ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিনোদন

আমি রীতিমতো বিব্রত : মিশা সওদাগর

সোমেশ্বর অলি, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৪ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০১৬
আমি রীতিমতো বিব্রত : মিশা সওদাগর মিশা সওদাগর-ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

দেশীয় চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় অভিনেতা মিশা সওদাগর। দীর্ঘদিন ধরে খলনায়কের আসনটি তার দখলে।

ব্যতিক্রম অভিনয়ের সুবাদে পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। সোজাসাপ্টা কথা বলার জন্য অনেকে পছন্দ করেন মিশাকে। ঈদ উপলক্ষে তার অভিনীত দুটি ছবি মুক্তি পেয়েছে। ‘সম্রাট’ ও ‘রানা পাগলা-দি মেন্টাল’-এ অভিনয়ের সূত্র ধরে বাংলানিউজরে সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন তিনি। পড়ুন মিশা সওদাগরের সাক্ষাৎকার-

বাংলানিউজ: কেমন আছেন? ঈদ কেমন কাটলো?
মিশা সওদাগর:
মন ভালো নেই। ঈদও ভালো কাটেনি। যদিও আমার ছেলে (হাসান মোহাম্মদ ওয়ালিদ) ঈদ করার জন্য দেশে এসেছে।   

বাংলানিউজ: মন খারাপ কেন? 
মিশা:
এমনিতেই মন-মেজাজ খারাপ। তাছাড়া আমার ভাই অসুস্থ। তিনি হাসপাতালে ভর্তি আছেন। আর ঈদ ভালো কাটেনি নানা কারণে। সবাই জানেন, দেশের অবস্থা ভালো নেই। বিশ্বব্যাপী বিরাট এক সংকট তৈরি হয়েছে। সব মিলিয়ে এই প্রথম কাউকে ঈদ মোবারক বলিনি, বলার মতো আগ্রহ হয়নি। সত্যি বলতে, ক্যামেরার বাইরে আমি অভিনয় করতে পারি না।   

বাংলানিউজ: ঈদের চার ছবির দুটিতেই (সম্রাট ও রানা পাগলা-দি মেন্টাল) আপনি আছেন। কেমন সাড়া পাচ্ছেন? 
মিশা:
আমার ৩০ বছরের ক্যারিয়ারে ঈদে পরিবার নিয়ে সিনেমা হলে ছবি দেখতে যাচ্ছি। এবারও গিয়েছি। বসুন্ধরার স্টার সিনেপ্লেক্সে ‘সম্রাট’ দেখেছি। পরিচালক রাজ (মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল) আমাকে নিয়ে গিয়েছিলেন। দর্শকদের মধ্যে বেশ আগ্রহ লক্ষ্য করেছি।  

বাংলানিউজ: আপনার দুটি ছবির পরিচালকই নবাগত। প্রেক্ষাগৃহে ছবি দেখার পর কেমন মনে হলো? রাজ ও রনির (শামীম আহাম্মেদ) প্রতি কোনো পরামর্শ আছে?
মিশা:
রাজ সম্পর্কে আগেই বলেছি, ও বেশ স্টাইলিশ পরিচালক। স্মার্ট মেকিং আর সুন্দর রুচিবোধের পরিচয় পাওয়া যায় ওর কাজে। দর্শক কতোটুকু গ্রহণ করবেন সেটা পরের ব্যাপার। আর ‘সম্রাট’ তো হাউসফুল যাচ্ছে। সিনেপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ আগেই আমাকে ভেতরে নিয়ে গিয়েছিলো। যে কোনো মেজাজের দর্শকই দুই ঘণ্টার ছবিটি উপভোগ করবে। এক থেকে দেড় কোটি টাকায় অসম্ভব সুন্দর একটি ছবি বানিয়েছে রাজ। আমার এতোদিনের অভিজ্ঞতা দিয়ে বিচার করলে ছোটখাট ভুলভ্রান্তি তো আছেই, এটাই স্বাভাবিক। সেটা ‘টাইটানিক’-এও আমরা পাবো। অল্প বাজেটে এমন ছবি বানাতে পারে বলেই আমার দেশের পরিচালকরা স্পেশাল, আলাদা। এই চেষ্টাটা অনেক বড় ব্যাপার। এক কোটি টাকা আসলে টেলিফিল্মের বাজেট, ছবির নয়।

বাংলানিউজ: আর ‘রানা পাগলা-দি মেন্টাল’?
মিশা:
‘মেন্টাল’ দেখে আমি নিজে কিছু বুঝিনি। রনি চেষ্টা করেছেন, কিন্তু শিল্পী হিসেবে গল্পটা আমার কাছে পরিস্কার নয়। আমার সঙ্গে যারা ছবিটি দেখছিলেন, তাদের অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছি। আমাকে এতো প্রশ্ন করা হচ্ছিলো যে, রীতিমতো বিব্রত হচ্ছিলাম। ছবির ধারাবাহিকতা ঠিক নেই, পোশাকের ধারাবাহিকতাও নেই। আরও নানা সমস্যা।  

বাংলানিউজ: নির্মাতার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সাইকো থ্রিলার ধাঁচের ছবি ‘রানা পাগলা-দি মেন্টাল’-এর সঙ্গে দর্শক নাকি সম্পৃক্ত হতে পারছে না…!
মিশা:
আরে…ওর (রানা, শাকিব খানের চরিত্র) মেন্টাল ডিজিজ আছে। ও ভুলে যায়। কিন্তু অন্য চরিত্রগুলো তো মেন্টাল নয়। ছবিতে এক জায়গায় আমি বলছি- আমি বিয়ে করিনি। আরেক জায়গায় বলছি- এক্ষুনি চল, বিয়ে করবো বাসায় চল। আমার দুই ভাগ্নি আমাকে এ ভুল ধরিয়ে দিলো। আবার ছবিতে পড়শি কেন এলো, পড়শি কেন চলে গেলো? ছবিতে একটি রিপিট শট আছে ২০ মিনিটের। চারটি খুন দিয়ে ছবি শুরু হয়, আবার কেন সেগুলো দেখাচ্ছে বোঝা গেলো না! আর শুটিং শুরুর পর গল্পও অনেক বদলানো হয়েছে। আমার কিছু দৃশ্য ফেলে দেওয়া হয়েছে। আর স্ক্রিপ্টে থাকলেও কিছু দৃশ্যের শুটিংই করা হয়নি। রনি পক্ষপাতিত্ব করেছেন। এসব কারণে গল্পটা দর্শকের কাছে পরিষ্কার হয়নি।  

বাংলানিউজ: অন্য দুটি ছবি (শিকারী ও বাদশা) দেখেছেন?
মিশা:
না, দেখিনি। তবে শুনেছি ছবিগুলো ভালো যাচ্ছে। এজন্য সংশ্লিষ্টদের অভিনন্দন জানাই। ভালো ছবি ভালো চলুক, আমার কোনো আপত্তি নেই। তবে হ্যাঁ, আগের মতোই যৌথ প্রযোজনার নামে ভারতীয় ছবি বানানোর প্রতিবাদ করি। ‘আমি শুধু চেয়েছি তোমায়’ দিয়ে যৌথ প্রযোজনার ছবিতে অভিনয় করেছিলাম। এরপর অন্তত কুড়িটি ছবিতে প্রস্তাব পেয়েছি, কিন্তু রাজি হইনি। এসকে মুভিজ আমাকে দুই বছরের জন্য চুক্তিবদ্ধ করতে চেয়েছিলো। যৌথ প্রযোজনার ছবি করতে গেলে এতো বদনাম হয় যে, ভেজালে জড়াতে ইচ্ছে করে না। প্রথমটি করেছিলাম কাগজপত্র ঠিক আছে ভেবে। এখন তো যৌথ প্রযোজনার ছবি সম্পর্কে কতো কিছু কানে আসে। শুনলাম, ‘শিকারী’র পরিচালক নাকি আব্দুল আজিজ! তিনি কোনোদিন অ্যাকশন বলেছেন? সীমান্ত কোথায় গেলো? এটা পরিচালকদের প্রতি অবমাননা নয়? যৌথ প্রযোজনার ছবিকে এভাবে সংজ্ঞায়িত করি- এক মহিলার গর্ভে সন্তান। তিনি বলছেন আমার সন্তানের পিতা দু’জন! 

বাংলানিউজ: তাহলে যৌথ প্রযোজনার ছবি না হলেই ভালো?
মিশা:
আমার মতে, নিয়ম অনুযায়ী এটা হতে পারে। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে এটা সময়ের দাবি। নিয়ম অনুযায়ী দুই বাংলার শিল্পীরা আসা-যাওয়া করবেন। সব সমান হতে হবে। ওখানকার পরিচালক ছবি বানিয়ে দেবেন, এখাকার একজনের নাম বসিয়ে দেবেন- এটা হতে পারে না।  

বাংলানিউজ: এই ঈদে শাকিব খানের তিনটি ছবি মুক্তি পেয়েছে। অনেকে বলছেন, তিনি বেশ বদলে গেছেন। তার লুক পরিবর্তন হয়েছে। চারদিকে তার প্রশংসা। সহশিল্পী হিসেবে শাকিব সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?
মিশা:
কোথায় লুক বদলে গেছে? লুক দিয়ে কী আসে যায়? ‘শিকারী’ ছবিতে শাকিব ওজন কমিয়েছিলেন ক্যারিয়ার বাঁচানোর জন্য। তিনি ভাবতে পারেন ভারতীয় ছবি করেই চলবেন। কিন্তু ‘মেন্টাল’ আর ‘সম্রাট’-এ শাকিব বেশ স্থুলাকৃতির। দুই ছবিতে তাকে একেকবার একেক রকম লেগেছে। তবে লুক মুক ব্যাপার নয়, ছবি চলে শাকিবের নামেই।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪২ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০১৬
এসও/জেএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।