শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার): গ্রামাঞ্চলে এই পাখিরা বেশ আতংক নিয়ে দিন কাটায়। বিশেষ করে দুষ্টু ছেলেরা নানাভাবে অত্যাচার করে পাখিগুলোকে।
ছোট মাছ শিকারের আশায় গভীর ধ্যানে বসে থাকতে থাকতে তাদের উৎকণ্ঠায় থাকতে হয় কখন পেছন থেকে গুলতির গুলি এসে শরীরে আঘাত করে। তারপরও ঝুঁকি নিয়ে পুকুর, বিল, নানা ধরনের জলাশয়ে দিব্বি বসে থাকা। সাধারণত একা। কখনো কখনো জোড়ায়।
এ পাখির বাংলা নাম পাতি মাছরাঙা বা ছোট মাছরাঙা এবং ইংরেজি নাম Common Kingfisher। এদের বৈজ্ঞানিক নাম Alcedo atthis। এরা ‘আলসেডিনিদি’ গোত্রের ক্ষুদ্র পাখি। পৃথিবীতে এ পাখির পনেরোটি প্রজাতির মধ্যে বাংলাদেশে তিনটি প্রজাতির দেখা মেলে।
প্রখ্যাত পাখি বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ইনাম আল হক বাংলানিউজকে বলেন, এরা আমাদের দেশের সুলভ আবাসিক পাখি। সারাদেশের পুকুর, দীঘি, নদী, বিল, উপকূল, প্যারাবনসহ ছোট-বড় জলাশয়ে সর্বত্র দেখা মেলে। দ্রুত ডানা চালিয়ে এরা পানির অল্প উপর দিয়ে যাতায়াত করে। পানিতে ঝাঁপিয়ে মাছ শিকার করতে এরা পটু। এরা বিশেষভাবে অভিযোজিত– পানির নিচের শিকার দেখা জন্য। জলাশয়ের আশপাশের গর্তে এরা বসবাস করে।
এর শিকার পদ্ধতি সম্পর্কে তিনি বলেন, পুকুর বা জলাশয়ের সামান্য উপরের খুঁটিতে গভীর ধ্যানে নিঃশব্দে বসে থাকে। মাছের দেখা পাওয়া মাত্রই সেই দৃশ্যমান স্থানে দ্রুত ঝাঁপিয়ে পড়ে। শিকারটিকে জ্যান্ত ঠোঁট দিয়ে চেপে ধরে পুনরায় একই স্থানে এসে বসে। তারপর সেই শিকারকে গাছের ডালে আছড়ে মেরে গিলে খায়। এদের ঠোঁট লম্বা সোজা ছুরির মতো।
পাখিটির আকৃতি ও খাদ্য তালিকা সম্পর্কে ইনাম আল হক বলেন, এরা আকারে অনেকটা চড়ুইয়ের মতো। ১৬ সেন্টিমিটার ও ওজন ২৫ গ্রাম। লাল পেট ছাড়া সারাদেহ নীল। গলা সাদা। কান কমলা। মাথার চাঁদি, কাঁধ-ঢাকনি ও ডানা ফ্যাকাসে সবুজাভ-নীল। তীব্র শব্দে ‘চিট-ইট-ইট, চিট-ইট-ইট...’ এভাবে ডাকে। এদের খাদ্য তালিকায় রয়েছে ছোটমাছ, ব্যাঙের ছানা ও জলজ পোকামাকড়।
মার্চ-জুন এদের প্রজননকাল। এ সময় তারা জলাশয়ের তীরের খাঁড়া মাটির ঢিবিতে গর্ত খুড়ে বাসা বানিয়ে ৫-৭টি ডিম পাড়ে। ডিমগুলো রং সাদা বলে জানান এ পাখি গবেষক।
বাংলাদেশ সময়: ০৭২০ ঘন্টা, জুন ১৮, ২০১৬
বিবিবি/এএ