ঢাকা: এইচএসসি পাশের পর এলাকায় বেশ ক’বছর চাকরির জন্য ঘোরাঘুরি করেন। কিন্তু হতাশ হন।
এভাবে কেটে যায় চার বছর। কোনো দিকে দিশ না পেয়ে এক শুভানুধ্যায়ীর পরামর্শে গত বছর রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা সংলগ্ন তিনশ’ ফুট সড়কের পাশে চা দোকান নিয়ে বসে যান। একবছর পর এখন তার বক্তব্য, ‘চাকরির জন্য অনেক ঘুরেছি, এখন চা দোকান নিয়ে ভালোই আছি’।
এই চা দোকানদার হলেন আল আমিন (৩৫)। কিশোরগঞ্জের বাসিন্দা। আল আমিনের চা দোকানে বসেই তার সঙ্গে আলাপ হচ্ছিল।
তিনি জানান, প্রথম দিকে চা-রুটি-বিস্কুট-কলা বিক্রি শুরু করেন। এখন এ ধরনের আরও কিছু পদ যুক্ত হয়েছে বিক্রির তালিকায়। এই চা দোকান নিয়ে ভালো দিন কেটে যাচ্ছে তার।
চা দোকানের আয়ে ঢাকায় একটি ভাড়া বাসায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে থাকেন। প্রতিমাসে হাজার দুয়েক টাকা পাঠাতে পারেন বাবা-মাকেও।
আল আমিন বলেন, ‘পুলিশ’ আর ‘এলাকার ভাই’দের চাঁদা দিয়েও দৈনিক চার থেকে পাচঁশ টাকা আয় থাকে আমার।
এই স্বনির্ভরতায় দাঁড়ানোর বিষয়ে তিনি বলেন, চাকরির জন্য অনেকের কাছে ধর্না দিয়েছি। চাকরি পাইনি। বরং হয়রানির শিকার হয়েছি। শেষ পর্যন্ত রাস্তায় বসতে বাধ্য হয়েছি। মাত্র ৮ হাজার টাকা মূলধন নিয়ে চা বিক্রি শুরু করেছিলাম। আস্তে আস্তে দোকানে বিক্রির পদ হিসেবে যুক্ত হয় কলা-রুটি-বিস্কুট ইত্যাদি। এখন ভালোই দিন চলে যাচ্ছে।
সকাল ৯টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত দোকান খোলা থাকে আল আমিনের। বিশেষ কোনো ঝামেলা নেই। কিছু নির্ধারিত চাঁদার পাশাপাশি দু’এক কাপ চা ফ্রি যায়।
আল আমিন বলেন, ৫-৬ হাজার টাকা বেতনের চাকরির জন্য কতো ঘুরেছি। এখন আর কষ্ট লাগে না। চা-রুটি-বিস্কুট বিক্রি করেই মাসে ১২-১৫ হাজার টাকা আয় হয়।
সামনে ঈদ। বাবা-মা, ছেলে-মেয়ে আর স্ত্রীকে ঈদের পোশাক দিতে হবে। সে চিন্তা মাথায় আছে আল আমিনের। বলেন, সামনে অনেক টাকা দরকার। ঈদ খরচ সামলাতেই রোজা হওয়ার পরও এখন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত দোকান খোলা রাখছি।
আল আমিনের দোকানের ক্রেতাদের বেশিরভাগ হচ্ছেন দিনমজুর আর রিকশাচালক।
রোজার আয়-উপার্জন সম্বল করে ঈদে বাড়ি যাবেন আল আমিন। মা-বাবার সঙ্গে ঈদ করবেন। সেজন্য এখন থেকেই উচ্ছ্বাস কাজ করছে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ২২০৫ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০১৬
এমএম/এইচএ/