ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

শুভ ইংরেজি নববর্ষ

নতুন বছর শুরু হোক স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসে

স্বাস্থ্য ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩, ২০১৩
নতুন বছর শুরু হোক স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসে

ঢাকা: শীতের ঝরা পাতার মত দেখতে দেখতে জীবন বৃক্ষ থেকে ঝড়ে গেলো আরও একটি বছর। রেখে গেলো সফলতা আর ব্যর্থতার হাজারও স্মৃতি।



নতুন বছরের শুরুতে ব্যর্থতার গ্লানি ঝেড়ে ফেলে সবকিছু নতুন করে শুরু করার প্রতিজ্ঞা করেন অনেকেই। জীবনের ছক নতুন করে সাজানোর পরিকল্পনাও উকি দেয় অনেকের মনে।

কিন্তু আসলেই কি আমরা পরিকল্পনা তৈরি করে, সে অনুযায়ী কাটাতে পারি বছরটা?
 
যেমন ধরুন না আমাদের স্বাস্থ্যের কথা। অথবা আমাদের প্রাত্যহিক খাদ্যাভ্যাসের কতটাই বা পরিকল্পনা অনুযায়ী আমরা বজায় রাখতে পারি।

নিজের প্রতি অবহেলার কারণে মাঝে মাঝেই অসুস্থ হয়ে পড়ি আমরা। প্রত্যেকবার বিছানায় পড়ার সময় নতুন করে শপথ করি, ‘স্বাস্থ্যের দিকে যত্ম রাখবো, খাদ্যাভ্যাস ঠিক রাখবো। ’ কিন্তু অসুস্থতা কেটে গেলেই, ওই যা সেই।

এভাবেই কেটে যাচ্ছে দিনগুলো, কিন্তু একই সঙ্গে নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি অবহেলার ঋণও জমছে একটু একটু করে। এ ঋণ কিন্তু ঠিকই আপনাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাবে, হয়তো আপনার শেষ বয়সে, বৃদ্ধকালে শারীরিক দুর্বলতার সময়ে।

তাই নতুন বছরে আসুন শপথ করি অন্তত নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি আমরা পুরোটা বছরই সচেতন থাকবো।

স্বাস্থ্যের প্রতি সচেতনতার প্রধান পূর্বশর্ত হচ্ছে খাদ্যাভ্যাসে সচেতনতা। একটু চেষ্টা করলেই কিন্তু সচেতন খ‍াদ্যাভ্যাসকে আমরা অভ্যেসে পরিণত করতে পারি।

প্রতিদিন কি খাচ্ছি না খাচ্ছি তার একটা রোজনামচা লিখে রাখলে কিন্তু দারুণ হয়। ব্যস্ততার কারণে প্রতিদিনই হয়তো হচ্ছে না। কিন্তু ক্ষতি নেই, দু’তিনদিন পরপর বা সপ্তাহে অন্তত একদিন বসুন না খাতা কলম নিয়ে। তালিকা করুন পুরোটা সপ্তাহে আপনি কি খেলেন।

অনেকেই সকালের নাস্তাকে মাঝে মাঝেই ছুটি দেন। আর অজুহাত দেন ব্যস্ততার। কিন্তু এ বদভ্যাসটি ত্যাগ করতে হবে। আসুন সংকল্প করি প্রতিদিনই নাস্তা করবো। ভারী কিছু খাওয়ার সময় সুযোগ না হলেও অন্তত কিছু না কিছু খাবোই। হ্যা, খাবারটি অবশ্যই হতে হবে পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যসম্মত। এ ব্যাপারে আপোষ করলে চলবে না।

তবে খাদ্যাভাস ঠিক রাখতে আসলে আমাদের প্রয়োজন ঠিকমতো খাওয়া দাওয়ার একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন। প্রতিদিন খুব বেশি আয়োজনের দরকার নেই। এই রুটি, সবজি, ডিম, দুধ, দই, ফল ইত্যাদি দিয়ে যদি প্রতিদিনের খাবারের একটি তালিকা তৈরি করতে পারি, তবেই হবে। এমনকি রেস্টুরেন্টে খেতে গেলেও যদিও এসবের ওপর দিয়ে পার হওয়া যায় তবে আরও ভালো। হোটেলে বসলেই ওয়েটারের মুখের দিকে তাকিয়ে ভারী ভারী খাবারের অর্ডার না দিলেও চলবে।

বেশি বেশি করে খাবো ফল ও সবজি। প্রতি বেলায় অন্তত একটা ফল আর সবজির একটা পদ খাবো। যে কোনো খাবারেই সবজি পুরবো। স্যুপে, সালাদ, নুডলসে সবজি খাবো।   নাস্তাও করবো স্বাস্থ্যকর খাবার দিয়ে। মৌসুমি ফল, একমুঠ বাদাম, এক কাপ দই দিয়েও নাস্তা সারা সম্ভব খুব সহজেই।

নতুন বছরে আর একটি প্রতিজ্ঞা করতে হবে। তা হলো ফাস্টফুড না খাওয়ার প্রতিজ্ঞা। আর যদি একান্তই খেতে হয় তবে খাবো কম ক্যালরির খাবার, সবজি ও গ্রিল আইটেম। সালাদ বা দইও খেতে পারি। আর ভাজা পোড়া তো একেবারেই খাবো না।

প্রতিজ্ঞা পুরোপুরি রাখা তো সম্ভব হবে না, তবে প্রত্যেকবার ফাস্টফুডের সামনে আসলে নিজের করা প্রতিজ্ঞাটি মনে করুন, দেখবেন ফাস্টফুড খাওয়ার ইচ্ছাটা দূর হচ্ছে ধীরে ধীরে।

পরিহার করতে হবে কাজের সময় বা কর্মক্ষেত্রে ঘন ঘন খাওয়ার অভ্যেসকে। যখন লাঞ্চ বা ডিনারের সময় হবে তখনই খাবার খেতে হবে, এবং অবশ্যই প্রয়োজন অনুযায়ী। কাজের সময় অমনোযোগী হয়ে খাবার খাওয়া, খাদ্যগ্রহণের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় আপনার অজান্তেই।

এছাড়া কম খাওয়ার অভ্যেস করতে হবে রাতের বেলা। রাতে কম খেতে হবে কারণ রাতে আপনার ক্যালরি খরচ হয় কম। এমনকি রেস্তোরায় খেতে হলেও কম খেতে হবে, পেট লাগিয়ে খাওয়া চলবে না। আর রাতের খাবারটি একটু তাড়াতাড়ি খেয়ে নিলেই ভালো। এতে আপনার হজম ভালো হবে।

অ‍ার, খাবার খান খিদে পেলেই। আসলে একটা কথা আছে, পেটের ক্ষুধা মেটে তো চোখের ক্ষুধা মেটে না। টিভি বা কম্পিউটারের সামনে বসে খাবো না। কারণ কাজের মধ্যে অমনোযোগিতার সঙ্গে খেলে খাবার গ্রহণের পরিমাণ বেড়ে যায় অনেক বেশি।

রেস্তোরায় বা দাওয়াতে গেলে অনেকে পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে যান, ‘আজ পেট ফাটিয়ে খাবো’। তবে স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে এ মনোভাব ত্যাগ করুন। দাওয়াতে গেলে খান লো ফ্যাট সমৃদ্ধ খাবার। তেল চর্বিওয়ালা খাবার পরিহার করুন। এসব ক্ষেত্রে সবজি ও সালাদ দিয়ে প্লেট ভরিয়ে নেওয়‍াই ভালো। এছাড়া মিষ্টি জাতীয় খাবার ও অন্যান্য উচ্চ ক্যালরির খাবার দুই এক লোকমা খেয়ে স্বাদ নিতে পারেন। কিন্তু ওসব খাবারের গুরুভোজন নয়।

আর সবশেষে অতিভোজনের প্রবণতা ত্যাগ করতে হবে। অনেক সময় পেট ভরে গেলেও মানসিক তৃপ্তির জন্য আমরা প্রয়োজনের থেকে বেশি খেয়ে ফেলি। এ প্রবণতা ত্যাগ করুন, খাওয়ার সময় হয়তো আক্ষেপ হবে, কিন্তু ঘণ্টাখানেক পর নিজেকেই নিজে ধন্যবাদ দেবেন। অতিভোজনের পরবর্তী অস্বস্তিকর অবস্থাটা আপনাকে আর পীড়া দেবে না।

অতিভোজনের প্রবণতার বিরুদ্ধে মত দিয়েছেন গুনীজনরাও। এছাড়া ধর্মগ্রন্থগুলোতেও যতটুকু খিদে ততটুকুই খাওয়ার কথাই বল‍া হয়েছে। তাই অতিভোজন নয়। খাবার খাবো ছোটো প্লেটে। খাবার প্লেটে তুলে নেবো ছোট চামচ দিয়ে।

দ্রুত খাওয়ার প্রবণতাও ত্যাগ করতে হবে। খাবার খেতে হবে ধীরে ধীরে, সময় লাগিয়ে, তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করে। দেখবেন এতে খাবার খাচ্ছেন কম, আবার তৃপ্তিও পাচ্ছেন যথার্থ।

পরিশেষে ভেজাল আর ফরমালিনের যুগে নিজের স্বার্থেই সবার স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের প্রতি মনোযোগী হওয়া উচিত। একবারে হয়তো আপনি খাদ্যাভ্যাসে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে পারবেন না। তবে ধীরে ধীরে চেষ্টা করুন। একটু একটু করে পরিকল্পনা মাফিক এগিয়ে যান, দেখবেন বছর শেষে ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথম দিন আপনি অনেক ভালো, অনেক সফল হিসেবে নিজেকে অনুভব করবেন।

যদি এখন লেখাটি পড়ে থাকেন তখন ওই সময় না হয় একটা ধন্যবাদ দিলেনই আমাদের। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন, আপনার পরিবারের সুস্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখুন।

আপনাকে বাংলানিউজ স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে শুভ ইংরেজি নববর্ষ।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৩, ২০১৩
সম্পাদনা: রাইসুল ইসলাম, নিউজরুম এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।