বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে নগরীর আগ্রাবাদ হোটেলের ক্রিস্টাল বলরুমে মতবিনিময় সভার মাধ্যমে তিনি এ ঘোষণা দেন। যেই ছবিতে তিনি নিজেই নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করবেন।
ফেরদৌস আহমেদ বলেন, অনেকদিন ধরে ইচ্ছে ছিল ঢাকার বাইরে বা বাংলাদেশ ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির বাইরে দেশের অন্যান্য শহরে থেকে একটা সিনেমা হোক। এজন্য সবচেয়ে উপযুক্ত মনে হয়েছে এ বৃহত্তর চট্টগ্রামকে। আমার জীবনের প্রথম সিনেমা ‘বুকের ভিতর আগুন’ এর আউটডোর শুটিং হয়েছিল বান্দরবানে। এরপর থেকে এ পর্যন্ত কমপক্ষে একশবার এসেছি চট্টগ্রাম, বান্দরবান, রাঙামাটি, কাপ্তাই, কক্সবাজারের বিভিন্ন লোকেশনে। এখানে এসে আমার প্রত্যেকবার মনে হয়েছে, এখান থেকে কেন আমরা টেকনিক্যাল সাপোর্ট পাই না। প্রতিবারই দেখা গেছে ট্রেনে, বাসে করে ক্রেইনসহ সমস্ত ইক্যুইপম্যান্ট নিয়ে আসা হতো। এমনও হয়েছে যে একটি ইক্যুইপম্যান্ট কাজ করছে না। এজন্য আমাদের একশ জনের পুরো ইউনিটকে বসে থাকতে হয়েছে কক্সবাজারে। সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়ে আর ভাবতাম কবে আসবে সেই সুদিন।
হঠাৎ করে ‘হঠাৎ বৃষ্টির মত’ রায়হান এসে হাজির হলো। রায়হান অন্য একটি কাজে এসেছিল। আমার কাছে শিমুল ভাই তাকে নিয়ে এসেছিল। এ শিমুল ভাই আমাকে চট্টগ্রামের সাথে একটি বন্ধন তৈরি করে দিয়েছেন। মৌসুমী, শাবনুর সহ আমরা সবাই চট্টগ্রামে অনেক কাজ করেছি।
এসময় কথা প্রসঙ্গে আমিই রায়হানকে বলেছি চট্টগ্রামে একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা করলে কেমন হয়? যেহেতু তোমার প্রোডাকশন হাউজ বা চ্যানেল আছে। সে লক্ষ্যে প্রোডাকশন হাউজ চ্যানেল আরএ কাজ করছে। আমি জানতাম না ভাবনাটা এতো দ্রুত সংক্রমিত হবে। আমি ছবি নির্মাণের বীজবপন করে দিয়েছিলাম। এরপর থেকেই তা অতিবাহিত হতে শুরু করেছে।
এই প্রথম কোন সিনেমার জন্য সংবাদ সম্মেলন বা মতবিনিময় করার কথা জানিয়ে চিত্রনায়ক ফেরদৌস বলেন, আমরা ভাল একটা কাজে হাত দিয়েছি বা করতে যাচ্ছি। চট্টগ্রামের ঐতিহ্য, কৃষ্টি, সভ্যতা ও দর্শনীয় স্থানকে প্রাধান্য দিয়েই চলচ্চিত্রের জন্য ৩টি গল্প বাছাই করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে যে গল্পটি নির্বাচন করা হয়েছে তার নাম রাখা হয়েছে ‘চট্টলা এক্সপ্রেস’। যেখানে নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করবো আমি নিজেই। যার সম্পূর্ণ শ্যুটিং হবে বৃহত্তর চট্টগ্রামের মনোরম সব লোকেশনে। আর এই ছবিতে নায়িকাসহ অন্যান্য চরিত্রে চট্টগ্রামের ট্যালেন্টেড লোকজন অভিনয় করবেন এবং সিনেমার সাথে সম্পৃক্ত থাকবেন।
প্রশ্ন আসতে পারে নায়ক কেন বাইরের থাকবে? এর কারণ হিসেবে আমি বলবো নায়ক চট্টগ্রামকে অনেক ভালবাসে তাই। আমি মনেপ্রাণে মনে করি, আমি চট্টগ্রামেরই একজন। আমি বলেছিলাম, আমাকে নিতেই হবে এমন কোন কথা নেই, কিন্তু আমি খুশি হবো যদি আমাকে নেওয়া হয়। প্রাথমিকভাবে আমাকে সিলেক্ট করেছে তার জন্য আমি প্রোডাকশন হাউজ চ্যানেল আরএ’র কাছে কৃতজ্ঞ।
তিনি আরও জানান, ছবি নির্মাণের কাজে আমরা কিছুটা এগিয়েছি। প্রাথমিকভাবে আমরা যে চিত্রনাট্যটি পছন্দ করেছি, সেটির নাম দিয়েছি ‘চট্টলা এক্সপ্রেস’। এটি একটি অ্যাডভেঞ্চার টাইপের গল্প। একটি জার্নির মাধ্যমে আমরা চট্টগ্রামের আশপাশের সববিষয়গুলো তুলে ধরবো। সেভাবে কাজ চলছে। যেকোন সময় আমরা অ্যানাউন্সম্যান্টে যাবো। মিউজিক ডিরেক্টর হিসেবে ইমন সাহার কথা ভাবছি। সে যেহেতু চট্টগ্রামের। এছাড়াও আমাদের ইচ্ছে সিনেমার প্রধান নায়িকাসহ অন্যান্য চরিত্রে অভিনয়ের জন্য ট্যালেন্ট হান্ট অডিশনের মাধ্যমে নিব।
আমি অনেক কাজে চট্টগ্রামে এসেছি। এখানে এসে যে বিষয়টি চোখে পড়েছে সেটি হলো-চট্টগ্রামের ছেলেমেয়েরা অনেক আগ্রহ নিয়ে কাজ শুরু করে। কিন্তু কোন একটি কারণে কিছুদিন কাজ করে তারপর পিছিয়ে পড়ে। তা কেন হয় বুঝতে পারি না। প্রথমে কোন উৎসাহ নিয়ে কাজ করে কিন্তু পরবর্তীতে তারা চলে যায়। অথচ চট্টগ্রামে অনেক স্বনামধন্য অভিনেতা-অভিনেত্রী দেখেছি। যদিও তা কমে যাচ্ছে। সেই ঘাটতিটা পূরণ করতেই আমরা এ কাজে নেমেছি।
তিনি আরও জানান, সারাদেশে সিনেমা হলের সংখ্যা ভীষণভাবে কমে গেছে। আমি প্রথম চলচ্চিত্রে জয়েন করি ১৯৯৮ সালে। তখন চট্টগ্রামে অনেক সিনেমা হল ছিল। ঈদের সময় চট্টগ্রামের সিনেমা হলগুলো থেকে বড় অংকের একটি আর্থিক সার্পোট পাওয়া যেতো। অথচ এখন দু’য়েকটি সিনেমা হল ছাড়া তেমন নেই বললেই চলে। তাই বিনোদনের প্রাণকেন্দ্র সিনেমা হল বা সিনে কমপ্লেক্স নির্মাণে চট্টগ্রাম তথা দেশের সকল ব্যবসায়ীদের এগিয়ে আসারও আহবান জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম মহাসচিব ও অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম এর চট্টগ্রাম ব্যুরো এডিটর তপন চক্রবর্তী বলেন, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের মহানায়ক মাস্টারদা সূর্যসেন। যেহেতু চট্টগ্রামকে নিয়ে এ সিনেমা নির্মিত হচ্ছে, তাই এতে মাস্টারদা সূর্যসেনের আন্দোলনের বিষয়টি যদি নিয়ে আসা যায়, তাহলে ছবিটি আরও প্রসিদ্ধি লাভ করবে বলে মনে করি।
চ্যানেল আরএ’র চেয়ারম্যান শেখ খুরশীদ আনোয়ার জানান, সময়ের পরিবর্তনে সবকিছুই পরিবর্তনশীল। একসময় অনেকের ধারণা ছিল নাটক, বিজ্ঞাপন, টেলিফিল্ম, শর্টফিল্ম, ডকুমেন্টরি ও মিউজিক ভিডিও মেকিংসহ নানা কিছুর জন্য ঢাকাই একমাত্র ভরসা। কিন্তু বাস্তবতা এখন একেবারেই ভিন্ন। প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের চট্টগ্রামও এখন সমৃদ্ধ হওয়ার দ্বারপ্রান্তে। সে লক্ষ্যে কাজ করছে চ্যানেল আরএ। প্রথমবারের মত চট্টগ্রামের বিভিন্ন মনোরম জায়গায় শুটিংয়ের মাধ্যমে চট্টলা এক্সপ্রেস নামে একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণের উদ্যোগ হাতে নেওয়া হয়েছে। এ ছবিতে নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করবেন ফেরদৌস আহমেদ। মূলত চট্টগ্রামকে রিপ্রেজেন্ট করতে এ চলচ্চিত্র নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সভায় উপস্থিত কর্পোরেট হাউজের বিশিষ্টজন ও সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের উত্তরে নায়ক ফেরদৌস বলেন, পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে বিনোদন শিল্পের প্রাণ সিনেমাকে ধরে রাখতে হবে। এক্ষেত্রে মননশীল ও সৃষ্টিশীল ব্যক্তিবর্গের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের এগিয়ে আসা উচিত বলে তিনি মনে করেন।
মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন চ্যানেল আরএ’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ রায়হান আনোয়ার, চলচ্চিত্রের গল্পকার ও চিত্রনাট্য পরিচালক রফিকুল আনোয়ার রাসেল, ফ্যাশন ডিজাইনার শিমুল খালেদ, চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহ, প্রাইম ডিস্টিবিউশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেদুল আলম মামুন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, নিয়াজ মোর্শেদ, করপোরেট ব্যাক্তিত্ব তানভীর শাহরিয়ার রিমন, জিটিভির ব্যুরো প্রধান অনিন্দ টিটো প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৭
এসবি/আইএসএ/টিসি