টাঙ্গাইল: পরীমনির দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তারকৃত তুহিন সিদ্দিকী অমি কয়েকটি দেশের নাগরিক বলে জানিয়েছেন তার বাবা তোফাজ্জল হোসেন তোফা।
তিনি জানান, অমি এবং পরীমনি ছিল স্কুল জীবনের বন্ধু।
অমির বাবা এলাকায় তোফা হাজী বা আদম ব্যবসায়ী তোফা নামেই বেশি পরিচিত।
টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার গুল্যা গ্রামে অমির পৈত্রিক বাড়ি। তার বাবা তোফাজ্জল হোসেন তোফা ১৯৮৫ সালে পাড়ি জমান সিঙ্গাপুরে। সেখানে দীর্ঘদিন থাকার পর দেশে এসে আদম ব্যবসা শুরু করেন পেঙ্গুইন ট্রেনিং সেন্টারের মালিক মিজানের সঙ্গে। ধীরে ধীরে ব্যবসা জমতে শুরু করে। পরে এককভাবে তিনি আদম ব্যবসা শুরু করেন। ঢাকার আসকোনা এবং দক্ষিণখানে গড়ে তোলেন দুটি ট্রেনিং সেন্টার। আর এই ট্রেনিং সেন্টারের মাধ্যমেই সিঙ্গাপুর, সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, কাতার, দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে লোক পাঠাতে থাকেন তোফাজ্জল হোসেন। ৭/৮ বছর আগে হজ করার পর আদম ব্যবসার দায়িত্ব ছেলে তুহিন সিদ্দিকী অমির হাতে ছেড়ে দেন।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন তোফাজ্জল হোসেন। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। কয়েক বছরেই হয়ে যান হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক। তোফাজ্জল হোসেন গ্রামে নির্মাণ করেছেন বিলাসবহুল ডুপ্লেক্স বাড়ি। এছাড়া ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের পাশেই গুল্যা এলাকায় প্রায় ১৮৫ শতাংশ জমির ওপর ছেলের নামে তৈরি করেছেন ‘অমি জেনারেল হাসপাতাল’, নাতি-নাতনির নামে করেছেন সুপার মার্কেট ও রেস্টুরেন্ট। এছাড়া গড়ে তুলেছেন হাজী আব্দুল মান্নান ময়মন নেছা কওমি মাদরাসা ও এতিমখানা। গড়েছেন মসজিদও। পাশাপাশি এলাকার মানুষদেরও বিভিন্ন সময় সহযোগিতা করেন তিনি।
হাবলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন দুলাল জানান, তোফাজ্জল হোসেন তোফা ও তার ছেলে তুহিন সিদ্দিকী অমি আদম ব্যবসায়ী। তাদের ঢাকায় অন্তত ৩০টি বাড়ি, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, দুবাইয়েও রয়েছে তাদের সম্পদ। এলাকার মানুষদের বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা করায় কেউ তাদের বিরুদ্ধে কথা বলে না। এছাড়া তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দামি দামি গাড়িতে চড়ে গ্রামের বাড়িতে আসেন।
তিনি জানান, তোফাজ্জল হোসেন তোফা বিএনপি সরকারের সময় ওই দলের সমর্থক ছিলেন। এখন আওয়ামী লীগের সমর্থক। এছাড়া তিনি স্থানীয় নির্বাচনে বিভিন্ন দলের প্রার্থীদের অনুদানও দিয়ে থাকেন।
হাবলা ইউপি সদস্য আকবর আলী জানান, তিনিও দীর্ঘদিন আগে সিঙ্গাপুর গিয়েছিলেন তোফাজ্জল হোসেন তোফার মাধ্যমে।
অমির বাবা তোফাজ্জল হোসেন তোফা বাংলানিউজকে জানান, অমির জন্ম ঢাকার আসকোনায়। সেখানেই বড় হয়েছেন। স্কুল জীবনে পরীমনির সঙ্গে তার বন্ধুত্ব ছিল। এরপর আর যোগাযোগ ছিল না। কিন্তু হঠাৎ করে তিনি জানতে পারেন পরীমনির দায়ের করা মামলায় অমিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তখন তিনি গ্রামের বাড়িতেই ছিলেন।
তিনি বলেন, অমি সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার নাগরিক। এছাড়া অমির রয়েছে ৭/৮টি দেশের পাসপোর্ট এবং সবগুলোতেই ভিসা লাগানো। আমি যদি আগে জানতে পারতাম পরীমনির মামলায় অমিকে গ্রেপ্তার করা হবে, তাহলে আগেই তাকে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দিতাম। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রি বেঁচে থাকলে কোনো চিন্তাই করতাম না। তিনি মারা যাওয়ার পর আমি অনেকটা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছি।
তিনি দাবি করেন, অমি ঢাকার বিভিন্ন ক্লাবের সদস্য। ভবিষ্যতে সে হয়তো ক্লাবগুলোর উচ্চ পদে বসতে চেয়েছিল। তাই তার প্রতিপক্ষ সামাজিকভাবে হেয় এবং ব্যবসায়ীক ক্ষতি করার জন্য পরীমনিকে দিয়ে তাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। তিনি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানান।
বোট ক্লাবের ঘটনায় নায়িকা পরীমনির দায়ের করা মামলায় তুহিন সিদ্দিকী অমিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মাদক মামলায় তাকে ৭ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।
সাভার মডেল থানা পুলিশ অমির অফিসে অভিযান চালিয়ে শতাধিক পাসপোর্টসহ দুজনকে গ্রেফতার করেছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১০০ ঘণ্টা, জুন ১৭, ২০২১
এসকেআর/নিউজ ডেস্ক