সার্বিক পরিস্থিতিতে বলা যায় আঁতুরঘরে থেকেই সাধারণের মনে আগ্রহ তৈরি করেছে ‘ডুব’। তা এই তর্ক -বিতর্ককে ঘিরেই।
আর সবশেষ প্রিভিউ কমিটি ছবিটি দেখে স্থগিতাদেশ দেওয়ায় কৌতুহল আরও বেড়েছে। সবার একটাই প্রশ্ন, কী আছে এই ‘ডুব’ ছবিতে?
ছবি বানানোর ঘোষণার পর থেকেই ‘ডুব’ বিদেশি গণমাধ্যমেও গুরুত্ব পাচ্ছে। বিদেশি মিডিয়ার আগ্রহ হয়তো এই কারণেই যে তাতে বলিউডের তারকা ইরফান খান রয়েছেন প্রধান ভূমিকায়।
দেশের মিডিয়াগুলোকে একটু এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা শুরু থেকেই ছিলো। তাতে ‘ডুব’ নিয়ে বিদেশি মিডিয়ার ওপরই ভরসা করতে হয়েছে বার বার। খবরগুলো এসেছেও একাধিক বিদেশি সংবাদমাধ্যমের বরাতে। সবশেষ যে স্থগিতাদেশ, তার খবরও কিন্তু প্রথম প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পত্রিকা ‘ভ্যারাইটি’।
ঢাকায় জমকালো মহরত অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার সুযোগ পান বাংলাদেশের সিনে মিডিয়ার সাংবাদিকরা। কিন্তু ‘ডুব’-এর শুটিংস্পটে যাওয়া তাদের ভাগ্যে জোটেনি।
সে অন্য কথা। এসব কাণ্ডেই সাংবাদিকদের মনেও কৌতুহল ছিলো ‘ডুব’ নিয়ে। কি হচ্ছে এই ছবিতে?
অবশেষে খবর এলো আনন্দবাজার পত্রিকায়। তাতে বলা হলো- প্রয়াত কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের জীবনের ছায়া অবলম্বনে তৈরি হয়েছে ‘ডুব’।
দেশীয় মিডিয়াগুলো সে খবরের বরাত দিয়েই খবরটি প্রচার করতে থাকে।
আর সে খবরে তোলপাড় শুরু হলে তর্ক -বিতর্ক গতি পায়।
ছবিটির নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী এবার কথা বললেন দেশি মিডিয়াগুলোর সাথে। আর তাতে আনন্দবাজারে প্রকাশিত তথ্যের বিষয়টি অস্বীকার করলেন তিনি।
দেশে বেশকিছু মৌলিক ভিন্নমাত্রার ছবি বানিয়ে জনপ্রিয় এই নির্মাতার বক্তব্য- এটিও তার সম্পূর্ণ মৌলিক গল্পভিত্তিক চলচ্চিত্র, কোনো জীবনীগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়নি।
এদিকে ছবিটির এক শিল্পী গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ছবিটিতে হুমায়ুন আহমেদের জীবনের কিছু অংশ রয়েছে।
এ অবস্থায় প্রতিবাদী হয়ে ওঠেন প্রয়াত হুমায়ূন আহমেদের দ্বিতীয় স্ত্রী ও অভিনেত্রী মেহের অাফরোজ শাওন। একাধিক মিডিয়াতে তিনে এ নিয়ে কথা বলেন, ফেসবুকে প্রতিবাদী স্ট্যাটাস দেন। আর সবশেষ তিনি সেন্সরবোর্ডকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি অবহিত করেন। ধারনা করা হচ্ছে শাওনের ওই চিঠির কারণেই আটকে দেওয়া হয়েছে ‘ডুব’ এর যাত্রা।
বিষয়টিতে বিচলিত ও বিব্রত হয়েছেন এর নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। বাংলানিউজকে টেলিফোনে তিনি জানিয়েছেন, ছবিটি কোনওভাবেই প্রয়াত হুমায়ূন আহমেদের জীবনের গল্প নিয়ে নয়।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘ডুব’ ছবির মুক্তির পরই বলা সম্ভব হবে যে, এটি হুমায়ুন আহমেদের জীবন থেকে নেওয়া হয়েছে কি-না। এর বিচার দর্শ কের ওপর ছেড়ে দিতে প্রস্তুত এই নির্মাতা।
কিন্তু গুঞ্জন তো থেমে থাকে না। প্রিভিউ কমিটির সদস্যের বরাত দিয়ে চলচ্চিত্র পাড়ায় বলাবলি হচ্ছে যে, ‘ডুব’ ছবিতে ‘কৌশলী’ উপায়ে হুমায়ুন আহমেদের জীবনের ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে। কারোরই বুঝতে অসুবিধা হবে না যে, চরিত্রগুলো দেশের একজন বড় লেখক ও তার পরিবারের, যে পরিবারের সদস্যরা পাঠকদের কাছে বেশ চেনা ও জনপ্রিয়।
এ প্রসঙ্গে বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপে ফারুকী বলেন, মেয়ের বান্ধবীর সঙ্গে প্রেম এই ছবিটির উপজীব্য কিন্তু এমন ঘটনা সমাজে- দেশে- পৃথিবীতে অনেকই ঘটে। গল্পের গড়ন ও আঙ্গিক সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাই এই গল্পকে কেউ ব্যক্তিগতভাবে নেওয়া ঠিক হবে না।
একটি চলচ্চিত্র কিংবা যে কোনও শিল্পকর্মে সাধারণের জীবনের ছাপ থাকে। ফলে তা অনেকের জীবনের গল্পের সঙ্গেই মিলে যায়। সেটাই গল্পকারের কিংবা চলচ্চিত্রকারের সাফল্য। সেন্সর বোর্ড এমন একটি গল্পকে ঠুনকো যুক্তিতে আটকে দিতে পারেনা, বলেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
এর আগেও ফারুকী এই প্রসঙ্গে আলাপচারিতায় বাংলানিউজকে বলেছিলেন, সাধারণত তার ছবিতে ভালো বা মন্দ চরিত্র বলে কিছু থাকে না। তার চরিত্রগুলো পরিস্থিতির শিকার। এখনই যে মানুষটিকে খারাপ মনে হবে, একটু পরের দৃশ্যেই দর্শক তাকে ভালো বলবেন। ‘ডুব’-এর বেলায়ও তেমনটিই ঘটেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৭
এসও /এমএমকে