ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

স্বাস্থ্য

প্রকাশ্যে নয়, পাবলিক প্লেস-পরিবহনে ধূমপান নিষিদ্ধ

জাকিয়া আহমেদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৪৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০১৩
প্রকাশ্যে নয়, পাবলিক প্লেস-পরিবহনে ধূমপান নিষিদ্ধ

ঢাকা: পরোক্ষ ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার নিরুৎসাহিত এবং ধূমপানমুক্ত স্থান নিশ্চিতকরণের জন্য ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন)’ আইনে পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহন বলতে কি বোঝানো হয় সেটার বিশদ বিবরণ দেওয়া হয়েছে।

ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫ এ পাবলিক প্লেসের আওতা কম থাকায় ২০১৩-এর সংশোধিত আইনে এর পরিধি অনেক বিস্তৃত করা হয়েছে বলে মত দিয়েছেন তামাক নিয়ন্ত্রণে কাজ করা বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষ।



একই সঙ্গে এ আইনে পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে ধূমপানমুক্ত সাইন স্থাপন ও নোটিশ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এ আইন অমান্য করলে বিধান রাখা হয়েছে ১০০০ টাকা জরিমানার।

প্রকাশ্যে ধূমপান
বাংলাদেশে প্রচলিত আইন অনুযায়ী শুধু পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহন হিসেবে তালিকাভুক্ত স্থানে ধূমপান নিষিদ্ধ। তবে আইনে নির্ধারিত স্থান ব্যতীত অন্য কোনো উন্মুক্ত স্থান কিংবা প্রকাশ্যে ধূমপান নিষিদ্ধ নয়। অথচ তামাক কোম্পানিগুলো নিজেরা এবং তাদের সুবিধাভোগীদের মাধ্যমে ‘প্রকাশ্যে ধূমপান নিষিদ্ধ’ বলে প্রচার করে প্রচলিত আইনকে হেয় করে, যাতে পাবলিক প্লেস ও পরিবহন ধূমপানমুক্ত করার উদ্দেশ্য সফল হতে না পারে।

পাবলিক প্লেস এবং পাবলিক পরিবহন
ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) আইন ২০১৩-এ পাবলিক প্লেস বলতে বোঝানো হয়েছে- শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি অফিস, আধা সরকারি অফিস, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস, গ্রন্থাগার, লিফট, আচ্ছাদিত কর্মক্ষেত্র, হাসপাতাল ও ক্লিনিক  ভবন, আদালত ভবন, বিমানবন্দর ভবন, রেলওয়ে স্টেশন, বাস টার্মিনাল, প্রেক্ষাগৃহ, প্রদর্শনী কেন্দ্র, থিয়েটার হল, বিপণী ভবন, চারদিকে দেয়াল দিয়ে ঘেরা রেস্টুরেন্ট, পাবলিক টয়লেট, শিশুপার্ক, মেলা বা যাত্রী ছাউনি, সম্মিলিতভাবে জণসাধারণের জন্য ব্যবহৃত সরকার বা  স্থানীয় সরকার কিংবা জনসাধারণের তৈরি করা কোনো স্থান এবং সাধারণ বা বিশেষ আদেশ দিয়ে সব সময় ঘোষিত যে কোনো স্থান।

অপরদিকে, এ আইনে পাবলিক পরিবহন বলতে বোঝানো হয়েছে- মোটর গাড়ি, বাস, রেলগাড়ি, ট্রাম, জাহাজ, লঞ্চ, যান্ত্রিক সকল প্রকার জন-যানবাহন, উড়োজাহাজ কিংবা সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দিয়ে নির্দিষ্ট করা বা ঘোষিত অন্য যে কোনো যানকে বোঝানো হয়েছে।

এ আইনে পাবলিক প্লেস ও পরিবহনের মালিককে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের উন্মুক্ত স্থানে ধূমপানমুক্ত স্থানের সতর্কীকরণ নোটিশ (ধূমপান হইতে বিরত থাকুন, ইহা শাস্তিযোগ্য অপরাধ) বা ধূমপানমুক্ত সাইনবোর্ড স্থাপনের নির্দেশ দেওয়া আছে।

সতর্কীকরণ না রাখার শাস্তি
পাবলিক প্লেস বা পাবলিক পরিবহনের মালিক, তত্ত্বাবধায়ক বা নিয়ন্ত্রণকারী ব্যক্তি বা ব্যবস্থাপক আইনের বিধান লঙ্ঘণ করে ধূমপানমুক্ত স্থানের সতর্কীকরণ ব্যবস্থা না রাখলে তিনি অনধিক এক হাজার টাকা অর্থ দণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং একই কাজ বারবার করলে পর্যায়ক্রমিকভাবে ওই দণ্ডের দ্বিগুণ হারে দণ্ডনীয় হবেন।

অপরদিকে, বিভিন্ন অফিস আদালতে অভ্যন্তরীণ স্থানে ডেজিগনেটেড স্মোকিং এরিয়া থাকায় কর্মচারী, কর্মকর্তারা পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছেন। শুধু শতভাগ ধূমপানমুক্ত স্থান নিশ্চিতকরণের মাধ্যমেই পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।

ধূমপানমুক্ত স্থানে ধূমপানে শাস্তি
২০০৫ সালে প্রথম ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইনে ধূমপানমুক্ত স্থানে ধূমপানের শাস্তি স্বরূপ ৫০ টাকা জরিমানা করার বিধান রাখা হলেও বর্তমান সংশোধিত আইনে জরিমানার পরিমাণ ৩০০ টাকা করা হয়েছে। উক্ত ব্যক্তি দ্বিতীয় কিংবা বারবার একই অপরাধ করলে তিনি পর্যায়ক্রমিকভাবে ওই দণ্ডের দ্বিগুণ হারে দণ্ডিত হবেন।

পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে ধূমপানজনিত বায়ু দূষণ
পরোক্ষ ধূমপানে ধূমপায়ী ও অধূমপায়ী উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হন। সিগারেটের ধোঁয়ায় ৪০০০ এর বেশি রাসায়নিক পদার্থ থাকে। যার মধ্যে ২৫০টিরও বেশি বিষাক্ত ও ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদান রয়েছে, যা থেকে ফুসফুসের ক্যান্সার, হৃদরোগ এবং শ্বাসনালীর রোগসহ নানা রোগের জন্ম দেয়।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে পরিচালিত গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোবাক্যো র্সাভে (গ্যাটস্)- ২০০৯ অনুসারে বাংলাদেশে ধূমপায়ীর বর্তমান সংখ্যা ২ কোটি ১৯ লাখ। তবে পুরুষের ধূমপানের ফলে নারীদের পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হওয়ার হার অনেক বেশি। ৩০ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক নারী র্কমস্থলে এবং ২১ শতাংশ নারী জনসমাগমস্থলে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছেন। অর্থাৎ, ধূমপান না করেও পরোক্ষ ধূমপানের শিকার বাংলাদেশের প্রায় ১ কোটি নারী। সুতরাং নারী, শিশুসহ সকল জনসাধারণকে পরোক্ষ ধূমপান থেকে রক্ষা করতে শতভাগ ধূমপানমুক্ত স্থানের বিকল্প নেই।

জনগণকে রক্ষা এবং ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কনট্রোল (এফসিটিসি) বিধান যথাযথ বাস্তবায়ন করার জন্য বাংলাদেশের বর্তমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধিত ধূমপান মুক্ত এলাকার বিধান নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

অপরদিকে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এফসিটিসিতে বাংলাদেশ ২০০৩ সালে স্বাক্ষর করেছে, যেখানে শতভাগ ধূমপানমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করার উপর জোর দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৩৪৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০১৩
জেএ/এএ/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।