নরসিংদী জেলার রায়পুরা থানার উত্তর মির্জানগর গ্রামে জন্মেছিলেন হুমায়ুন। জন্মস্থানে নিজের নামে আখড়া বাড়ি প্রতীষ্ঠা করেছিলেন।
হুমায়ুন সাধুর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ চলছে সামাজিক যোগাযোগ রক্ষার মাধ্যম ফেসবুকে। তাকে নিয়ে স্মৃতিকথা লিখছেন ভক্তরা।
হুমায়ুন সাধুকে নিয়ে কবি কাজল শাহনেওয়াজ লিখেছেন, “১৯৯৮ সালে আমার লালমাটিয়ার দু’রুমের ছোট্ট বাসায় একদল লালন সাধুকে সবিনয় আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। ভাড়া বাসায় রবীন্দ্রনাথের কুঠি বাড়ির স্পেস ছিলো না, কিন্তু সাধুরা খুব আন্তরিক ভাবেই আসলেন। সেখানে আকলিমা ছিলেন, রবিউল ছিলেন, টুনটুন বাউল ছিলেন, ছিলেন হুমায়ুন সাধু! হুমাযুন ভাইয়ের তখন কালো পর্ব! কালো লম্বা দেহে কালো কাপড়, কালো দাড়ি, কালো কুচকুচে চুল। এভারেজ বাউলদের থেকে দীর্ঘদেহি, সাপের মতো তীক্ষ্ণ চোখ, শক্ত! শুধু হাসিটা প্রাকৃতিক। বললেন, ‘আমরা তো মাছ মাংশ খাইনা। তবে ডিম চলতে পারে!’
লালন অনুসারিদের মধ্যে হুমায়ুন সাধুকে দেখেছি অন্য রকম! সারাজীবন উনি থাকলেন নিঃসঙ্গ ও পুরুষ, যেখানে এই পথটাই হল যুগল সাধনার!
হুমায়ুন সাধু গভীর দৃষ্টিতে দেখতেন। কি দেখতেন তা নিশ্চয়ই কেউ কেউ জানেন। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে উনি অনেক মানুষের জন্য একটা বার্তা দিতেন। অনেকের নানা রকম আরবান সাইকোসিস সম্পর্কেও উনি জানতেন। তাদের জন্য কিছু প্রাচীন সংসর্গ দিতেন।
শুনেছি, যৌবনে উনি সীমান্ত সেনা হয়ে কাজ করেছিলেন। তখন রাতের পর রাত জেগে থাকতেন। অন্যদের হয়ে তাদের ডিউটি করে দিতেন। তার একটা শক্ত কিন্তু খুবই নরম হৃদয় ছিলো। অনেকটা কবি কাজী নজরুলের মতো। ”
কাজল আরও লিখেছেন, ‘নরসিংদির কাছে খানাবাড়ি রেল স্টেশনের অনতিদূরে তার একটা ধাম আছে। ঢাকা থেকে স্থপতিরা তা ডিজাইন করেছিলেন। সেখানে গেলে দেখি, হুমায়ুন ভাই কেবল হাসেন। তার সেই ভূবন ভুলানো রহস্যময় শরীরে চমক দেয়া হাসি!
হুমায়ুন সাধু আজ (২৬ মার্চ) বিকালে পর্দার আঁড়ালে চলে গেছেন! শুধু মনে জাগছে, উনি যখন আমাদের মতো কৌতুহলী মানুষের সামনে তার দীর্ঘ দমের সেই বিখ্যাত কারিশমাটা দেখাতেন, তখন আসলে কি বলতেন?
হুমায়ুন ভাই, হে চিরতরুন! আপনাকে খুব মনে হচ্ছে! আপনি সাধন সঙ্গীনি ছাড়াই কেমন লালন সাধনা করে গেলেন!”
* গাইছেন হুমায়ুন সাধু:
বাংলাদেশ সময়: ২০০৭ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০১৭
এসও