ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিনোদন

শিল্পকলা একাডেমিতে ‘বাহাস’ আয়োজনকে ঘিরে তিনপক্ষের বক্তব্য

বিনোদন ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৩ ঘণ্টা, জুলাই ২৫, ২০১৬
শিল্পকলা একাডেমিতে ‘বাহাস’ আয়োজনকে ঘিরে তিনপক্ষের বক্তব্য

তীরন্দাজ নাট্যদল আয়োজিত “বাকবিতন্ডা ও নাটক কণ্ঠনালীতে সূর্য” মঞ্চায়ন ঘিরে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে তুলকালাম হয়ে গেলো! গত ২০ জুলাইয়ের এ ঘটনাকে ঘিরে তৈরি হচ্ছে নানা মত। তীরন্দাজের দীপক সুমন ও আরণ্যকের মামুনুর রশীদ নিজেদের অবস্থান পরিস্কার করে বক্তব্য দিয়েছেন যেখানে দু’জন দু’জনকে দোষারোপও করেছেন।

এবার পাওয়া গেলো শিল্পকলা একাডেমির বক্তব্য। বিষয়টি নিয়ে ‘বাড়াবাড়ি’ হলে সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটি কঠোর অবস্থানে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে।

দীপক সুমনের বক্তব্য
২০ জুলাই তীরন্দাজ আয়োজিত বাকবিতন্ডা ও নাটক ‘কণ্ঠনালীতে সূর্য’ মঞ্চস্থ হওয়ার কথা ছিলো। ১৭ জুলাই (রোববার) অন্য দলের ছেড়ে দেওয়া হল বরাদ্দ পাওয়ার পর সোমবার বাকবিতন্ডা অনুষ্ঠানটি ভিডিও ধারণ করে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার একটা প্রস্তুতি নিতে শুরু করি তীরন্দাজের কিছু শুভাকাঙ্ক্ষী বন্ধুর উৎসাহে। শিল্পকলা কর্তৃপক্ষ অনুষ্ঠানের আগের দিন মঙ্গলবার রাতে নিজ থেকেই ফোনে ভিডিও ধারণের খবর পেয়েছেন জানান এবং আমাদের অনুমতি নেওয়ার জন্য বলেন। বুধবার সকালে আমরা বাকবিতন্ডা ও ‘কণ্ঠনালীতে সূর্য’ নাটকের কথা উল্লেখ করে ভিডিও ধারণের অনুমতি চেয়ে চিঠি দিই।  

আবেদনপত্র হাতে পাওয়ার পর যখন তারা জানতে পারে আলোচনার বিষয় সুন্দরবন, তখন থেকেই তারা আমাদের নানারকম হুমকি-ধমকি, পুলিশ ডেকে সাজঘরে আতংক ছড়ানোর চেষ্টা করতে থাকে। উপস্থিত তীরন্দাজের শুভাকাঙ্ক্ষী বন্ধুগণ তখন থেকে প্রকাশ্যেই অন্তত চারটি পেশাদার ক্যামেরা দিয়ে এই অগণতান্ত্রিক আচরণ ভিডিও ধারণ করতে থাকে। বিকেল পাঁচটার পর আমি শিল্পকলায় পৌঁছাই। তখন আমরা অনুমতি নিতেই গিয়েছিলাম মহাপরিচালকের দপ্তরে। ওস্তাদের (মামুনুর রশীদ) কথাই সত্য। ওনাকে দেখা মাত্রই মনে হলো, এই তো এসে গেছেন উনি। আমার মনে বিশ্বাস জন্মায়, এবার কর্তৃপক্ষ নত হতে বাধ্য হবে নাট্যকর্মীদের কাছে। ’ 

মামুনুর রশীদকে উদ্দেশ্য করে দীপক সুমনের বক্তব্য এমন, ‘আজ এই ঘটনা আমার সঙ্গে হয়েছে, কাল একই ঘটনা ওস্তাদের সঙ্গেও হবে। কারণ আমি জানি, আমার ওস্তাদ- সুন্দরীর নির্মাতা অবশ্যই সুন্দরীর এই মহাদুর্দিনে সুন্দরীকে নিয়ে নতুন নাটক লিখবেন। সে নাটক ছড়িয়ে পড়বে সারাদেশে। দেশের আনাচে-কানাচে মঞ্চস্থ হবে সেই নাটক। তখন যদি কেউ বাঁধা দিতে আসে আমিই তার সামনে দাঁড়াবো, আমরাই তাদের সামনে দাঁড়াবো। আমরা মানে ‘মানুষ’ । আমার ব্যক্তিগত প্রোফাইলে এমন কিছু এখনও আপলোড করিনি যার মাধ্যমে আমার ওস্তাদের সুনাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ’

মামুনুর রশীদের বক্তব্য
আমার সামনাসামনি হতেই দীপক সুমন অত্যন্ত ঔদ্ধত্যপূর্ণ ভঙ্গিতে প্রায় অপ্রাসঙ্গিকভাবে আমাকে সরাসরি জিজ্ঞেস করে বসলো, ‘আরণ্যক শ্রেণী সংগ্রামের কথা বলে, জসিম উদ্দিন মন্ডলকে দিয়ে বক্তৃতা দেওয়ায়...অথচ আমরা থিয়েটারের মঞ্চে বাহাসের আয়োজন করলেই বাধা আসবে কেনো?’ ইত্যাদি ইত্যাদি। প্রত্যুত্তরে আমি বলি, জসিম উদ্দিন মণ্ডলকে দিয়ে নাটকের আগে কখনও বক্তৃতা দেওয়া হয়নি। কোনো মঞ্চেই নয়। সেটা আমরা করি শহীদ মিনারে মে দিবসে। নাট্যমঞ্চ বাহাসের জায়গা নয়। এ-ও বলি, সুন্দরবন নিয়ে আনু মুহাম্মদ কথা বলবেন। যোগ্য ব্যক্তি হিসেবেই বলবেন কিন্তু তার জন্য আলাদা জায়গা নির্ধারণ করা দরকার। আমি এ-ও বলি, তুমি সুন্দরবন নিয়ে নাটক করো। সেই নাটক যার বিরুদ্ধেই যাক না কেনো, যদি কোনো কর্তৃপক্ষ বন্ধ করে আমি তোমার পাশে দাঁড়াবো। এই বাদানুবাদের পর আমি মহাপরিচালকের কক্ষে যাই ও নাটক বন্ধের কারণ জিজ্ঞেস করি। মহাপরিচালক আমাকে বলেন, ‘আমরা বাহাস বন্ধ করতে বলেছি এবং সরাসরি সম্প্রচারের জন্য যে যন্ত্রপাতি আনা হয়েছিলো সেগুলো সরিয়ে নিতে বলেছি, নাটক বন্ধ করতে বলিনি। কিন্তু কোনো কিছুতেই যখন তারা মানছিলো না বরং আমাদের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিচ্ছিলো তখন আমরা হল বরাদ্দ বাতিল করতে বাধ্য হয়েছি। ’ আমি মহাপরিচালককে অনুরোধ করি আপনি ওদের সঙ্গে কথা বলুন। পরে মহাপরিচালক লাউঞ্জে লোক পাঠান কিন্তু ততোক্ষণে তারা চলে গেছে ও বাইরে তুলকালাম কাণ্ড বাধিয়ে ফেলেছে।

শিল্পকলা একাডেমির বক্তব্য 
তীরন্দাজ নাট্যদল নামের একটি সংগঠন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বরেণ্য নাট্যব্যক্তিত্ব ও নাট্যচর্চার সুনাম ক্ষুণ্ন করার জন্য ক্রমাগতভাবে মিথ্যাচার করে যাচ্ছে। তারা সংস্কৃতিকর্মী ও সাংবাদিকদের বিভ্রান্ত করতে মিথ্যা তথ্য প্রচার করছে।  

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি তীরন্দাজ নাট্যদলকে নাটক করার জন্য হল বরাদ্দ দিয়েছে। নাটকের আগে আয়োজিত তাদের অনির্ধারিত, তথাকথিত সুন্দরবন চুরি বিষয়ক ‘বাক বিতন্ডা ও বাহাস’ অনুষ্ঠানটি না করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়। কারণ তারা শুধু নাটক প্রদর্শনের জন্যই অনুমতি বা হল বরাদ্দ নিয়েছিলো।  

কোনো নাট্যদল মিলনায়তন বরাদ্দ নিতে চাইলে তাদেরকে একটি নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হয়। তাতে নাটকের আগে বা পরে কোনো আলোচনা বা আয়োজন আছে কি-না তার জন্য একটি ছক বা পয়েন্ট থাকে। কিন্তু তীরন্দাজ নাট্যদল তাদের আবেদনে ‘বাকবিতন্ডা ও বাহাস’ অনুষ্ঠানের কথা উল্লেখ করেনি। প্রথমত এই ধরনের অনির্ধারিত বাড়তি অনুষ্ঠানের অনুমতি না নেওয়া, দ্বিতীয়ত নীতিমালা ভঙ্গ করে ভিডিও ধারণ করে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের অপচেষ্টা করার কারণে তীরন্দাজ নাট্যদলকে শুধু নাটক প্রদর্শন করতে বলা হয়। কিন্তু তারা বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি কর্তৃপক্ষকে জোর করে এই অনুষ্ঠান করার হুমকি ও বিশৃংখলা তৈরির হুমকি প্রদান করে।  

এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২০ জুলাই রমনা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও করে একাডেমি। ওইদিন সন্ধ্যায় তীরন্দাজ নাট্যদলের কিছু উশৃঙ্খল কর্মী জাতীয় নাট্যশালার কলাপসিবল গেট ভেঙে হইচই করে চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা তৈরি করে। ২০১৩ সালে তীরন্দাজ নাট্যদল বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মঞ্চেই এই নাটকটির প্রথম মঞ্চায়ন করে। তিন বছর তীরন্দাজ নাট্যদল এই একাডেমিতে ‘কণ্ঠনালীতে সূর্য’ নাটকটির ১০-১২টি প্রদর্শনী করেছে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি যদি নাটক করতে বাঁধা দিতো, তাহলে এই নাটকের এতো প্রদর্শনী এখানে হলো কীভাবে? একের পর এক মিথ্যাচার করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মতো একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুণ্ন করার যে ঘৃণ্য প্রয়াস তীরন্দাজ নাট্যদল চালিয়ে আসছে আমরা তার নিন্দা জানাই।

* শিল্পকলায় মামুনুর রশীদ ও দীপক সুমনের তর্কের ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন এখানে :

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৩ ঘণ্টা, জুলাই ২৫, ২০১৬
এসও/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।