ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিনোদন

পাবনায় মঞ্চস্থ হলো নাটক ‘জনকের অনন্তযাত্রা’

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৩৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০২১
পাবনায় মঞ্চস্থ হলো নাটক ‘জনকের অনন্তযাত্রা’

পাবনা: জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ ও মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি প্রযোজিত নাটক ‘জনকের অনন্তযাত্রা’ প্রর্দশিত হয়েছে পাবনায়।  

শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা সারে ৬টায় পাবনা বনমালী শিল্পকলা কেন্দ্রের মঞ্চে নাটকটি মঞ্চস্থ হয়।

 

বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড নিয়ে সাধারণ মানুষের এখনো অনেক কিছু অজানা রয়েছে। সেই অজানাকে জানার আগ্রহ থেকে ইতিহাস ভিত্তিক বঙ্গবন্ধুর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনা এই প্রজন্মের মাঝে তুলে ধরার জন্য এই নাটকের প্রর্দশন। আর সত্য জানার জন্য সাধারণ দর্শক ভিড় করেন নাটকটি দেখার জন্য।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের সেই বাড়িতে ঘটে যাওয়া ইতিহাসের জঘন্যতম ঘটনার ১৬ আগস্টের ঘটনাবলিকে গল্পের আশ্রয়ে এই নাটকে উপস্থাপন করা হয়েছে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে দেশের ৬৪ জেলাতে দেশের কলঙ্কিত ইতিহাসের সেই জঘন্যতম হত্যাকাণ্ডের ঘটে যাওয়া সেই সময়ের ঘটনাকে তুলে ধরা হয়েছে নাটকের মাধ্যমে। নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন দেশের স্বনামধন্য নাট্যকার নির্দেশক অভিনেতা মাসুম রেজা। সহকারী নির্দেশক ছিলেন অয়ন চৌধুরী। দেশের ১৫টি সংগঠনের ২৪ জন মঞ্চ শিল্পী এই নাটকে অভিনয় করেছেন।

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সমাধিস্থ করার পূর্বাপর ঘটনাসমূহ আমাদের অনেকের কাছেই অস্পষ্ট বা অজানা। সেই দিনের সেই সময়ের নানা তথ্য তথ্য ও গবেষণার মাধ্যমে ১৬ আগস্টের সারাদিনের খণ্ড খণ্ড চিত্র জোড়া দিয়ে সাজানো হয়েছে জনকের অনন্তযাত্রা নাটকের গল্প। ১৫ আগস্ট রাতের শেষ প্রহরে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে সংগঠিত হয় ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যাকাণ্ড। ঘাতকের বুট আর বুলেটের আওয়াজে প্রকম্পিত হয়ে উঠেছিলো সেদিন। সকালের আলো বাংলার মাঠি ছোঁয়ার আগেই মহাবিজয়ের মহানায়কের রক্তে সিক্ত হয় ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িটি। চাকরিচ্যুত মেজর ডালিমের কণ্ঠে বাংলাদেশ বেতারে ঘোষণা করা হয় স্বৈরাচারী মুজিব সরকারকে উৎখাত করা হয়েছে, খন্দকার মোশতাক আহম্মেদ প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। একটি ঘোষণায় স্তম্ভিত বাংলাদেশ জয় বাংলা স্লোগান পাল্টে বলা হয় বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।

১৫ আগস্টের সেই বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের একদিন পরে ১৬ আগস্ট পরিবারের সব সদস্যদের সমাধিস্থ করা হয় রাজধানীর বনানী কবরস্থানে। কেবল বঙ্গবন্ধুকে যড়যন্ত্রকারী হত্যাকারীরা কফিন করে নিয়ে গিয়েছিলো টুঙ্গিপাড়ায় তার জন্মভূমিতে। একজন রাষ্ট্রপতিকে শেষ শয্যায় শায়িত করা হবে অথচ ছিল না কোনো রাষ্ট্রীয় আয়োজন। অন্তিম স্নান, কাফনের কাপড়, জানাজার নামাজ কোনো কিছুরই ব্যবস্থা ছিল না সেদিন। কী নিদারুন অবহেলা ছিল বঙ্গবন্ধুকে সমাধিস্থ করার সময়। খন্দকার মোস্তাকের নির্দেশে শেখ মুজিবকে ঢাকার বাইরে যেকোনো স্থানে কবর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তারা। পরবর্তীতে ১৬ আগস্ট মধ্য দুপুরে মরদেহ হেলিকপ্টারে নেওয়া হয় টুঙ্গিপাড়াতে। দুইজন সামরিক কর্মকর্তা আর সঙ্গে বেশ কিছু সেনা সদস্য নিয়ে দ্রুত সম্ভব অন্তিমক্রিয়া করে ফিরতে চেয়েছিলেন তারা। মেজর হায়দার ও ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিনকে দেওয়া হয়েছিলো এই দায়িত্ব।

সে দিনের সেই ঘটনায় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া মসজিদের ইমাম মওলানা আব্দুল হালিম। তিনি সেদিন উচ্চ কণ্ঠে বলে ছিলেন একজন মসুলমানের এভাবে দাফন করতে হলে তাকে শহীদ ঘোষণা করতে হবে। বঙ্গবন্ধুকে ৫৭০ কাপড়কাঁচা সাবান আর রেডক্রস হাসপাতাল থেকে আনা রিলিফের শাড়ি কাফনের কাপড় হিসেবে ব্যবহার করা হয় সেদিন। ১৪৪ ধারা জারি হওয়ার পরেও সেদিন অনেকেই ওই জানাজায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। সেদিন যারা এই অন্তিমযাত্রায় শামিল হয়েছিলেন তাদের থেকে শোনা ও পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতেই এই নাটকটি রচনা করা হয়।

সাধারণ মানুষ ও দলের নেতাকর্মীরা যাতে প্রতিবাদ করতে না পারে তার জন্য জারি করা হয়েছিল ১৪৪ ধারা। তবু সেই দিনে সেনা সদস্যদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে গ্রামের সাধারণ মানুষ এগিয়ে এসেছিলেন। তবে রাষ্ট্রের সেই সময়ের অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলদার আর ষড়যন্ত্রকারীদের নির্দেশে তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেদিনের সেই শোকার্ত আয়োজনে যারা উপস্থিত ছিলেন তাদের মুখ থেকে শোনা ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে এই নাটকে। প্রায় দেড় ঘণ্টা সময় কালের এই নাটকটি নিঃশব্দে উপভোগ করেছেন পাবনার দর্শক। এই নাটকটি ঢাকার বাইরে পাবনায় তৃতীয় মঞ্চায়ন হলো। প্রায় সাড়ে ৭শ দর্শক উপস্থিত ছিলেন নাটকটি দেখার জন্য।
অভিনেতা আজিজুল হাকিম ও অভিনেত্রী মনিরা বেগম বলেন, দীর্ঘ সময় পরে আমাদের মঞ্চে আগমন। আর এই আগমন এমন একটি নাটকের মধ্যদিয়ে হয়েছে যা আমাদের আত্মার সঙ্গে সম্পৃক্ত। সব শ্রেণীপেশার মানুষের সেই দিনের সঠিক ইতিহাস জানার জন্য নাটকটি বার বার দেখা দরকার।

নাটকের নির্দেশক মাসুম রেজা বলেন, ইতিহাসের এই নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডের দিনের কথা আমাদের সবার কাছেই অস্পষ্ট। আসলে কি ঘটেছিল সেদিন। ওই দিনের ঘটনার সময়ে যারা উপস্থিত ছিলেন তাদের সঙ্গে কথা বলে সঠিক তথ্য উপস্থাপন করেছি মাত্র। ইতিহাস বিকৃতিকারী আর ষড়যন্ত্রকারীদের মুখোশ উন্মোচন করা হয়েছে নতুন প্রজন্মের কাছে। সারা বাংলাদেশে এই নাটকটি প্রর্দশ করা হবে।

নাটকের সমন্বয়ক অভিনয় শিল্পী আব্দুল আন্নান শেলী বলেন, এই নাটকটি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নিজস্ব প্রযোজনা। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ১৫ ও ১৬ আগস্ট নিয়ে এর আগে কখনো মঞ্চ নাটক হয়নি। আমরা পাবনাবাসীকে এই নাটকটি দেখাতে পেরে সত্যি ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে গেলাম। ঘাতক মোস্তাক ও ষড়যন্ত্রকারীদের মুখোশ উন্মোচন করা হয়েছে এই নাটকে।

বাংলাদেশ সময়: ০০৩৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০২১
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।