বিস্ময়ের ব্যাপার হলো— চলচ্চিত্র হিসেবে এমন আরও কিছু ছবি সেন্সরবোর্ড থেকে ছাড়পত্র পেয়েছে। তবে সব ছবির মুক্তির তথ্য মেলেনি।
মহরত, শুটিং, ডাবিং, ট্রেলার প্রকাশ ও মুক্তি— একটি চলচ্চিত্র ঘিরে ধাপে ধাপে সংবাদ প্রকাশের চল থাকলেও অনেক ছবিই থাকে অন্ধকারে। ছবিগুলো নিয়ে প্রথম সারির সংবাদ মাধ্যমের আগ্রহ কম থাকায় শুটিং বা মুক্তির খবর জানেন না দর্শক। হয়তো সংশ্লিষ্টরাও চান না প্রচারের আলোয় আসুক বা ব্যবসা করুক। এটা একটা রহস্য বটে। তবে তারা কেন সেন্সরবোর্ডের ছাড়পত্র চান?
চমকপ্রদ তথ্য হলো, উপরে দেওয়া ছবির তালিকাটা আরও দীর্ঘ। সব মিলিয়ে ২০১৬ সালে এমন অন্তত ২০টি ছবি সেন্সর ছাড়পত্র পায়। অধিকাংশ ছবির পরিচালক, প্রযোজক, অভিনেতা-অভিনেত্রী, কলাকুশলী অপরিচিত। তালিকায় এমন ‘চলচ্চিত্র’ও আছে যেগুলো নাটক বা টেলিছবি হিসেবেও দর্শক দেখেছেন।
২০১৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সেন্সর ছাড়পত্র পায় ‘দিওয়ানা মন’ ছবিটি। এর পরিচালক ও প্রযোজক নুরুল ইসলাম প্রিতম। প্রায় ৩ মিনিট দৃশ্য-সংলাপ কর্তন সাপেক্ষে এটি ছাড়পত্র পায়। সম্ভবত মে মাসে মুক্তিও পায়। অভিনয় করেছেন নবাগত রাফি সালমান ও নির্জনা। এ ছবিটি দেখেছেন ক’জন দর্শক?
৬ মার্চ বিনা কর্তনে ছাড়পত্র পায় ‘পাঠশালা’। পরিচালক আসিফুল ইসলাম ও ফয়সাল রদ্দি। প্রযোজনা করেছেন আসিফুল ইসলাম ও সৈয়দ গাউসুল আলম। এটিও প্রচারের আলোয় আসতে পারেনি। মুক্তির তথ্য পাওয়া যায়নি।
২ মার্চ ছাড়পত্র পায় ‘ছোটকাকু’। পরিচালক আফজাল হোসেন। প্রযোজক ইফতেখারুল চিশতী। অনেকেই জানেন না যে, এটি চলচ্চিত্র। সংবাদপত্রের তথ্য অনুযায়ী ‘ছোটকাকু’ একটি সিরিজ, নাটক হিসেবে চ্যানেল আইয়ে প্রচারিত। তবে দেশের বাইরের উৎসবেও শিশুতোষ ছবি হিসেবে ‘ছোটকাকু’র অংশগ্রহণের খবর পাওয়া যায়।
৫ এপ্রিল ছাড়পত্র পায় ‘ভালোবাসা ডটকম’। পরিচালক মো. আসলাম। প্রযোজক মো. মোক্তার-উজ-জামান। এ ছবি নিয়েও দর্শকের আগ্রহ নেই।
৫ এপ্রিল ছাড়পত্র পাওয়া ‘ভালোবাসাপুর’-এর পরিচালক এখলাস আবেদীন, প্রযোজক মজিবুর রহমান ও মোহাম্মদ আলী। ‘আবেগ’ ১৯ মে ছাড়পত্র পেলেও মুক্তির তারিখ জানা যায়নি। পরিচালক ও প্রযোজক ইমরানুল ইসলাম। ‘তুমি রবে নীরবে’র পরিচালক মাহবুবা ইসলাম সুমী, প্রযোজক মাজহারুল হক চৌধুরী। ২৮ আগস্ট ছাড়পত্র পেলেও মুক্তির খবর জানা যায়নি।
২৪ আগস্ট ছাড়পত্র পায় ‘বোবাকান্না’। পরিচালক হোসেন মোহাম্মদ। প্রযোজক মোহাম্মদ আলী ভূইয়া। ছবিটি কী মুক্তি পেয়েছে? ২২ আগস্ট ‘ড্রেসিং টেবিল’-এর ছাড়পত্র মেলে। এর পরিচালক আবু সাইয়ীদ, প্রযোজক ফরিদুর রেজা সাগর। ছবিটির শেষ খবর কী?
১১ আগস্ট ছাড়পত্র পায় ‘রাত বিরাতে সাতক্ষীরাতে’। পরিচালক আফজাল হোসেন। প্রযোজক সানাউল আরেফিন। এটিও ‘ছোটকাকু’ সিরিজের নাটক। ধারাবাহিক হিসেবে এটি ইতিমধ্যে চ্যানেল আইয়ের পর্দা বা ইউটিউবে দেখেছেন দর্শক।
এমনিভাবে ছাড়পত্র পাওয়া তথাকথিত আরও কিছু ছবি হলো— ‘মিলন সেতু’, (প্রযোজক মো. জাহাঙ্গীর আলমসহ তিনজন), ‘মন ছুঁয়েছি তোর’ (পরিচালক বড়ুয়া সুনন্দা কাঁকন, প্রযোজক বড়ুয়া মনোজিত ধীমন), ‘হৃদয় ছোঁয়া কথা’ (পরিচালক খোরশেদ আলম খসরু, প্রযোজক রিয়াজুল হক), ‘ভালোবাসা ১৬ আনা’ (পরিচালক মনির হোসেন মিঠু, প্রযোজক মাকসুদা আক্তার সাথী), ‘সত্যিকারের মানুষ’ (পরিচালক বদরুল আমিন, প্রযোজক কংকন বিশ্বাস) প্রভৃতি।
এসব বিষয় নিয়ে কথা হয় সেন্সরবোর্ডের সচিব মুন্সী জালালউদ্দিনের সঙ্গে। মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘একটি চলচ্চিত্র দর্শকের সামনে প্রদর্শণ যোগ্য হলে, তাতে বিরুপ উপাদান না থাকলে আমরা ছাড়পত্র দিতে পারি। এ ক্ষেত্রে সেটি আসলে নাটক বা দীর্ঘ ধারাবাহিক কি-না তা বলার দায়িত্ব নেই সেন্সরবোর্ডের। ’
চলচ্চিত্র সমালোচকদের মতে, এখন ছবি মুক্তির সংখ্যা আগের চেয়ে কমে গেছে। এ সময়ে দর্শকের সঙ্গে সংযোগ নেই এমন ছবি দিয়ে চলচ্চিত্র শিল্পের কোনো উন্নতি সম্ভব নয়। বরং এসব ছবির কারণে ভালো ছবির দর্শকরা প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। এ ব্যাপারে এখনই সচেতনতা দরকার।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০১৭
এসও