ঢাকা: চলছে সিয়াম সাধনার মাস। পবিত্র এ রমজান মাসে সবাই কম-বেশি সংযমব্রত পালন করেন।
বিশেষ করে ইফতার এখন দেশবাসীর কাছে রমজানের প্রতিদিনকার উৎসবে পরিণত হয়েছে। শহর কিংবা গ্রাম, সবখানেই হরেক রকমের রসনা বিলাস চলছেই। হোক তা পারিবারিক কিংবা সামাজিক অথবা করপোরেট।
তবে বর্তমানে সেহরি পার্টির আয়োজনও চলছে কোথাও কোথাও। রাজধানীতে বেশ ক’বছর ধরে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ হোটেল কিংবা রেস্তোরাঁয় এ আয়োজন করে থাকে। যার বেশিরভাগই প্রয়োজনের তাগিদে করা। তবে এ বছর সে চিত্রে কিছুটা বাড়তি মাত্রা যোগ হয়েছে। সেহরি পার্টির জন্য এখন পারিবারিকভাবেও অনেকে মধ্যরাতে বের হচ্ছেন।
রোজা রাখার উদ্দেশ্যে উৎসবমুখর পরিবেশে এই খাওয়ার আয়োজন রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে হলেও, চানখারপুলই সেরা বলে রাজধানীবাসীর মত। এখানে এমনিতেই সারা বছর ধরে হোটেলগুলো রাতভর খোলা থাকে। আর এই খবর ছড়িয়ে যাওয়ায় অনেকেই পরিবার নিয়ে ছুটে আসছেন চানখারপুলে সেহরি খেতে। কেউবা আবার সদলবলে চলে আসছেন।
মঙ্গলবার (১৪ জুন) দিনগত রাত ২টার দিকে চানখারপুলে গিয়ে দেখা গেছে, রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনেকেই সেহরি খাওয়ার জন্য এসেছেন। তাদের মধ্যে উত্তরা থেকে ব্যবসায়ী আশিক চৌধুরী এসেছেন চার ভাই-বোনদের নিয়ে।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, বাসায় তো প্রতিদিনই ঘরোয়া পরিবেশে সেহরি খাওয়া হয়। তাই এবার বাইরে এলাম।
এরমধ্যে দেখা গেলে কয়েকজন টিনএজারকে। শোরগোল করতে করতেই তারা হোটেলের সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেলেন। হোটেল বয়দের মামা, মামা করে অস্থির করে তুললেন চারপাশ। তাদেরই একজন বললেন, বন্ধুরা মিলে একসঙ্গে সেহরি খেতে এসেছি। ইফতার তো করাই হয়। তাই সেহরি করার আনন্দটাও নিচ্ছি।
চানখারপুলে বেশ কয়েকটি হোটেল থাকলেও সবচেয়ে বেশি ভিড় লক্ষ্য করা গেলো আফতাব রেস্টুরেন্টে। স্বত্ত্বাধিকারী মো. আফতাব উদ্দীন বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিদিন ৩শ লোকের সেহরির আয়োজন করা হয়। সামুদ্রিক শুটকি মাছসহ ১২ রকমের ভর্তা ছাড়াও ১৭ প্রকারের মেনু থাকে। তবে দাম আগের মতোই। আবার প্যাকেজেও অর্ডার করার ব্যবস্থা রয়েছে। ১০ জনের খাবার (মেনু ভেদে) নিতে খরচ পড়ে এক হাজার টাকা। আর আগামী ১৭ থেকে ২৫ জুন বাড়তি হিসেবে থাকবে উটের গোশতের মেনু।
আফতাব জানান, আগে শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা মেডিকেলের ছাত্র-রোগীরা আসতো। এখন নতুন ঢাকার অনেক লোক আসে। বিশেষ করে উত্তরা, বনানী, মোহাম্মদপুরের লোক বেশি।
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ (ব্যাচেলর অব বিজনেস স্টাডিজ) শিক্ষার্থী দর্পন মুরসালিন। তিন বন্ধুকে নিয়ে বেইলি রোড থেকে এসেছেন। এখানাকার একেক হোটেলে একেক রাতে সেহরি খান তারা। দর্পন জানান, চানখারপুল সেরা। আজ বসেছেন ক্যাফে রাজধানীতে। এই হোটেলে গরু গোশতের ভুনা বেশ সুস্বাদু।
ক্যাফে রাজধানীর স্বত্ত্বাধিকারী হাজী ইউনূস বাংলানিউজকে বলেন, সেহরির জন্য প্রতিদিন ১শ লোকের রান্না হয়। দাম আগের মতোই। আমরা বিভিন্ন প্রকারের ভর্তাসহ ভুনা খিচুড়ির ব্যবস্থা রেখেছি।
চানখারপুলের হোটেলগুলো খুব ভালো সাজানো-গোছানো নয়। কিন্তু দামে কম, স্বাদে ভালো হওয়ায় সাধারণ মানুষের আগ্রহ লক্ষ্য করা যায়। তার ওপর এই সেহরির আয়োজন। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিরাতে এখানকার কয়েকটি হোটেলে প্রায় ৫শ লোকের সেহরির যোগান দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ সময়: ০৬১৪ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০১৬
ইইউডি/এসএনএস