুষ্টিয়ার বনানীতে ৪০ টাকার টিকিট ৮০ থেকে ১০০ টাকা আর ৫০ টাকার টিকিট ১৫০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। টমসহ ১৫ জন গিয়েছিলেন দুপুর ১২টার আগে। বাইরে তখন প্রায় দুই-তিন হাজার মানুষ টিকিট পাওয়ার অপেক্ষায়। এতো ভিড় নাকি গত ১০ বছরে দেখা যায়নি।

সুমন হোসেন মুন্না শনিবার ফ্যানপেজে জানান, ৬০ টাকার টিকিট ১০০ টাকা আর ১০০ টাকার টিকিট ২০০ টাকায় সিনেমা হলের লোকজনই কালোবাজারি করছেন। দর্শক আসাদুজ্জামান রাজ ৮ জুলাই জানান, ঢাকার সনি সিনেমা হলে ২৫ টাকার টিকিট ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

সিলেটের জহিরুল ইসলাম মারজান ৮ জুলাই জানান, এখানকার নন্দিতা সিনেমা হলের কাউন্টারে কোনো টিকিট বিক্রি হয় না! দর্শকদেরকে কালোবাজারিদের কাছ থেকে চড়া দামে টিকিট কিনতে হয়। অভিযোগ রয়েছে, নন্দিতায় বিকেল ৩টার শো শুরুর আধ ঘণ্টা আগে কাউন্টার খোলার কথা থাকলেও সামনে কয়েকজন লোক বসে লুডু খেলে চলাচলে বিঘ্ন ঘটায়। পৌনে তিনটা বাজলে হঠাৎ কালোবাজারিরা ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে শতাধিক টিকিট নিয়ে। এসেই ২৫০, ২০০ ও ১৫০ টাকা করে বিক্রি করতে থাকে। বাধ্য হয়ে তাদের কাছ থেকেই টিকেট কিনছেন দর্শকরা। সিলেটবাসীর কাছে বড় সিনেমা হল এটাই। নন্দিতায় আসন আছে ১ হাজার ২০০টি। অথচ ভেতরে দর্শকসংখ্যা দেড় হাজার! ফলে ৩০০ মানুষকে দাঁড়িয়ে ছবি দেখতে হলো সেদিন।

ঠাকুরগাঁওয়ের বলাকায় ‘শিকারী’ দেখতে গিয়েছিলেন শহিদ আলম। টিকিট পেলেও আসন মেলেনি। বিশেষ ব্যবস্থায় টুলে বসে ছবিটি দেখতে হয়েছে তাকে। ফয়সল আহমেদ নামে এক ভক্তের অনেক বন্ধু আসনে বসার টিকিট না পেয়ে দাঁড়িয়ে ছবি দেখেছেন।

উবায়েদ আহমেদ নামের এক ভক্ত রোববার (১০ জুলাই) জানান, টানা দু’দিন সিনেমা হল থেকে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে তাকে। দর্শক সমাগম বেশি থাকার কারণে টিকিট পাননি তিনি। কুষ্টিয়ার আনান আহমেদ হতাশা নিয়ে ৭ জুলাই জানান, প্রায় দুই হাজার লোক সিনেমা হলের সামনে দাঁড়িয়ে। টিকিট না পেয়ে চলে আসতে হয়েছে তার মতো অনেককে। পরদিন সাভার, সেনা অডিটরিয়ামে গিয়ে একই অবস্থার সম্মুখী হন মিরাজ মাহমুদ জয়। তিনিও হতাশা নিয়ে ফিরেছেন।  

পরিবেশক ও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে ব্ল্যাকে টিকিট বিক্রি বন্ধ করার ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন চলচ্চিতপ্রেমীরা। তাদের মতে, কালোবাজারিরা অতিরিক্ত মূল্য পেলেও প্রযোজক ওই বাড়তি টাকা পান না। তাই নির্মাতাদেরকে টিকিট কালোবাজারি বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

টিকিট কালোবাজারির দৌরাত্ম্য ছাড়াও প্রেক্ষাগৃহের পরিবেশ নিয়েও অভিযোগ তুলেছেন দর্শকরা। আরাফাত হোসেন অনিক ৭ জুলাই জানান, গ্রামের প্রেক্ষাগৃহে ফ্যান দিয়ে কাজ চালানো হয়। ১ হাজার ২০০ দর্শকের মধ্যে ৯০ শতাংশর গায়ের জামা ছিলো হাতে। ৭০ টাকা করে ডিসি টিকিট কেটেও ছবি দেখতে না পেরে ছবি না দেখে বেরিয়ে যান তিনি। ভক্তরা হল মালিকদের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন, দর্শক ধরে রাখতে প্রেক্ষাগৃহের পরিবেশ এবং উন্নত প্রযুক্তি যুক্ত করে আধুনিক সিনেমা হল গড়ে তুলুন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮২৮ ঘণ্টা, জুলাই ১০, ২০১৬
জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।