শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) : স্কুল নেই। নেই পাঠশালা।
গাছের ছায়া আর ঘাসের সবুজ ডগাতে মুখ ঘষে ঘষে বেলা একসময় গড়িয়ে বিকেলে এসে থামে। তারপর শুরু হয় ঘরে ফেরার তাগিদ। সকালে যেদিক থেকে যাত্রা শুরু হয়েছিলো গোধুলিতে সেই দিকটিতে আবার ফিরে যাওয়া।
চা বাগানের লালমাটির কাচা পথ এগিয়ে গেছে দূরের শ্রমিক লাইনের দিকে। সেই পথ ডিঙিয়ে সবুজ ঘাস আর লতাপতার সন্ধানে গরুর পাল নিয়ে এগিয়ে আসা। প্রতিদিনের এই কাজ, তবু ক্লান্তি নেই দুই কিশোরের চোখে-মুখে।
একজনের নাম নয়ন ভুঁইয়া এবং অপর জনের নাম শিপন সিং। দুজনেই জাকছড়া চা বাগানের বাসিন্দা। ওরা এক বছর ধরে গরু চরাচ্ছে। তাদের দলে রয়েছে চৌদ্দটা গরু।
নয়ন জানিয়েছে, সে মাত্র তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছে। অভাবের সংসারে টাকা আয় করতেই ঘর থেকে বেরুতে হয়েছে। প্রায় একই রকমের উত্তর শিপনেরও। সে জানায়, তার পিতা মদন ভুঁইয়া হঠাৎ মারা যাবার পর সংসারে অভাব-অনটন দেখা দেয়।
সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চা বাগানে পথে-ঘাটে-মাঠে গরু চরাতে হয়। সপ্তাহ প্রতি বড় গরু বাবদ পঞ্চাশ টাকা আর ছোট গরু বাবদ বিশ টাকা দিতে হয় তাদের।
তবে একটা সমস্যা রয়েছে। আর তা হলো বাগান কর্তৃপক্ষের শাসন! সেকশনের ভেতর গরু প্রবেশ করলেই সেকশনের চৌকিদার এসে গরু ধরে খোয়ারে (কারাগার) নিয়ে যায়। তখন একটা গরু ছুটিয়ে আনতে পঞ্চাশ টাকা লাগে।
মঙ্গলবার (২২ মার্চ) দুপুরে জাগছড়া চা বাগান প্রবেশের মুখে চায়ের শিশুদের এমন দৃশ্য ধরা পড়লো। তবে এ দৃশ্য অবাক হয়নি! কারণ, প্রতিটি বাগানেই এমন ঘটনার প্রমাণ রয়েছে। গরু চরানোর দায়িত্ব পুরোপুরি অপর্ণ করা হয়েছে চা বাগানের শিশুদের ওপর!
নয়ন-শিপনরা সাময়িক ভালো থাকলেও আগামীর জন্য একদমই ভালো নেই! লেখাপড়াহীন এমন অনিশ্চিত জীবন ভবিষ্যৎ ভাগ্যবিড়ম্বরার নির্মম সাক্ষী হয়ে চলেছে।
ঝরেপড়া চায়ের শিশুরা বর্ণমালার সংস্পর্শ থেকে যেন চিরবঞ্চিত না হয়, এই দায়িত্ব আমাদের সকলের। বিশেষত শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৮ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০১৬
বিবিবি/বিএস