মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ ধনী দেশ কাতার কখনই বিশ্বকাপে খেলেনি। ফুটবল এই অঞ্চলে তেমন জনপ্রিয়ও নয়।
চার বছর পরপর আয়োজিত এই বিশাল ফুটবলযজ্ঞ মধ্যপ্রাচ্যে আয়োজিত প্রথম বিশ্বকাপ হতে চলেছে। তবে আয়োজক দেশ নিয়ে একের পর এক প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। দেশটি এখন কূটনৈতিক সমস্যা মোকাবেলা করছে। সন্ত্রাসের সহযোগী হিসেবে তাদের দিকে আঙ্গুল তোলা হচ্ছে। আর দুর্নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো গুরুতর অভিযোগ তো আছেই।
প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ আয়োজন করা হবে নভেম্বর-ডিসেম্বরে। এটা নিয়েও প্রশ্ন তুলছে অনেকে। আবার মোট কতগুলো দল নিয়ে আসর বসবে তা নিয়েও রয়েছে ধোঁয়াশা। সবমিলিয়ে কাতার বিশ্বকাপ হতে চলেছে একেবারে ভিন্ন এক বিশ্বকাপ।
তবে সবচেয়ে বড় প্রশ্নের উত্তর এখনও বাকি রয়ে গেছে। সেই ২০১৭ সালের জুন থেকে প্রতিবেশী রাষ্ট্র, যাদের মধ্যে সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত রয়েছে, কাতারকে একঘরে করে রেখেছে। তাদের অভিযোগ, কাতার উগ্রপন্থার সমর্থন দিচ্ছে এবং ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করেছে।
কাতারের সঙ্গে অধিকাংশ আরব দেশের সম্পর্কের অবনতি খুব শীঘ্রই কেটে যাবে তার কোনো পূর্বাভাস দেখা যাচ্ছে না। উল্টো সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত খোলামেলা ঘোষণা দিয়ে বসে যে কাতারের কাছ থেকে তারা ২০২২ বিশ্বকাপ ছিনিয়ে নেবে এবং নিজেরা একদম নতুন করে আয়োজন করবে।
সঙ্কটের অংশ হিসেবে, সৌদি আর সংযুক্ত আরব আমিরাতের নাগরিকদের জন্য কাতারে ভ্রমণের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ওই দুই দেশ। যদিও কাতারের রাজধানী দোহার টুর্নামেন্ট আয়োজকদের আশা প্রায় ১৫ লাখ ফুটবলভক্ত আগামী বিশ্বকাপে কাতার ভ্রমণ করবে, যার একটা বড় অংশ আসার কথা সৌদি আরব থেকে।
ফিফা মনেপ্রাণে চাইছে বিবাদ মিটিয়ে ফেলতে। কিন্তু তা এখনও আলোর মুখ দেখেনি। গত ১১ জুলাই বিশ্বকাপের ম্যাচ অবৈধ সম্প্রচারের জন্য সৌদি আরবের বিপক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল ফিফা। অভিযোগ ছিল, কাতারের বিইন স্পোর্টসের সম্প্রচারসত্ত্বের বরখেলাপ করে গোপনে সম্প্রচার করেছিল সৌদি আরবের একটি সম্প্রচারকারী প্রতিষ্ঠান।
এসমস্ত রাজনৈতিক নাটকের পেছনে কলকাঠি নেড়েছে ফিফা’র প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফান্তিনোর কাতারের সঙ্গে সম্পর্কে ভারসাম্য আনার পাশাপাশি সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করার প্রচেষ্টা। কিন্তু সমস্যা এখন বাড়তে বাড়তে অতলে চলে গেছে।
কাতারে বিশ্বকাপ আয়োজন নিয়ে ঘুষ তথা দুর্নীতির সম্পর্ক নিয়েও চলছে সমালচনা। সুইস এটর্নি জেনারেলের অফিস ২০২২ সালের বিশ্বকাপের আয়োজক বেছে নেওয়ার সময় উঠা দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করছে। আবার গত বছর বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালতে এর শুনানিও হয়েছে।
তবে সন্ত্রাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার কথার মতোই বিশ্বকাপের আয়োজক হওয়া নিয়ে ঊঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছে কাতার।
কাতারের সামনে আরও এক বড় চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। আর তা হলো, আয়োজনের সময় নিয়ে উঠা প্রশ্ন। কারণ ওই সময়ে স্পেন, জার্মানি এবং ইংল্যান্ডের মতো প্রধান ফুটবল লিগগুলোর আয়োজিত হওয়ার কথা। ফলে ‘শীতকালীন’ বিশ্বকাপ’ এই জনপ্রিয় লিগগুলোর আয়োজন পিছিয়ে দিতে হবে। আর তা হলে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি ক্ষতির সম্মুখিন হবে লিগগুলো। এই প্রশ্নের উত্তর এখনও অজানা।
কাতারের বিশ্বকাপ আয়োজনে সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ তাদের ফুটবল স্টেডিয়ামগুলো। এসব বিলাসবহুল স্টেডিয়াম নির্মাণকাজে প্রায় ২০ লাখ অভিবাসী শ্রমিক কাজ করছেন, যাদের কাজের পরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে মানবাধিকার সংস্থাগুলো।
সবমিলিয়ে কাতারকে এখন রাশিয়ার কাছ থেকে শিক্ষা নিতে হবে বলে মনে হচ্ছে। কারণ রাশিয়ায় বিশ্বকাপ আয়োজনের আগেও বহু সমালোচনা হয়েছে। কিন্তু সেই রাশিয়াই অন্যতম সেরা আসর উপহার দিয়েছে। যেহেতু রাশিয়া পেরেছে, এখন কাতারের কাছে প্রত্যাশা অনেক বেড়ে গেছে।
কাতারের সামনে আরও একটা চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। আসন্ন বিশ্বকাপে অ্যালকোহল নিয়ন্ত্রণ করা নিয়ে একটা সমস্যা হতে পারে। এই সমস্যা সমাধানে রাশিয়া বিশ্বকাপে ৩০ জন অফিশিয়াল কর্মকর্তা প্রেরণ করেছিল কাতারের ফুটবল ফেডারেশন। সেখানে তারা দেখে এসেছেন বিপুল পরিমাণ লাতিন সমর্থক যারা রাস্তা এবং বারে পার্টি করতে পছন্দ করে। এমন দৃশ্য দোহায় দেখতে পাওয়া প্রায় অসম্ভব
এখন পর্যন্ত কাতারের বিশ্বকাপ আয়োজন দেখে মনে হচ্ছে আগের সব আসরকে ছাড়িয়ে যাওয়ার জন্য সম্ভাব্য সব চেষ্টা করবে তারা। আগামিতেও এর ব্যতিক্রম হবে না এমনটাই প্রত্যাশা ফুটবলবিশ্বের।
বাংলাদেশ সময়: ০০১২ ঘণ্টা, আগস্ট ২৫, ২০১৮
এমএইচএম