ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিনোদন

ছেলের নতুন বইয়ের মলাট লাগাতে গিয়ে স্মৃতিকাতর চঞ্চল চৌধুরী

বিনোদন ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০২০
ছেলের নতুন বইয়ের মলাট লাগাতে গিয়ে স্মৃতিকাতর চঞ্চল চৌধুরী ছেলে শুদ্ধ’র বইয়ে মলাট লাগিয়ে দেন চঞ্চল চৌধুরী

শৈশবে নতুন ক্লাসে উঠে নতুন বইয়ের গন্ধ কার না ভালো লাগে! তারপর শুরু হয় নতুন বইয়ে মলাট লাগানোর ধুম।

জনপ্রিয় অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরীর ছেলে শুদ্ধ এবার চতুর্থ থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে উঠেছে।

চঞ্চলের ভাষায়, আমাদের ছেলে শুদ্ধ করোনার সময়ে শুধু অনলাইনে ক্লাস করেই চতুর্থ থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে উঠে গেল। আহারে অনলাইন! আবার যে কবে ওরা স্কুল জীবন শুরু করবে, সেই আশাতেই আছি।

ছেলের নতুন বইয়ের মলাট লাগাচ্ছিলেন চঞ্চল চৌধুরী। আর তা করতে গিয়েই নিজের শৈশব স্মৃতিচারণা করেছেন অভিনেতা। বাবা-ছেলের এমন মুহূর্তের একটি ছবি শেয়ার করে একটি ফেসবুক পোস্টে সে অনুভূতির কথা অনুরাগীদের জানিয়েছেন ‘আয়নাবাজি’খ্যাত তারকা।  

‘মলাট কাহিনী’ শিরোনামে চঞ্চল চৌধুরী লেখেন, ‘স্কুল জীবনে নতুন ক্লাসে ওঠার পর বইয়ে মলাট লাগানোর কথা সবারই মনে থাকার কথা। আমরা যারা গ্রামের স্কুলে পড়ালেখা করেছি, তাদের অভিজ্ঞতা একটু ভিন্ন রকমের। নতুন ক্লাসের নতুন বই, মলাট লাগানো, এগুলো ছিল উৎসবের মত। পুরনো ক্যালেন্ডার/সিমেন্টের ব্যাগ দিয়ে নতুন ক্লাসের বইয়ে মলাট দেয়া, এখনোও স্মৃতির অংশ হয়ে আছে। যাদের নতুন বই কেনার সামর্থ্য ছিল,
তাদের আনন্দ টা ছিল ভিন্ন মাত্রার।

দুটি কারণে আমার কখনো স্কুল জীবনে নতুন বই পড়া হয়নি। প্রথমত, আমার আগের বোনটি আমার এক ক্লাস উপরে পড়তো। পুরো স্কুল জীবন ওর পুরনো বই আমাকে পড়তে হয়েছে। দ্বিতীয়ত, দরিদ্রতার কারণে আমাদের বাবার সামর্থ্যই ছিল না নতুন বই কিনে দেবার। নতুন ক্লাশে ওঠার পর যখন দেখতাম সহপাঠীরা নতুন চকচকা বই পড়ছে, তখন খুব লোভ হতো। আর সে কারণেই প্রায় কোমায় চলে যাওয়া, পুরনো বইগুলোকে খুব সুন্দর করে মলাট লাগিয়ে, বইয়ের ক্ষত আর নিজের মনের ক্ষত, দুটোই ঢেকে রাখতে রাখতেই স্কুল জীবন পার করেছি। অবশ্য শান্তি একটাই, পুরনো ছেড়া বই পড়েও, নতুন বই পড়া সহপাঠীদের সাথে পাল্লা দিয়ে ক্লাসে প্রথম বা দ্বিতীয় হতাম। আসলে,ছাত্র হিসেবে তো খারাপ ছিলাম না!

আজ যখন আমার ছেলে শুদ্ধ’র নতুন ক্লাশের নতুন বইতে আদর করে মলাট লাগিয়ে দিচ্ছিলাম, তখন সত্যি উৎসব মনে হচ্ছিল। ছোট বেলার এরকম অনেক ছোট ছোট অপ্রাপ্তিগুলো ভুলতে ভুলতেই আজ এখানে পৌঁছানো। আমাদের সন্তানেরা যদি শুধু এটুকু বুঝতে পারতো যে, সারাজীবন ছেড়া বই পড়ে তোমাদের বাবারা তোমাদের হাতে এক সেট নতুন বই তুলে দিতে পেরে নিজেদের অপ্রাপ্তির সব কষ্ট ভুলে যায়, তাহলে বোধ হয় ওরা সত্যিই মানুষ হবার প্রেরণা পেতো। তাহলে আমাদের জীবন সংগ্রামও সার্থক হতো।  

এখনো আমি আমার ছোটবেলার সেই নতুন বই পড়া সহপাঠীদের চেয়ে ছেড়া বা পুরনো বই পড়া সহপাঠীদেরকেই বেশি খুঁজে বেড়াই। আর মনে মনে প্রার্থনা করি, আমাদের সন্তানেরা মানুষ হোক। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০২০
এমকেআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।