জানা যায়, ঢাকা, কুমিল্লা ও নিউইয়র্কে থাকছে বিভিন্ন আয়োজন। এ উপলক্ষে ঢাকায় বিশেষ স্মরণসভা করবে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, বাংলাদেশ গণসংগীতশিল্পী সমন্বয় পরিষদ ও ক্রান্তি শিল্পী গোষ্ঠী।
২২ মার্চ বুধবার সন্ধা ৭টায় নিউইয়র্কয়ের জ্যাকসন হাইটসের মেজবান মিলনায়তনে বিশেষ স্মরণ সভায় থাকবে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট এবং সাউথ এশিয়ান মিউজিক সোসাইটি।
দুরারোগ্য ব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে এই মহান মুক্তিযোদ্ধা ও গণসংগীত শিল্পী ২০১২ সালের ২৩ মার্চ ঢাকায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মাতৃভূমির প্রতি তার গভীর ভালোবাসার টানেই একদিন হাতে তুলে নিয়েছিলেন অস্ত্র। স্বাধীনতার পর সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন ও পাশাপাশি সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে যান। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্নাতক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর প্রথম পর্ব শেষ করার পর তিনি আর পড়াশোনা করেননি ।
ছোটবেলা থেকেই সংগীতের প্রতি প্রবল আকর্ষণ ছিলো তার। চট্টগ্রাম সংগীত পরিষদের একজন শিক্ষার্থী হিসেবেই শুরু করেছিলেন আনুষ্ঠানিক চর্চা। কিন্তু পরবর্তীতে পরিবেশ ও পরিস্থিতির কারণে তাকে এক পর্যায়ে প্রাতিষ্ঠানিক সংগীত শিক্ষার বিপরীতে প্রতিবাদী সংস্কৃতি চর্চায় মনযোগী করে তোলে। ১৯৭৪ সালে চট্টগ্রামে সম্মিলিত ২১শে উদযাপন কমিটি গঠিত হলে তিনি ক্রান্তি শিল্পী গোষ্ঠী পুনরায় সংগঠিত করার মাধ্যমে সেখানে বেশ ক’ বছর অত্যন্ত মুখ্য ভুমিকা পালন করেন। নানান প্রতিবন্ধকতার ভেতর দিয়েও মোহন এই সমস্ত কর্মকাণ্ড পরিচালনায় অভ্যস্ত হয়ে পড়েন।
১৯৮৩ সাল থেকে মাহবুবুল হায়দার মোহন ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। সময়ের ডাকে সাড়া দিয়ে এই সময় তিনি প্রায় নিস্ক্রিয় ক্রান্তি শিল্পী গোষ্ঠীকে সচল করার কাজে হাত দেন। ১৯৮৪ সালের ডিসেম্বর এ বিখ্যাত সাংস্কৃতিক বাক্তিত্ব কাজি বাহাউদ্দিন আহমেদকে আহবায়ক করে সেগুন বাগিচার একটি বাড়িতে ক্রান্তি পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু করেন। ৬০ সালে ক্রান্তির অন্যতম মূল প্রতিষ্ঠাতা কামাল লোহানী, আমানুল হক ও অন্যান্যদেরকেও এই প্রক্রিয়ার সাথে সম্পৃক্ত করেন। নবগঠিত ক্রান্তি ৮৫ সালে প্রভাত ফেরীর মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে। এরপর থেকে ক্রান্তির যে অগ্রযাত্রা তা অব্যাহত রয়েছে। গেলো বছর তার মৃত্যুবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে শ্রদ্ধেয় শিল্পী মলয় কুমার গাঙ্গুলিকে ‘মাহবুবুল হায়দার মোহন পদক’ প্রদান করা হয়।
দেশ বরেণ্য কবি মাহবুবুল আলম চৌধুরী আমৃত্যু ক্রান্তির সভাপতি থেকে এই সংগঠনকে মহিমান্বিত করেন। তার আগে সাইয়িদ মোয়াজ্জেম হোসেনও কিছুকাল ক্রান্তির সভাপতি ছিলেন। মাহবুবুল আলম চৌধুরীর প্রয়ানের পর মাহবুবুল হায়দার মোহনও আমৃত্যু ক্রান্তির সভাপতি ছিলেন।
মোহনের জন্ম কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে। তার পিতা মরহুম আমিন উল্লাহ মজুমদার ব্রিটিশ রেলওয়ের একজন কর্মকর্তা ছিলেন। বাবার চকরির কারণে তার শৈশব কাটে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।
জীবদ্দশায় মোহন গান-বাজনা ও সংগঠন করেই বেশির ভাগ সময় অতিবাহিত করেছেন। তিনি নিজের একক অ্যালবাম প্রকাশ করার দিকে কোনোদিন নজর দেননি। তার প্রকাশিত অ্যালবার মধ্যে হলো জাগরণের গান ‘আমার ভালোবাসার স্বদেশ’, গণসংগীত ‘লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে’ প্রভৃতি। মোহনের কণ্ঠে রেকর্ডকৃত কিছু দেশের গান বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল প্রায়ই দেখা যায়।
মোহনের চিকিৎসার ব্যাপারে আসাদুজ্জামান নূর, নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, গোলাম কুদ্দুস, হাসান আরিফসহ সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও ক্রান্তির প্রতিটি কর্মী আপ্রান চেষ্টা করেছেন। মুক্তিযোদ্ধা মোহনের চিকিৎসা সাহায্যার্থে নিউইয়র্কে সাউথ এশিয়ান মিউজিক সোসাইটি বিশেষ বেনেফিট কনসার্টের আয়োজন করে। নিউইয়র্ক বসবাসরত স্বাধীন বাংলা বেতারের কণ্ঠযোদ্ধা শহীদ হাসানের লেখা ও সুরে ‘লক্ষ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে’ গানটি মাহবুবুল হায়দার মোহনের কণ্ঠে ব্যাপক সমাদৃত হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩০ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০১৭
এসও