ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিনোদন

কোনো সুপারস্টারেরই সব ছবি সুপারহিট না: ফেরদৌস

জনি হক, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১০২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২, ২০১৬
কোনো সুপারস্টারেরই সব ছবি সুপারহিট না: ফেরদৌস ফেরদৌস-ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

অটিস্টিক শিশুর বাবার চরিত্রে অভিনয় করলেন চিত্রনায়ক ফেরদৌস। সরকারি অনুদানে নির্মিত ‘পুত্র’ নামের একটি ছবিতে তাকে এ ভূমিকায় দেখা যাবে।

মঙ্গলবার (১ নভেম্বর) ঢাকার বসুন্ধরা সিটির স্টার সিনেপ্লেক্সে এর উদ্বোধনী প্রদর্শনী হয়।

হারুন রশীদের কাহিনীতে এ ছবির চিত্রনাট্য ও সংলাপ লিখেছেন এবং পরিচালনা করেছেন সাইফুল ইসলাম মাননু। প্রদর্শনী শুরুর আগে ‘পুত্র’ ও অন্যান্য প্রসঙ্গে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন ফেরদৌস।

বাংলানিউজ: আমাদের এখানে অটিস্টিক শিশুদের নিয়ে ছবি তেমন হয়নি বললেই চলে...
ফেরদৌস:
এজন্যই কাজটা করতে উৎসাহী হয়েছি। কারণ এ ছবির বিষয়বস্তুর  সঙ্গে আমরা সবাই পরিচিত। আমাদের সমাজে যদি তাকাই, আমার নিজের হোক বা আশেপাশের হোক, কারও না কারও এ ধরনের সমস্যা আছে। এগুলো এতোদিন লুকিয়ে রাখার প্রবণতা ছিলো আমাদের মধ্যে। আমাদের ছেলে, ভাই বা আত্মীয়স্বজন যদি অটিজমে আক্রান্ত হয় তাহলে কাউকে জানতে দিতাম না। আমরা ভাবতাম কাউকে বললে হয়তো হেয় হয়ে যাবো। অথচ এটাও একটা রোগ। এটাকেও চিকিৎসা করানো দরকার। এসব শিশুদের জন্য আমার অনুভূতি কাজ করে। তাদের প্রতি আমার দুর্বলতা আছে। এমন অনেক বাচ্চাকে আমার কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছিলো। আমার ঘনিষ্ঠ কয়েকজন বন্ধু আছে, যাদের সন্তানরা এরকম স্পেশাল। তারা বাচ্চাদেরকে চিকিৎসা করিয়েছে দেশের বাইরে থেকে, এখন তাদের অনেকে ভালো আছে। এ ঘটনাগুলো আমি দেখেছি।

সন্তান এরকম হলে অনেক মা-বাবা পার্টিতে নিয়ে যেতে পারেন না, সমাজে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারেন না। অথচ ওরা অচ্ছুৎ কিছু না। তারা স্পেশাল বা বিশেষ শিশু। আমরা ওদেরকে অটিস্টিক বলি, শব্দটা আমার কানে লাগে। কিন্তু তারা সত্যিই বিশেষ শিশু। কারণ তারা কোনো না কোনোদিক দিয়ে স্পেশাল। তাদেরও প্রতিভা থাকে। আমরা যদি তাদেরকে সাধারণ শিশুদের মতো পড়াই, স্কুলে নিয়ে যাই, তাহলে ওদের ভেতর থেকে প্রতিভাটা বেরিয়ে আসবে। আমরা যেন ওদেরকে অবহেলা না করি, এ বক্তব্য ছড়িয়ে দেওয়ার প্রয়াস থেকে সাজানো চিত্রনাট্য পেয়ে কাজ করার আগ্রহ জন্মালো। তাই প্রস্তাবটি পেয়ে একবাক্যে অভিনয় করতে রাজি হয়েছি।

বাংলানিউজ: এমন বিষয়বস্তু নিয়ে ছবি হলে তাতে প্রামাণ্যচিত্রের আমেজই থেকে যায় বেশি। ‘পুত্র’র ক্ষেত্রে কী বলবেন?
ফেরদৌস:
এটা একেবারেই ডকুমেন্টারি বা ডকু-ফিল্ম নয়। আমি ডাবিং করার সময় পুরো ছবিটা দেখেছি। এর মধ্যে বাণিজ্যিক অনেক উপাদানই রয়েছে। গল্পের প্রয়োজনে একটি আইটেম সংও আছে। তবে তথাকথিত মসালাদার বিনোদন প্রত্যাশা করা ঠিক হবে না। এটা দরকারও ছিলো না এই গল্পে। একটা ছবি বা গল্পের আপন গতি থাকে, সেই গতির সঙ্গে যা যা উপাদান প্রয়োজন তা এ ছবিতে আছে। দেখে মনে হবে না ডকু-ফিচারের মতো। গল্পের প্রয়োজনে ফান আছে, আবেগও আছে। শুধু জোর করে কথা শোনানো বা শিক্ষামূলক না ব্যাপারটা। মানুষকে কিন্তু জোর করে তিন ঘণ্টা ধরে শিক্ষামূলক ছবি দেখানো যায় না।

বিনোদনের সঙ্গে এখানে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির ব্যাপার তুলে ধরা হয়েছে। এটা জীবনের অংশ। যেটা জোরপূর্বক মনে হবে না। গল্পের সঙ্গে এমনভাবে সব মিশে গেছে যে, দর্শকরা গল্পের মধ্যে ঢুকতে পারবে অনায়াসে। তারপর তারা অনুধাবন করবে, এই সমস্যাটা যে পরিবারে হয়, তাদের পরিস্থিতি কী দাঁড়ায়। অশিক্ষিত পরিবারে কী রকম হয়, আবার শিক্ষিত পরিবারে কেমন হয়। একেক পরিবারে কিন্তু এ সমস্যা একেক প্রভাব ফেলে। এখানে একটা শ্রেণীকেই শুধু দেখানো হয়নি, বিভিন্ন শ্রেণীতে সমস্যাটা কী রকম থাকে, সবই মোটামুটি তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু সুন্দরভাবে একটা গল্পের আকারে, আনন্দ-বিনোদনের মাধ্যমে। একেবারেই একঘেঁয়ে কোনো ব্যাপার নেই।

একটা সময় জানি না আপনাদের চোখে পড়েছে কি-না, রাস্তায় প্রচুর পাগল দেখেছি আমরা। তবে ওরা কিন্তু পাগল না। ওদের হয়তো কোনো একটা সমস্যা ছিলো, তারা হয়তো গ্রাম থেকে আসা দরিদ্র। বিভিন্নভাবে তাদেরকে আলাদা করে দেওয়া হয় সমাজ থেকে। অথচ তাদেরকে যথাযথ চিকিৎসা করিয়ে আমরা যদি মমতা দিয়ে ভালোবাসার হাত বাড়িয়ে দিতাম, তাহলে কিন্তু তারা পথে পথে এমন মানবেতর জীবনযাপন করতো না। এ ব্যাপারগুলো ‘পুত্র’ ছবিতে আছে।

বাংলানিউজ: জয়া আহসানের সঙ্গে আপনার এবারের রসায়ন কেমন?
ফেরদৌস:
নাসিরউদ্দীন ইউসুফের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ছবি ‘গেরিলা’য় আমাদের রোমান্টিক ঘটনাগুলো দেখানো হয়েছে। এবার আমাদের দু’জনেরই অন্য ধরনের চরিত্র। এখানে গতানুগতিক প্রেম-ভালোবাসা কিছু নেই। অন্যরকম আবহে দেখা যাবে আমাদের। আমরা দু’জনই শক্তিশালী দুটি চরিত্রে কাজ করেছি। এ ছবিতে আমাদের দেখা হয় টানাপোড়েনের কারণে। যে স্পেশাল শিশুকে ঘিরে গল্প, তার বাবার ভূমিকায় আছি আমি। সন্তানের প্রতিবন্ধকতা বাবা প্রথমে মেনে নিতে পারেন না। একসময় জয়ার সহযোগিতায় ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হন তিনি। জয়ার চরিত্রটি শিক্ষকের।

বাংলানিউজ: ‘পুত্র’ কি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন?
ফেরদৌস:
দেখবেন শতভাগ ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে এই ছবি। আমাদের ভক্ত-দর্শকরা প্রত্যেকেই অটিজম ব্যাপারটা সম্পর্কে জানেন। তাদের পরিচর্যার জন্য প্রচুর স্কুল হয়েছে, আমাদের পরিবারের যদি এরকম ব্যাপার থাকে তাহলে শিক্ষকদের পরামর্শ নিয়ে স্পেশাল শিশুদেরকে যথাযথ শিক্ষা দেওয়া উচিত। আমরা যারা সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি ও সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতার কথা বলি, ভালো ছবির পক্ষে থাকি ও সমর্থন জানাই, তারা যদি এভাবে এগিয়ে আসি, অবশ্যই ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এ ছবির মাধ্যমে স্পেশাল শিশুদের ব্যাপারে অন্যদের অনুভূতি তৈরি হতে পারে।

আর আমার ভক্তরা এটা দারুণভাবে নেবে আশা করছি। কারণ তারা সবসময় আমাকে অন্যভাবে দেখে অভ্যস্ত। প্রচুর বাণিজ্যিক ছবিতে কাজ করলেও পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতা আছে এমন বিষয়বস্তুর ছবিতে অভিনয়ে চেষ্টা করেছি। সে হিসেবে আমার মনে হচ্ছে ‘পুত্র’ অন্যরকম সংযোজন। আমি চাই এ ছবিটা সফল হোক। তাহলেই শুধু বাণিজ্যিক ছবি না, এরকম বক্তব্যপ্রধান ছবির সংখ্যাও ধীরে ধীরে বাড়বে। যেটা আমাদের সমাজে খুব ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে।

বাংলানিউজ: গল্পপ্রধান ছবি যেহেতু বলছেন, সেক্ষেত্রে ‘আয়নাবাজি’ কি আপনাদেরকে উৎসাহিত করছে? এ ছবিতে তথাকথিত কোনো সুপারস্টার না থাকলেও দারুণ ব্যবসা করেছে।
ফেরদৌস:
‘আয়নাবাজি’ অবশ্যই আমাদেরকে উৎসাহিত করছে। কারণ আমাদের মাথার ভেতর ঢুকে গিয়েছিলো, ছবি চালানোর জন্য কমপক্ষে দু’একজন তারকা লাগবে। কিন্তু আমি বরাবরই বলে এসেছি, পৃথিবীর কোনো সুপারস্টারেরই সব ছবি সুপারহিট না। কোনো সুপারস্টারই বলতে পারবে না, আমার ছবি চলবে। ছবির জন্য একটা গল্প, মেকিংসহ এমন কিছু উপাদান লাগবে যা মানুষ আগে কখনও দেখেনি। মানুষ নতুনত্ব চায়। নিত্যনতুন কিছু দেখার আকাঙ্ক্ষায় থাকে। দশ বছর আগে আমাদের সমাজে যে সমস্যা ছিলো, সেগুলো এখন আর নেই। সুতরাং এখন সেসব সমস্যা নিয়ে ছবি বানালে মানুষের ভালো লাগবে না। সময়ের সঙ্গে সময়ের গতিতে আমাদেরকে চলতে হবে।

২০-২৫ বছর আগে অটিজম নিয়ে এমন একটা কাজ করতে গেলে অনেক প্রযোজকই লগ্নি করতে রাজি হতেন না। কিন্তু এখন এ সমস্যাটা এমন তীব্রতা ধারণ করেছে যে, প্রযোজকরা বুঝতে শুরু করেছেন। বাণিজ্যিক ছবিতেও তারা এ ধরনের উপাদান ঢোকানোর চেষ্টা করছেন। সময়ের সঙ্গে দৃশ্যত সবকিছুই পাল্টে যায়।

আজকে আমি হুমায়ূন আহমেদের একটা গল্প নিয়ে সিনেমা করবো, স্যার যে ধরনের জিনিসগুলো লিখে গেছেন, সেগুলোই ফুটিয়ে তুলতে হবে। এখন আমাকে যদি একটা বাজেট বেঁধে দেওয়া হয় যে, ২০-৩০ লাখ টাকার মধ্যে সিনেমা করতে হবে, সেটা সম্ভব না।

বাংলানিউজ: হুমায়ূন আহমেদের প্রসঙ্গ যখন এলো, একটা প্রশ্ন করি। তার গল্প নিয়ে ছবি প্রযোজনা করার ইচ্ছে নিশ্চয়ই আছে?
ফেরদৌস:
হ্যাঁ, স্যারের অনেক গল্প আমার পছন্দ করা আছে। সেগুলোর মধ্য থেকে কোনটা নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে আছে তা এ মুহূর্তে বলতে চাই না। বলে দিলে অন্য কেউ নিয়ে নিতে পারে! এটা আপাতত প্রকাশ না করি।

বাংলানিউজ: প্রযোজক হয়েছেন, পরিচালনা করবেন কখনও?
ফেরদৌস:
আপাতত কোনো সম্ভাবনা নেই। কারণ আমার মনে হয়, বিনোদন অঙ্গনে কিংবা চলচ্চিত্রে পরিচালনা হলো সবচেয়ে কঠিন একটা কাজ। অতো কঠিন কাজ করার মতো শক্তি এখনও আমার হয়নি। যদি অদূর ভবিষ্যতে হয় তাহলে হয়তো পরিচালনায় আসতে পারি।

বাংলাদেশ সময়: ০০৫৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০২, ২০১৬
জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।