বাংলানিউজ: প্রথমেই জানতে চাই, ছবির প্রচারে কলকাতায় আসতে এতো দেরি করলেন কেনো? কলকাতার সঙ্গে তো আপনার সম্পর্ক বেশ পুরনো।
হৃতিক রোশন: কি করবো বলুন, পর পর প্যাকড শিডিউল! আসলে একদমই সময় পাচ্ছিলাম না।
বাংলানিউজ: শাহরুখ খানের ‘রইস’-এর সঙ্গে মুক্তি না পেলে কি ‘কাবিল’ আরও ভালো ব্যবসা করতে পারতো? আপনি তো শাহরুখকে অনুরোধও করেছিলেন মুক্তির দিন পিছিয়ে দেওয়ার জন্য।
হৃতিক রোশন: অবশ্যই। এ তো সহজ অঙ্ক। বক্স অফিসে একই দিনে দু’টি বড় ছবি মুক্তি পেলে দর্শক ভাগ হওয়ার একটা ব্যাপার থাকেই। শাহরুখও চেষ্টা করেছিলেন একই দিনে রিলিজ না করতে। বাবার (রাকেশ রোশন) সঙ্গে কথাও বলেছিলেন। কিন্তু সব তো আর প্রযোজকদের হাতে থাকে না। তবে ক্ষতি হয়েছে আমাদের দু’জনেরই। দর্শকদের কাছে পয়সাও একটা ফ্যাক্টর। নোট বাতিলের ফলে অনেকের হাতেই টাকার জোগান কমেছে। তাই কেউ হয়তো শুধু ‘রইস’ দেখেছে, কেউ ‘কাবিল’।
বাংলানিউজ: মুক্তির আগে ‘রইস’ ও ‘কাবিল’-এর টক্কর নিয়ে বহু কথা হচ্ছিলো। অনেকেই বলেছিলেন শাহরুখের সামনে হৃতিক দাঁড়াতেই পারবেন না। এখন তো পরিস্থিতি সম্পূর্ণ পাল্টে গেলো। কি বলবেন?
হৃতিক রোশন: আপনার কাছে কোন জিনিসটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা দেখতে হবে। কেউ আপনাকে দশ রুপি দিলেও আপনি খুশি হতে পারেন। সম্মান ও ভালোবাসা অর্জন করতে একজন মানুষের সারা জীবন অপেক্ষা করতে হতে পারে। এই ছবির মাধ্যমে মনে হয় আমরা সেটা করতে পেরেছি।
বাংলানিউজ: ছবিতে আপনার অভিনয়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ সবাই। কিন্তু রোহানের চরিত্রে অভিনয় করা কতোটা কঠিন ছিলো? কীভাবেই বা নিজেকে প্রস্তুত করলেন?
হৃতিক রোশন: চিত্রনাট্য পড়েই আমি বুঝতে পেরেছিলাম এটা কঠিন ছবি। ছবিটা করতে গিয়ে প্রথমদিকে একটু ভয় পেয়েছিলাম। অনেকটা সময় লেগেছে নিজেকে তৈরি করতে। আসলে আমরা, যারা দেখতে পাই তাদের ক্ষেত্রে দৃশ্যের একটা ছবি মস্তিষ্কে থেকে যায়। অথচ দৃষ্টিহীনদের পক্ষে জাগতিক জিনিস চাক্ষুষ করা সম্ভব নয়। অনুভূতিই ওদের একমাত্র সম্বল। সত্যি বলতে, চোখ বন্ধ করে শুধুমাত্র ঘ্রাণ বা স্পর্শকে সম্বল করে কারও অনুভূতি উপলব্ধি করাটা প্রায় অবিশ্বাস্য। এগুলোই আমাকে বারবার অভ্যাস করতে হয়েছে। চোখ বন্ধ করে নানা কাজ করার চেষ্টা করেছি। কোনও শব্দ পেলে আন্দাজ করে রিঅ্যাকশন দেওয়ার চেষ্টা করেছি। তবে এই চরিত্রটা অভিনয় করা একটা অসাধারণ অভিজ্ঞতা।
বাংলানিউজ: অসুবিধে হয়নি? চোখ তো অতি প্রয়োজনীয় ইন্দ্রিয়।
হৃতিক রোশন: সংলাপ বলার ক্ষেত্রে তো নতুনত্ব কিছু নেই। তবে অ্যাকশন বা নাচের দৃশ্যে অভিনয় করাটা বেশ শক্ত। এখন অবশ্য সবকিছু সহজ বলে মনে হচ্ছে।
বাংলানিউজ: আপনি ক্যারিয়ারে বেশ কয়েকবার শারীরিক প্রতিবন্ধীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন। সাধারণত এমনটা দেখা যায় না। এই ধরনের চরিত্র কী আপনাকে টানে?
হৃতিক রোশন: অভিনেতারা এ রকমই চরিত্রে কাজ করতে চান। অনেক সময় স্টার-সুপারস্টাররা এই ধরনের চরিত্র পাশ কেটে চলেন। আর আমি স্টার নই, অভিনেতার ইমেজেই মানুষের মনে বেঁচে থাকতে চাই।
বাংলানিউজ: দৃষ্টিহীনদের নিয়ে আগেও অনেক ছবি তৈরি হয়েছে। সেখানে বারবার একই ‘স্টেরিওটাইপ’ ঘুরে ফিরে এসেছে। কিন্তু এই ছবিটা কি দৃষ্টিহীনদের প্রতি সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পারবে বলে মনে হয়?
হৃতিক রোশন: আমি আশা করছি (হাসি)। এখনও পর্যন্ত অনেকটাই পজিটিভ ফিডব্যাক পেয়েছি। মানুষ রোহান ও তার স্ত্রী সুকে আপন করে নিয়েছেন। আমাদের দৃষ্টিহীন বন্ধুরা কীভাবে সমাজে জীবন-যাপন করেন তার উদাহরণ হয়ে উঠেছে এই দু’জন। রোহানের চরিত্রটি করতে গিয়ে একটা নতুন উপলব্ধি হয়েছে। দৃষ্টিহীন মানুষদের সম্পর্কে পড়াশোনা করতে গিয়ে দেখেছি, সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এদের অনেকেই অনেক কিছু কাজ করেন। সাধারণ মানুষের থেকে কোনও অংশে কম নয় তারা। তাই ঠিক করেছি, যে কোনও ধরনের প্রতিবন্ধকতাই হোক না কেন, এদের হয়ে এবার প্রচারে নামবো। আমার মনে হয়, সমাজে তাদের অবদান অামরা ভুলে যাই বলে আমরাই আসলে ‘অন্ধ’!
বাংলানিউজ: এই জীবনবোধ থেকেই কী চক্ষুদানের অঙ্গীকার করলেন?
হৃতিক রোশন: খবরটা জানেন দেখছি! না না। ১০ জানুয়ারি আমার জন্মদিনের দিন খুব চুপচাপ কাজটা করেছি। আমি বিশ্বাস করি মানুষ জন্মায় অন্যকে সাহায্য করতে। আমার চোখ যদি কারও দৃষ্টি ফিরিয়ে দিতে পারে তাহলে কেন নয়। আরেকটা খবর দিই, যেটা হয়তো অনেকেই জানেন না। ছবিটা করতে গিয়ে জানতে পারলাম, ইয়ামি গৌতম প্রায় দশ বছর আগে চক্ষুদান করেছেন! আর দেখুন এই ছবিতে আমরা দু’জনেই দৃষ্টিহীন। কো-ইনসিডেন্স...
বাংলানিউজ: আমাদের সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
হৃতিক রোশন: ভালো থাকবেন সবাই।
বাংলাদেশ সময়: ১২০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৭
ভিএস/বিএসকে