নিজের ক্যারিয়ার ও ব্যক্তিগত পছন্দের ব্যাপারে প্রিয়াঙ্কার আত্মবিশ্বাস ইস্পাতের মতো দৃঢ়। ফারহান আখতার ও জাইরা ওয়াসিমের সঙ্গে তার ‘দ্য স্কাই ইজ পিঙ্ক’ নিয়ে প্রচণ্ড আশাবাদী তিনি।
প্রিয়াঙ্কার আকাশ যখন গোলাপী
সিনেমাটির (দ্য স্কাই ইজ পিঙ্ক) শুটিং যখন চলছিল, তার মধ্যেই আমার বিয়ে হয়। জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময়টাতে এরকম কঠিন একটি সিনেমায় অভিনয় করা বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল।
বিয়ের সময়টাতে
বিয়েতে আমার প্রতিটি মুহূর্তই ছিল দারুণ। বিয়ে আয়োজনে আমার স্বামী ও মা প্রচুর সহযোগিতা করেন। নিক আগে আগেই ভারতে চলে এসেছিল। তখন আমি সিনেমাটির কাজ করছিলাম। তাই সে দিল্লিতে ছিল, যাতে আমি আমার কাজের দিকেই মনোনিবেশ করতে পারি।
স্বামী নিক জোনাসের মূল্যায়ন
আমার জীবনসঙ্গী এমনই একজন যে আপনাকে অনুভব করাতে পারে, আপনিই পৃথিবীর সেরা। আমার জীবনে তাকে পাওয়া আমার সৌভাগ্য। সে পাশে থাকলে আমি পৃথিবী জয় করতে পারি।
গেল সেপ্টেম্বরে ‘দ্য স্কাই ইজ পিঙ্ক’ সিনেমাটি টরোন্টো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হওয়ার পর দর্শকরা ১২ মিনিট দাঁড়িয়ে সংবর্ধনা জানায়। কেমন ছিল সেই অভিজ্ঞতা?
এটা স্বচক্ষে দেখা বিস্ময়কর ছিল। বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে আসা দুই হাজার মানুষ এতটা দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে সংবর্ধনা দিয়েছেন। অনেক দর্শকই সাবটাইটেল পড়ে প্রতিটি দৃশ্যের আবেদন উপলব্ধি করেছেন। সিনেমাটিতে দেখানো অনুভূতিগুলো ভাষাকেও ছাড়িয়ে গেছে। প্রকৃতপক্ষে সিনেমা এভাবেই নির্মিত হওয়া উচিত। প্রতিটি সিনেমার উচিত ভাষার গণ্ডি পেরিয়ে যাওয়া, আর প্রতিটি দর্শককে কিছু অনুভব করানো।
পরিচালক সোনালী বোসকে কীভাবে মূল্যায়ন করেন?
সোনালী বোস একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে অত্যন্ত বাস্তববাদী। সত্যকে স্বীকার করতে তিনি দ্বিধা করেন না। আমি যার চরিত্রে অভিনয় করেছি, সেই অদিতি চৌধরীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার সুযোগ হয়েছিল আমার। তার একটি কথা মনে আছে, যদি আপনার জীবনে বিপর্যয় নেমে আসে, তবুও নিজের মূল্য ভুলে যাবেন না। মেয়ে আয়শার সঙ্গে খুব মধুর সম্পর্ক ছিল তার। তারা একসঙ্গে মেকআপ করতেন, পোশাক পরতেন। নাচতে ভালোবাসতেন, আর বলিউড তো ছিলই। আমাদের সিনেমাটির কোনোখানেই তাদের কোনো আবেগে হস্তক্ষেপ করা হয়নি। সিনেমাটি দেখার পর আয়শা চৌধরীর মা-বাবা আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলেন। তারা কেন সোনালী বোসকে তাদের জীবনের কাহিনীর আলোকে সিনেমা বানাতে আস্থা রেখেছিলেন, তা আমাকে বলেছেন। কারণটি ছিল, সন্তান হারানোর বেদনা কেমন - সোনালী বোস তা বোঝেন।
নিজের অভিনয় সম্পর্কে
আমি এমন অভিনেত্রী নই যে, জীবনের একটি অনুষঙ্গ হিসেবে অভিনয়কে বেছে নিয়েছি। তাহলে তো পর্দায় শুধু প্রিয়াঙ্কাকেই দেখাতাম। বরং আমি নিজেকে লুকাতে চাই, আর পর্দায় ফুটিয়ে তুলতে চাই তাকেই, যার চরিত্রে আমি অভিনয় করি। এটাই আমার কাজ। আমি সহানুভূতি দিয়ে অনুভব করি আর চরিত্র অনুসারেই নিজেকে ফুটিয়ে তুলি।
‘দ্য স্কাই ইজ পিঙ্ক’ প্রসঙ্গে
আমি জানি ‘দ্য স্কাই ইজ পিঙ্ক’ একটি ভালো সিনেমা। দর্শকরা দেখতে চায় এমনই একটি সিনেমা এটি। এজন্য আপনাকে হৃদয় বা বুদ্ধিবর্জিত হওয়ার দরকার নেই। কাহিনীই আপনাকে এগিয়ে নেবে। আপনি আমাদের অম্ল-মধুর সম্পর্কটি উপভোগ করতে পারবেন। এখানে মজা আছে, ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ আছে আর সংবেদনশীলতাও আছে।
ফিচারধর্মী এই সিনেমাটির প্রেরণা
সন্তান হারানোর পর প্রায় ৮০ শতাংশ বিয়েই ভেঙে যায়। আমি এখনো মা হইনি, কিন্তু সোনালীর কাছ থেকে আমি অনেক কিছু জেনেছি। ভারতীয় সংস্কৃতি আমাদের কী শেখায় - তা সিনেমায় দেখানো এই সম্পর্কটির মধ্য দিয়েই ফুটে উঠেছে। যা-ই হোক না কেন, যেকোনো কঠিন পরিস্থিতিতেও স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে থাকতে হবে। অদিতি ও নিরেন আধুনিক যুগের সম্পর্কের জন্য একটি প্রেরণা।
জনপ্রিয় আমেরিকান টিভি সিরিজ ‘কোয়ান্টিকো’তে একজন এফবিআই এজেন্ট হিসেবে অভিনয় করেছেন প্রিয়াঙ্কা। এছাড়াও হলিউডে তিনি ‘বেওয়াচ’ (২০১৭), ‘অ্যা কিড লাইক জেক’ (২০১৯) ও ‘ইজন’ট ইট রোমান্টিক?’ (২০১৯) সিনেমায় অভিনয় করেছেন। বলিউডে প্রকাশ ঝা পরিচালিত ‘জয় গঙ্গাজল’ (২০১৬)-এর তিন বছর পর প্রিয়াঙ্কা চোপড়া জোনাস অভিনীত ‘দ্য স্কাই ইজ পিঙ্ক’ সিনেমাটি মুক্তি পেল।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১১ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০১৯
এমকেআর