এ উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মাঠে সন্ধ্যায় আয়োজন করা হয়েছে ‘জয়ন্তী মঞ্চকুসুম শিমুল’ শিরোনামের অনুষ্ঠান। ২১ ও ২২ মার্চ দু’দিন এ অনুষ্ঠান চলবে।
জন্মদিনের শুভেচ্ছায় ভাসছেন শিমূল ইউসুফ। ভক্ত ও নাটকপ্রিয় মানুষেরা তার দীর্ঘায়ু কামনা করে অন্তর্জালে লেখা ও ছবি শেয়ার করছেন। তাকে নিয়ে কবিতা লিখে ফেসবুকে পোস্ট করেছেন জীবনসঙ্গী ও নাট্যজন নাসিরউদ্দিন ইউসুফ।
কবিতাটি হলো—
‘সংগীত ও অভিনয়ের দ্বৈত নিখিলে
তোমার কায়া ও ছায়ার যুগল মন্থনে
যে অদ্বৈত দৃশ্যকাব্য সৃষ্ট হয় নিরন্তর
সেতো বাঙলার শিল্পালোকে ধ্রুবতারা।
অর্ধশতাব্দী অতিক্রম করেছে তোমার
শিল্পরথ। বিরামহীন মঞ্চভূমি কর্ষনে
শিল্পের অজানা ভুবন হতে বিজয় ফুলে
নিত্যই পূর্ণ করছো আমাদেরই জীবন।
বাঙালির অভিনয় রীতির নব্যকালের
স্রষ্টা তুমি নিমগ্ন আপন শিল্প সাধনায়।
কালতো পরাভব মানে শিল্পের অমিত
তেজের কাছে। মানুষের সীমায়িত জীবন
শিল্পের হাত ধরে মহাকালে ঠাঁই করে নেয়
শিল্পের আকাশে প্রজ্জোলিত নক্ষত্ররূপে।
জীবনের ষাটটি বসন্ত পার করে
অনন্তের পানে ধাবমান হে শিল্প মানবী
'সম্মুখে অনন্ত মুক্তির অনিমেষ ছায়াপথ'
সে পথেই তোমার শিল্পরথ ছুটুক নিরন্তর। ’
শিমূল ইউসুফ ১৯৫৭ সালের এইদিনে ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পাঁচ বছর বয়সে গান শেখা শুরু করেন। ওস্তাদ হেলাল উদ্দিন, পিসি গোমেজ, আলতাফ মাহমুদ ও আব্দুল লতিফের কাছ থেকে শাস্ত্রীয় ও বাংলাদেশের ঐতিহ্যগত গানের উপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ১৯৬৪ সালে তৎকালীন পাকিস্তান টেলিভিশনের সম্প্রচারের প্রথমদিন শিশুশিল্পী হিসাবে সংগীত পরিবেশন করেন।
১৯৭৪ সালে শিমুল ইউসুফ ঢাকা থিয়েটারে যোগ দেন এবং এ পর্যন্ত ঢাকা থিয়েটারের ৩৪টি নাটকে অভিনয়শিল্পী, সংগীত পরিচালক, কোরিওগ্রাফার ও পোশাক পরিকল্পনা, সহযোগী নির্দেশক এবং পাণ্ডুলিপি সম্পাদনার কাজ করেছেন। ১৯৮১ সালে গ্রাম থিয়েটার আন্দোলনকে সংগঠিত করতে তিনি বিশেষ অবদান রাখেন। দীর্ঘ পাঁচ দশকের জীবনে শিমূল ইউসুফ দুই সহস্রাধিক নজরুল সংগীত, গণসংগীত-রেডিও, টেলিভিশন ও মঞ্চে পরিবেশন করেন এবং মঞ্চের ৩৩টি নাটকের ষোল শতাধিক মঞ্চায়নে সফল অভিনয় করেন। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য নাটক— ‘মুনতাসীর ফ্যান্টাসি’, ‘কসাই’, ‘চর কাঁকড়া’, ‘শকুন্তলা’, ‘ফণীমনসা’, ‘কিত্তনখোলা’, ‘কেরামতমঙ্গল’, ‘হাতহদাই’, ‘চাকা’, ‘একাত্তরের পালা’, ‘যৈবতীকন্যার মন’, ‘মার্চেন্ট অব ভেনিস’, ‘বনপাংশুল’, ‘প্রাচ্য’, ‘বিনোদিনী’ প্রভৃতি। টেলিভিশন নাটকের মধ্যে রয়েছে ‘ঘরোয়া’, ‘পোস্টমাস্টার’, ‘গ্রন্থিকগণ কহে’ ও ‘নির্বাসন’।
শিমূল ইউসুফ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য— ১৯৬৫ সালে পাকিস্কানের শিশুশিল্পী হিসেবে প্রেসিডেন্ট পদক, লোকনাট্যদল পদক, বাচসাস পদক, মোহাম্মদ জাকারিয়া পদক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থিয়েটার পদক ও কালচারাল রিপোর্টার্স ইউনিটি পদক। বাঙলা অভিনয়রীতি বিকাশে এবং শুদ্ধ সংগীতচর্চায় অবদানের জন্য কবি বেগম সুফিয়া কামাল ও নাট্যাচার্য সেলিম আল দীনকর্তৃক তিনি ‘মঞ্চকুসুম’ উপাধিতে ভূষিত হন। গুণী এই শিল্পীর ভক্তরা মনে করেন, শহীদ পরিবারের এই সন্তানকে (শহীদ আলতাফ মাহমুদের বোন শিমূল ইউসুফ) রাষ্ট্রীয় পদক দিয়ে সম্মানিত করার এখনই সময়।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪২ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০১৭
এসও