ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

হাতির কান থেকে ঝড়-ভূমিকম্পের সংকেত!

শাহাদাৎ তৈয়ব, নিউজরুম এডিটর/ফিচার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০১৫
হাতির কান থেকে ঝড়-ভূমিকম্পের সংকেত!

ভূমিকম্প ও সুনামির মতো প্রাকৃতিক দুর‌্যোগ সম্পর্কে আগাম সংকেত দেয়ার মতো এখনো পরিপূর্ণ বৈজ্ঞানিক উপায় খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে এ নিয়ে বিজ্ঞানীরা প্রাণান্তকর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

তবে সম্প্রতি ইউরোপের বিজ্ঞানীরা হাতির আচরণ ব্যাখ্যা করে ভূমিকম্পের আগাম সংকেত পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদ প্রকাশ করেছেন।   

ঝড়ের আগমুহূর্তে পিঁপড়াসহ বনের বিভিন্ন পশুপাখিদের গতিবিধি ও ভাবভঙ্গি কেমন হয় সেসব বিষয়ে অনুসন্ধান ও বিশ্লেষণের অংশ হিসেবে হাতির আচরণ গবেষণা করতে গিয়ে আশাবাদী হন তারা।  

প্রাথমিক অনুমান হিসেবে বিজ্ঞানীরা প্রবল স্মৃতিশক্তি থাকায় হাতির উপর এ গবেষণা চালিয়েছেন।

নতুন এক গবেষণায় বিজ্ঞানীরা দাবি করে বলছেন, আকর্ষণ করার মতো হাতির এতটাই বিপুল শ্রবণ ও স্মৃতিশক্তি ক্ষমতা রয়েছে যে, তা কাজে লাগিয়ে আবহাওয়াবিদরা আবহাওয়ার পরিবর্তন সম্পর্কে নতুন ধরনের সংকেত পেতে পারেন।   

গবেষণায় তারা দেখতে পান যে, দীর্ঘ উচ্চতার এই প্রাণীরা ২৪১ কিলোমিটার দূর থেকেই ঝড় এবং ভারি বর্ষণের আভাস বুঝতে পারে।  

বিজ্ঞানীরা জানান, হাতির কানের আকার ও এর ভিতরের কোষগত গঠনের সাথে শ্রবণের উৎস এবং এরসঙ্গে যেকোনো কম্পনের উৎস বোঝার গুরুতর সম্পর্ক রয়েছে। এদের কানের আকার ও শ্রবণেন্দ্রিয়ের কোষগত গঠন এতটাই শক্তিশালী যে, এরা খুবই সূক্ষ্মতর ও দুর্বলতম বায়ুতরঙ্গও শনাক্ত করতে সক্ষম।    
 
গবেষণায় বিজ্ঞানীরা দেখতে পান যে, বাতাসে আদ্রতার সামান্যতম প্রকাশ শুরু হওয়ার পর এর ফলে শত শত মাইল দূরে মেঘের অতিদুর্বলতম গর্জন ও বজ্রধ্বনি শুনতে পায় হাতিরা।   এমনকি কোনো শিকারি সিংহ বেশ দূর থেকেও ওদের ফলো করলে এরা বুঝতে পারে।  

একইসঙ্গে আবহাওয়ার পরিবর্তন বিষয়ে হাতির এধরনের পূর্বাভাস পাওয়ার সক্ষমতা কাজে লাগিয়ে চারণভূমিতে শিকারী ও আক্রমণকারীদের থেকে তাদের রক্ষা করা সম্ভব।

বিজ্ঞানিরা বলেন, এর জন্য হাতির স্মৃতিশক্তিকে একটি পদ্ধতিগত বিদ্যায় রূপান্তরিত করা জরুরি।

তবে তারা বলছেন, বৃষ্টি, আবহাওয়া কিংবা শিকারি সম্পর্কিত আগাম সংকেত বোঝার ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে সিদ্ধান্তটা আসে বড় এবং বয়ষ্ক হাতির কাছ থেকে। বয়ষ্ক হাতিরাই সাধারণত এই সিদ্ধান্ত দেয়। মা হাতিদের এ শক্তি সবচেয়ে বেশি ও শক্তিশালী।

বৃষ্টি সম্পর্কে হাতির আচরণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের এ এন্ড এম ইউনিভার্সিটির ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক অলিভার ফ্রয়েনফেল্ড বলেন, ‘এরা (হাতি) দেখতে পেল কিছু এলাকার চেহারা পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। তা দেখতেই এরা চলতে শুরু করল। এমনকি তারা খুব দ্রুত চলা শুরু করল। ’  

এ গবেষণায় সাত বছর ধরে বিজ্ঞানীরা হাতির আচরণ বোঝার চেষ্টা করছেন। নয়টি হাতির কয়েকটি গ্রুপের উপর এ গবেষণা চালানো হয়।  

বিজ্ঞানীরা দেখতে পেলেন, আফ্রিকার নামিবিয়ায় বৃষ্টির মৌসুমে গত জানুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে হাতিরা বৃষ্টির সময় তাদের চলার পথ একেবারে বদলে ফেলে।   

ফ্রয়েনফেল্ড বলেন, ‘একবার শুকনো ও গরমের মৌসুমে। যেন এরা খুব চাচ্ছিল যে, বৃষ্টি হোক। পরে দীর্ঘ গরমের পর হঠাৎ হাতিগুলো কি জানি বুঝতে পেরে নড়চড়ে উঠল। এরপর এরা এদিক-ওদিক ছুটাছুটি করতে লাগল। এবং অদ্ভুতভাবেই কয়েকঘণ্টা পর দেখা গেল বৃষ্টি পড়তে শুরু করেছে। ’

বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, হাতির এ ধরনের আচরণ আরো বোঝার ও বৈজ্ঞানিকভাবে বিশ্লেষণের প্রয়োজন রয়েছে।

তারা খুব আশাবাদী যে, বৃষ্টি ও আবহাওয়ার পরিবর্তন সম্পর্কে হাতির পূর্বাভাস পাওয়ার ক্ষমতা ও এর কার‌্যকারণ ব্যাখ্যা করে ভূমিকম্প সম্পর্কে কোনো সুখবর তারা পেতে পারেন।  

সূত্র: ডেইলি মেইল

বাংলাদেশ সময়: ১৪১৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।