ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

ফিচার

বর্ণিল আয়োজনে গর্বের একুশ উদযাপন

ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩২৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২১
বর্ণিল আয়োজনে গর্বের একুশ উদযাপন

ঢাকা: বসনে অ আ ক খ বর্ণমালার উল্কি আর মুখাবয়বে ‘মোদের গরব মোদের আশা, আমরি বাংলা ভাষা’র স্লোগান। শাড়ি আর পাঞ্জাবিতে একুশের চেতনার রঙ।

মাতৃভাষা বাংলাকে ফিরে পাওয়ার আনন্দে তারুণ্যের উচ্ছাসে নতুন রূপে সেজেছিলো দেশের মানুষ।

রোববার (২১ ফেব্রুয়ারি) শাহবাগ মোড় থেকে টিএসসি আর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে দোয়েল চত্বর ছাড়িয়ে ভালোলাগা ও ভালোবাসার আবেশ ছড়িয়ে দিয়েছিল রাজধানীজুড়ে। বসনে-ভূষণে, চলনে-বলনে মূর্ত ছিল একুশ।

তাইতো আলোচনা, নৃত্য, সঙ্গীত, আবৃত্তি ও ফুলেল শ্রদ্ধাসহ নানান আয়োজনে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০২১’ বর্ণিলভাবে উদযাপন করেছে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও স্বেচ্ছসেবী সংগঠন। তাতে অংশ নিয়েছেন সাধারণ মানুষও।

শিল্পকলা একাডেমি:
সকালে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ, আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০২১ উদযাপন করেছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। এছাড়া বিকেলে ছিল ‘বিশ্বের সব মাতৃভাষা রক্ষা করবে বাংলাদেশ’ শীর্ষক আয়োজন।

ব্যতিক্রমী এই আসরে সঙ্গীত, নৃত্য ও আবৃত্তি পরিবেশন করেন বিভিন্ন দেশের শিল্পীরা। বাংলা ভাষার স্বীকৃতির এমন দিনে বিদেশি শিল্পীদের পরিবেশনা একুশকে তুলে ধরে গৌরব ও অহংকারের সঙ্গে।

আয়োজনের শুরুতেই সম্মিলিত কন্ঠে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানটির মধ্য একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে এই আয়োজনের সূচনা ঘটে। এরপর ‘বিশ্বের সব মাতৃভাষা রক্ষা করবে বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনায় প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।

একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. বদরুল আরেফীন এবং স্বাগত বক্তব্য দেন এাকডেমির সচিব মো. নওসাদ হোসেন।

আলোচনা পরবর্তীতে সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক পর্বে আবৃত্তি করেন নেপাল দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত ড. বানশিধার মিশ্রা, রাশিয়ান দূতাবাসের ওলগা রায়, সঙ্গীত পরিবেশন করেন অস্ট্রেলিয়ান দূতাবাসের হাই কমিশনার জেরিমি ব্রুয়ার, জাপানের মেই ওয়াতানাবে ও শুনসুন মিজুতুয়ানি, কোরিয়ান নানঘেকিম, নৃত্য পরিবেশন করেন ঢাকা ইন্দিরা গান্ধি কালচারাল সেন্টারের সুলগ্ন বর্মন, রাজোন্যা চৌধুরী, নেহা ভাইড এবং আনশি আঘারাওয়াল।

লিয়াকত আলী লাকীর ভাবনা ও নির্দেশনায় ঢাকা সাংস্কৃতিক দলের সংগীত শিল্পী এবং ভঙ্গিমা নৃত্য দলের  শিল্পীরা পরিবেশন করে ৪১টি ভাষায় ‘বিশ্ব মায়ের শুর সঙ্গীত বাণী’ শীর্ষক সঙ্গীত ও নৃত্য। এছাড়া আয়োজনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিল্পীরাও সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় অংশ নেন।

ছায়ানট:
ভার্চুয়াল আয়োজনে একুশ উদযাপন করেছে সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানট। ‘অপমানে তুমি জ্বলে উঠেছিলে’ শীর্ষক এই অনলাইন আয়োজনে এককসঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী মাকছুরা আখতার, মাকসুদুর রহমান, মোহিত খান, ফারজানা আক্তার পপি, দীপ্র নিশান্ত, বিজন চন্দ্র মিস্ত্রী, সৈয়দা সন্জিদা জোহরা বীথিকা, মহুয়া মঞ্জরী সুনন্দা ও মো. খায়রুল ইসলাম।

মোদের গরব মোদের আশা, মাগো ধন্য হলো জীবন আমার, আমরা মিলেছি আজ মায়ের ডাকে, একবার গালভরা মা-ডাকে, অপমানে তুমি জ্বলে উঠেছিলে সেদিন বর্ণমালা, মাগো আটই ফাল্গুনের কথা আমরা ভুলি নাই, আমায় গেঁথে দাও না মাগো একটি পলাশ ফুলের মালা-র মতো গানে পুরো আয়োজনে একুশকে মূর্ত করে তোলেন শিল্পীরা।

অনুষ্ঠানে আবৃত্তি করেন মাহমুদা আখতার ও আব্দুস সবুর খান চৌধুরী। আয়োজনের সমাপ্তি হয় জাতীয়সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে।

উদীচী:
বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে একুশে উপলক্ষ্যে "দারুণ ক্রোধের আগুনে আবার জ্বালবো ফেব্রুয়ারি" প্রতিপাদ্যে বিকেল শাহবাগ চত্বরে এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে  গান  পরিবেশন করেন রবিউল ইসলাম শশী, শিল্পী আক্তার, রুমি দে, তটিনী ছড়া ও শামীম তালুকদার। আবৃত্তি পরিবেশন করেন বিশিষ্ট আবৃত্তিশিল্পী বেলায়েত হোসেন, ইকবাল খোরশেদ, মিজান সুমন ও উদীচী ঢাকা মহানগর আবৃত্তি বিভাগ।

এছাড়া "ইতিহাস কথা কও" এর অংশ বিশেষ পরিবেশন করে ঢাকা মহানগর সংগীত বিভাগ। বাউল গান পরিবেশন করে পরিক্ষীত ইমন ও অবিনাশ বাউল।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন উদীচীর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার তপন, সহ-সাধারণ সম্পাদক ইকবালুল হক খান, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আরিফ নূর, বিমল মজুমদার, উদীচী ঢাকা মহানগরের সভাপতি নিবাস দে। আয়োজনে সভাপতিত্ব করেন সহ সভাপতি হাবিবুল আলম। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সহ-সাধারণ সম্পাদক সঙ্গীতা ইমাম।

আয়োজনে বক্তারা বলেন, একুশের চেতনায় যদি ক্ষয় ধরে তবে বুঝে নিতে হবে বাংলাদেশের ক্ষয় ধরেছে এবং বাংলাদেশকে টিকিয়ে রাখতে হলে একুশের চেতনাকে টিকিয়ে রাখতে হবে। সর্বস্তরে বাংলা ভাষা যদি নিশ্চিত করা না যায় তবে একুশের চেতনাকে যথাযথ মর্যাদা দেওয়া হবে না। তাই এখনই সময় সর্বস্তরে বাংলাভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করা।

বাংলাদেশ সময়: ০৩২৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২১
এইচএমএস/এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।