চলতি বছরের ২৩ জুলাই ভারতে সাম্প্রদায়িক হামলা বাড়ছে বলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি দিয়েছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, মণি রত্নম, শ্যাম বেনেগাল, অপর্ণা সেন, অনুরাগ কাশ্যপসহ সিনেমাসংশ্লিষ্ট ৪৯ জন বিশিষ্ট নাগরিক। আর তাদের অভিযোগের বিপরীতে ২৬ জুলাই নরেন্দ্র মোদীকে পাল্টা চিঠি দিয়েছিলেন অভিনেত্রী কঙ্গনা রনৌতসহ ৬১ জন নাগরিক।
এরপর ২৭ জুলাই বিহারের মুজাফফরপুর থানায় সুধীর কুমার ওঝা নামের এক আইনজীবী ওই ৪৯ জন নাগরিকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ করেন। অভিযোগ বিবেচনা করে তখন চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সূর্যকান্ত তিওয়ারি ওই ৪৯ জনের বিরুদ্ধে এফআইআর নথিভূক্ত করতে আদেশ দেন। এই প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) মামলাটি গৃহীত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে একাধিক ভারতীয় সংবাদমাধ্যম।
সুধীর কুমার ওঝার এই মামলার সাক্ষী হিসেবে কঙ্গনা রনৌত, বিবেক অগ্নিহোত্রী, মধুর ভাণ্ডারকরের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এরা সকলেই নরেন্দ্র মোদীকে দেওয়া ২৭ জুলাইয়ের পাল্টা চিঠিতে স্বাক্ষরকারী।
সম্প্রতি ভারতে বেশ কিছু গণপিটুনির ঘটনা ঘটে। অভিযোগ উঠেছে, ‘জয় শ্রীরাম’ বলে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা করা হচ্ছে। ভারতের ঝাড়খণ্ডে শামস তাবরেজ নামের একজনকে মোটরবাইক চুরির অভিযোগে গণপিটুনিতে মারা হলে এই আতংক আরও ছড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তার ও দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়।
তাবরেজের ওপর ঘটনার প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। তখন পিছিয়ে থাকেনি বলিউডও। ২৩ জুলাই পরিচালক মণি রত্নম, অনুরাগ কাশ্যপ, শ্যাম বেনেগাল, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, অপর্ণা সেনসহ ৪৯ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী মোদীকে লিখিত চিঠি দিয়ে তাদের উৎকণ্ঠার কথা জানান।
তাদের চিঠিতে বলা হয়, ভারতে উগ্র ধর্মীয় বিদ্বেষ বেড়েছে। ধর্মীয় ভিন্নতা থেকে উদ্ভুত ঘৃণা ও অপরাধ বেড়ে যাচ্ছে। মুসলমান ও উপজাতিসহ সকল সংখ্যালঘুদের জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় এই চিঠিতে। ভারতের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বাড়ছে বলেও উদ্বেগ প্রকাশ করেন স্বাক্ষরকারীরা।
ওই চিঠির প্রেক্ষিতে ২৬ জুলাই মোদী সরকারকে পাল্টা চিঠিতে অভিযোগগুলো নাকচ করে দেন বলিউড তারকা ও বিশিষ্ট অধ্যাপকসহ ৬১ জন নাগরিক। তাদের বক্তব্য, ৪৯ জনের ওই চিঠির বক্তব্য ‘সার্বিকভাবে সত্য নয়’। বরং ওটা নাকি নিশ্চিতভাবেই রাজনৈতিক ও অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণীত। এই চিঠিতে স্বাক্ষরকারী ৬১ জন নাগরিক প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন, পূর্বের চিঠির স্বাক্ষরকারীরা নকশালপন্থীদের ভয়াবহ তাণ্ডবলীলা বিষয়ে নীরব কেন? তারা রাজনৈতিক দূরভিসন্ধি নিয়ে কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে সাধারণ ঘটনার তকমা দিয়ে মিথ্যা বিবৃতি দিয়েছেন বলেও অভিযোগ কঙ্গনাদের।
এই চিঠিতে প্রশ্ন করা হয়, উপজাতি ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী যখন নকশালপন্থীদের ভয়াবহ হামলায় শিকার হয়, তখন প্রথম চিঠিদাতারা নীরব ছিলেন কেন? কাশ্মীরে যখন বিচ্ছিন্নতাবাদীরা বিদ্যালয় পুড়িয়ে দেয় তখন তারা নীরব ছিলেন। ভারতকে যখন ‘টুকরো টুকরো’ করার হুমকি দেওয়া হয়, তখন তারা নীরব ছিলেন। যখন বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দেশদ্রোহী শ্লোগান দেওয়া হয়, তখনও তারা নীরব ছিলেন কেন?
চিঠিতে আরও বলা হয়, ২৩ জুলাইয়ে প্রদত্ত ৪৯ জনের চিঠিতে ভারতের আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ক্ষুণ্ণ করা হয়েছে। দেশকে নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর প্রচেষ্টাকে খাটো করা হয়েছে। কোটি ভারতবাসীর জাতীয়তাবোধ ও মানবিকতাকে অসম্মান করা হয়েছে। মোটের ওপর এটা একটা মিথ্যা বিবৃতি।
আইনজীবী সুধীর কুমার ওঝার মামলায় তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের পাশাপাশি ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত এবং রাষ্ট্রের অখণ্ডতার ওপর হুমকির অভিযোগ আনা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৪, ২০১৯
এমকেআর