ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিনোদন

তবে কি আর নতুন কোনো গান পাবো না?

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১১ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০১৮
তবে কি আর নতুন কোনো গান পাবো না? প্রয়াত কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী আইয়ুব বাচ্চু, ফাইল ফটো

ঢাকা: প্রতিদিনই পাড়ার ছেলেরা রুপালি গিটারের শিল্পী আইয়ুব বাচ্চুর প্রতিষ্ঠিত এবি কিচেনে আসত গিটার আর গান শিখতে। বাচ্চু সবাইকে আদর করে বলতেন ভালো করে শিখবে, আমার সঙ্গে কাজ করতে হবে। তাদের অনেকেই ব্যান্ড সংগীতের এই কিংবদন্তির সঙ্গে কাজও করার সুযোগ পেয়েছেন।

তাদের মধ্যে শুক্রবার (১৯ অক্টোবর) সকালেও গিটার হাতে এবি কিচেনের সামনে এসেছেন আমিদ হোসেন চৌধুরী, আসিফ আল মাজির। গান শোনাবেন আর গিটার বাজাবেন বলে।

কিন্তু মগবাজার কাজী অফিসের ১১ নম্বর বাড়িটি আজ শোকে নিবর। এ বিল্ডিংয়ের নিচ তলায়ই এবি কিচেন। একটা শোকাবহ পরিবেশ বিরাজ করছে পুরো পাড়াজুড়ে।

পাড়ার ছেলেরা এসেছেন তবে নেই তাদের শিক্ষাগুরু নন্দিত শিল্পী আইয়ুব বাচ্চু। তিনি যে বৃহস্পতিবার (১৮ অক্টোবর) লাখো ভক্তকে কাঁদিয়ে চলে গেছেন না ফেরার দেশে।

বাংলানিউজকে সাইফ আহমেদ চৌধুরী বলেন, আমার বিশ্বাস হচ্ছে না চাচ্চু (আইয়ুব বাচ্চু) আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। তিনি আমাদের গিটার বাজানো শেখাতেন। গান গাইতেন, গাওয়ার সুযোগ দিতেন। এখন কে গান শোনাবেন। আমরা কি আর নতুন গান পাবো না?

তিনি বলেন, আমরা এক বার কয়েকজন মিলে টাকার বিনিময়ে একটা ভিন্ন জায়গাতে গিটার বাজানো শিখতে গিয়েছিলাম। এটা শুনে চাচ্চু পাড়ার ছেলেদের ডেকে বলেছিলেন, তোমরা আমার কাছে শিখবে। ভালো করলে আমার সঙ্গে রাখবো। তিনি আমাদের খাওয়াতেন, আদর করতেন। আজ এসব বঞ্চিত হলাম আমরা। এবি কিচেনের পাশে মর্মাহত অবস্থায় পাড়ার একটি ছেলে, ছবি: বাংলানিউজউইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র আসিফ আল মাজির। ওই এলাকার ১১১ নম্বর বিল্ডিংয়ের তৃতীয় তলায় পরিবারের সঙ্গে থাকে সে। বাংলানিউজকে সে বলে, আমি যখনই এসেছি, চাচ্চু আমাকে গিটার দিয়ে বলতেন, আমাকে বাজিয়ে শোনাও। আমি বাজাতাম, না পারলে তিনি শেখাতেন। আইয়ুব বাচ্চুর বিল্ডিংয়ের নিরাপত্তারক্ষী আবদুল মন্নান, ছবি: বাংলানিউজআইয়ুব বাচ্চুর স্টুডিও এবি কিচেনের ঠিক বিপরীত পাশের ১১৬ নম্বর লিভিং স্টোনের ৯ তলার ‘এফ’ ফ্ল্যাটের মালিক ছিলেন আইয়ুব বাচ্চু। এ বিল্ডিংয়ের নিরাপত্তারক্ষী আবদুল মন্নান বাংলানিউজকে বলেন, ‘স্যার যখনই আসতেন, খোঁজ নিতেন খেয়েছি কি-না। স্যারের প্রথম কথাই ছিল, কেমন আছো? খেয়েছো?’

তিনি বলেন, ‘খুবই ভালো ছিলেন স্যার। মাঝে মাঝে আমাকে বস বলে ডাকতেন, বলতেন কি অবস্থা বস। ’

১৯৬২ সালের ১৬ আগস্ট চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আইয়ুব বাচ্চু। বাবা মোহাম্মদ ইসহাক ও মা নূরজাহান বেগম। ১৯৭৮ সালে ফিলিংস ব্যান্ডের মাধ্যমে বাচ্চুর পথচলা শুরু। ১৯৮০ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ছিলেন সোলস ব্যান্ডের লিড গিটারিস্ট।

আইয়ুব বাচ্চুর অ্যালবাম এলআরবি বাজারে আসে ১৯৯২ সালে। এলআরবিই দেশের প্রথম ডাবল ও আনপ্লাগড অ্যালবাম প্রকাশ করে। সুখ, তবুও, ঘুমন্ত শহরে, ফেরারি মন, আমাদের বিস্ময়, মন চাইলে মন পাবে, অচেনা জীবন, মনে আছে নাকি নাই, স্পর্শ, যুদ্ধ এলআরবির জনপ্রিয় অ্যালবাম।

একক অ্যালবামেও ঈর্ষণীয় সাফল্য পেয়েছেন ক্ষণজন্মা এই শিল্পী। তার একক অ্যালবামের মধ্যে কষ্ট, সময়, একা, প্রেম তুমি কি, দুটি মন, কাফেলা, জীবনের গল্প উল্লেখযোগ্য। কিছু চলচ্চিত্রেও প্লেব্যাক করেছেন আইয়ুব বাচ্চু।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০১৮
ইএআর/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।