ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

প্রতিদিন চাই বাকরখানি

নাজমুল হাসান, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৪৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৬, ২০১৫
প্রতিদিন চাই বাকরখানি ছবি: আনন্দ/ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: সম্ভবত পুরান ঢাকার সবচেয়ে পরিচিত খাবারটির ‍নাম বাকরখানি। মুখরোচক এই খাবারটি ছাড়া দিন চলে না পুরান ঢাকাবাসীর।

তবে আশপাশের লোকজন যে বাকরখানি খান না, বিষয়টি এমনও নয়।

পুরান ঢাকার বেচারাম দেউড়ির রাস্তার কিনার ঘেঁষে ছোট্ট টং দোকানে বাকর খানি বানাতে ব্যস্ত ইব্রাহিম হোসেন। প্রতিদিন সকালে ৭টা থেকে বাকরখানি তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তিনি। এভাবে চলতে থাকে রাত ১০টা পর্যন্ত।

শুধু বেচারাম দেউড়ি নয়, পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ঐহিত্যবাহী বাকরখানি তৈরিতে ব্যস্ত থাকেন অনেক কারিগর।

বাকরখানি পুরান ঢাকার মানুষের প্রিয় খাবারগুলোর একটি। তাই এখনো সকালের নাস্তায় এক কাপ চায়ের সাঙ্গে কয়েক পিছ বাকরখানি না হলে যেন নাস্তায় পরিতৃপ্তি আসে না তাদের।

ময়দার খামির থেকে তৈরি রুটিকে মচমচ বা খাস্তা করে ভেজে তৈরি করা বাকরখানি নেওয়ার জন্য পুরান ঢাকায় ছুটে আসেন অনেক মানুষ। পুরান ঢাকার নারিকেল বাকরখানি, ঘিয়ের বাকরখানি, কাবাব বাকরখানি, চিনি বাকরখানি, নোনতা বাকরখানি ও ছানা বাকরখানি অন্যতম।

জানা যায়, মোঘল আমল থেকই বাকরখানির সুপরিচিতি এখানে। এখনো পুরান ঢাকার অনেক কারিগর স্বাদ ও খাবারের মান বজায় রেখে বাকরখানি তৈরি করে আসাছেন।

বাকরখানি কারিগর ইব্রাহিম হোসেন (৪৩) বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের এই ব্যবসার বয়স প্রায় ৬০-৭০ বছর হবে। আমার বাবা বাকরখানি তৈরি করতেন। বাবার পর আমি এই ব্যবসা চালাচ্ছি। বাবা যেভাবে শিখিয়ে গেছেন ঠিক তেমনভাবে খাবারের স্বাদ ও মান বজায় রেখে তৈরি করার চেষ্টা করি। যার ফলে আজও ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারছি।

তিনি আরও বলেন, অনেক রকমের বাকরখানি থাকলেও শুধু দুই ধরনের বাকরখানি এখন তৈরি করি- নোনতা ও মিষ্টি। এখন নোনতা আর মিষ্টি বাকরখানির চাহিদা বেশি থাকায় সবাই এই দুই আইটেমই তৈরি করে।

পুরান ঢাকার বাসিন্দা জাফর খান (৭৮) বলেন, পঞ্চাশ দশক থেকেই আমি বাকরখানি দেখে আসছি। এই খাবাররের চাহিদা আগে অনেক বেশি ছিল। পুরান ঢাকার প্রতি পাড়া-মহল্লায় অনেক দোকান ছিল, কিন্তু সময়ের আবর্তনে এই খাবারের চাহিদা অনেকটা কমে গেছে, হারিয়ে গেছে বাকরখানির অনেক দোকান।

বর্তমান ব্যবসার হালচিত্র বিষয়ে ইব্রাহিম হোসেন বলেন, আগে যে কোনো ব্যবসার সবকিছুই ভালো ছিল। জিনিসের দাম কম ছিল তাই ব্যবসা করে ভালো লাভও করা যেত। কিন্তু এখন আর সেই দিন নেই। তাছাড়া আগের মতো এই বাকরখানির কাস্টমারও নেই। বিদেশি অনেক ফাস্টফুড খাবারের মধ্যে এখন মানুষ নিজের দেশের অনেক খাবারের কথা ভুলে গেছে।

একসময় প্রতিদিন ৩শ’ থেকে ৪শ’ কেজি বাকরখানি বিক্রি করতাম। কিন্তু বর্তমানে ২০ থেকে ৩০ কেজি বিক্রি হয় সারা দিনে। আধা কেজি ৬০ টাকা ও এক কেজি ১২০ টাকা দরে বর্তমানে বিক্রি করি। কিন্তু আগে এর দ্বিগুণ দামে বিক্রি করতাম।

নিজেদের ব্যবসা বাঁচিয়ে রাখতে অনেক বাকরখানি ব্যবসায়ী নতুন ঢাকার ধানমন্ডি, গুলশান, বনানী, উত্তরার মতো অভিজাত এলাকার দোকানগুলোতে তারা বাকরখানি সরবরাহ করছে। সেই সাঙ্গে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা চলেছে পুরান ঢাকার এই ঐহিত্যবাহী খাবারটির।

যেভাবে খুঁজে নেবেন বাকরখানি
গুলিস্তান এসে বাসে করে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোড, আলাউদ্দিন রোড, ওয়ারী, চকবাজার, বেচারাম দেউড়ি অথবা পুরান ঢাকার যে কোনো এলাকায় খোঁজ করলে পেয়ে যাবেন বাকরখানি। এছাড়া আজিমপুর, টিএসসি, শাহবাগ অথবা পলাশীর মোড় থেকে রিকশা নিয়ে পুরান ঢাকার এসব এলাকায় যেতে পারেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৬৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।