ঢাকা: আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় এমন অনেক খাদ্যই আমরা গ্রহণ করি, যা হয়ত আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। মটরশুটি, গোল আলু, শুকনো ফল, বাদাম, মাশরুম, শুটকিসহ এমন অনেক খাবারই আছে যেগুলো আমরা উপকারী মনে করি।
এসব খাদ্য আদতে বিষাক্ত। এসব বিষাক্ত খাদ্য গ্রহণে শারীরিক দুর্বলতা, বমি, পেটের ব্যথাসহ আরও নানা উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
আসুন জেনে নেই আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় এমন কিছু খাবারের নাম যা উপকারের পরিবর্তে অপকারই ঘটায় বেশি।
১.লাল মটরশুটি: স্বাস্থ্যসম্মত সবজি হিসেবে মটরশুটির খ্যাতি রয়েছে। কিন্তু লাল মটরশুটিতে রয়েছে বিষাক্ত পদার্থ। আর এ বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে এ ধরনের মটরশুটিকে ১০ মিনিটেরও বেশি সময় ধরে সেদ্ধ করতে হয়। সেদ্ধ করা ছাড়া রান্না করলে এটি দুই থেকে তিনগুণ বেশি ক্ষতি করতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, তাপ ক্ষতিকর সক্রিয় পদার্থকে ধ্বংস করে। ফলে তা আমাদের শরীরের কোষে আক্রমণ করতে পারে না। আর তাই এ মটরশুটি রান্নার আগে অবশ্যই সেদ্ধ করে নিতে হবে।
২.সুগন্ধি ফল: এক টুকরো ভালো ও সুগন্ধি মশলা শুকনো খাবারে মেশালে তেমন কোনো ক্ষতি হয় না কিংবা এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায় না। কিন্তু বেশি পরিমাণে খেলে মাথা ব্যাথা, বমি বমি ভাব, মাথা ঘোরা এমন কি হ্যালুসিনেশনের মতো নানা ধরনের শারীরিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে!
বাদামে মিরিসটিসিন নামে এক ধরনের সাইকোঅ্যাক্টিভ উপাদান রয়েছে, যা আমাদের জন্য ক্ষতিকর।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, রোজম্যারি ও ওরেগানোর মতো অন্যান্য মশলা বেশি পরিমাণে খেলে আমরা আরো বেশি সক্রিয় হবো।
৩. ব্রাজিলীয় বাদাম: যদিও এ ধরনের বাদামের প্রচলন আমাদের দেশে খুব একটা নেই তবুও জেনে রাখা ভালো যে এ ধরনের বাদাম সামান্য পরিমাণে খেতে হবে। এটি হচ্ছে ব্রাজিলীয় বাদাম। যা দেখতে অর্ধ-চন্দ্রাকৃতি।
এ ধরনের বাদামে রয়েছে সেলেনিয়াম, যা আমাদের শরীরকে প্রচুর পরিমাণে বিষাক্ত করতে পারে। দিনে ৩টির বেশি বাদাম না খেলে সেলেনিয়াম বিষে আক্রান্ত হওয়া এড়ানো যাবে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, বাদাম যখন মানব শরীরে প্রবেশ করে তখন তা ঝুঁকিপূর্ণ হয় এবং তা ধীরে ধীরে ভয়াবহ আকার ধারণ করে। বাদাম হার্টের জন্য উপকারী হলেও তাতে যে প্রচুর পরিমাণে রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে তা অনেক সময় মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে।
৪. এপ্রিকট, বরই এবং চেরি: চিন্তা করার কিছু নেই। এই মজাদার ফলগুলোতে কোনো বিষাক্ত পদার্থ নেই। বিষাক্ত পদার্থ রয়েছে এদের বীজে। যা সায়ানাইড পরিবারের গোত্রভূক্ত।
কখনও কখনও এগুলো দিয়ে তৈরি জ্যাম, স্প্রেড বা দুধ জাতীয় পণ্যসহ বিভিন্ন খাবারের প্যাকেটের গায়ে এসবের বীজ ফাটানো, গেলা বা চাবানো যাবে না বলে সতর্কীকরণ লেবেল সাঁটা থাকে।
বিশষজ্ঞরা বলেন, বীজের উপাদানগুলো সনাক্ত করা গুরুত্বপূর্ণ। সেই সাথে সেই সুনির্দিষ্ট ফল কম পরিমাণে খেতে হবে।
৫. গোল আলু: প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় আলু থাকে না এমন লোক খুব কমই দেখা যায়। সহজলভ্যতা, শর্করা, আর নানা ধরনের খাদ্যদ্রব্য প্রস্তত করা যায় বিধায় বিশ্বব্যাপী আলুর চাহিদা ব্যাপক। তবে সবুজ দাগযুক্ত আলু শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এ ধরনের আলু অর্থনৈতিক বিবেচনায় নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই উত্তোলন করা হয়। এতে সোলানাইন নামক বিষাক্ত পদার্থ থাকে যা রান্না এবং পোড়ানোর পরও দূর হয় না।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, আলুর সবুজ অংশ ফেলে দেওয়া সবসময় নিরাপদ নয়। বরং এই ধরনের আলু ব্যবহার না করাই উত্তম।
৬. শুকনো ফল: আমাদের অনেকেরই শুকনো ফলের প্রতি এক ধরনের আসক্তি দেখা যায়। ধুয়ে বা না ধুয়ে অনেকসময় আমরা এসব ফল মুঠো ভরে খেয়ে ফেলি। কিন্তু এসব ফল যত কম খাওয়া যায় আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ততটাই মঙ্গল। বাজারে বিক্রি হওয়া এসব শুকনো ফলের বেশিরভাগ সালফার এবং পটাসিয়াম জাতীয় দ্রব্য ব্যবহার করে শিল্প কারখানায় শুকানো হয়। যা হজমে ব্যাঘাত ঘটায়।
আর তাই সুষ্ঠু হজম ক্রিয়ার জন্য শুকনো ফল বেশি পরিমাণে না খাওয়াই উত্তম।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রচুর পরিমাণ সালফারের ব্যবহার হজমের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়া এটা পাকস্থলির সমস্যাও সৃষ্টি করতে পারে।
যে সব শস্য সঠিকভাবে সংরক্ষিত হয়নি, সেগুলোতে মাইক্রো-টক্সিন নামে এক ধরনের ছত্রাক দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে যা আমাদের জন্য বিপজ্জনক।
বাংলাদেশ সময়: ০০১১ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৯, ২০১৪