ঢাকা: ঘুমের সমস্যা কাটিয়ে প্রতিদিনকার জীবন স্বাভাবিক এবং রোগহীন করার জন্য ঢাকায় ৩০টি স্লিপিং ল্যাব চালু করতে যাচ্ছে ইন্ডিয়ার কোম্পানি ফিলিপস হেলথ কেয়ার।
মঙ্গলবার রাজধানীর রুপসী বাংলা হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বৈশ্বিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ফিলিপস ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ৫টি ঘুম ল্যাব প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করেছে। এর মধ্যে রয়েছে জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ল্যাবএইড হাসপাতাল ও স্কয়ার হাসপাতাল।
এছাড়াও পিলিপসের আগামী ৫বছরে বাংলাদেশে কমপক্ষে ৩০টি ঘুম ল্যাব প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা রয়েছে। এরমধ্যে ২০১৪ সালেই ১০টি ঘুম ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা হবে। ফিলিপস উপমহাদেশে ২০০ ঘুম ল্যাব প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করেছে। এই ঘুম ল্যাবগুলো ডাক্তারদের সঠিক রোগ নির্ণয়ে সহায়তা করে।
জীবনে অব্যাহত দূষণের কারণে মানুষের ঘুমের সমস্যা হচ্ছে জানিয়ে বলা হয়, একই সঙ্গে ঘুমের সমস্যা থেকে তৈরি হচ্ছে হৃদরোগ, উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিক, শ্বাসকষ্ট ও মানসিক চাপের মত সমস্যা। এ সব থেকে মুক্ত হতে সহায়তা করতেই এখানে মিলবে চিকিৎসাও।
গত ৪-৫ বছর ধরে বাংলাদেশে ঘুম সমস্যা আক্রান্তদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়তে থাকায় ঘুম সমস্যার স্বাস্থ্য ঝুঁকি বিষয়ে সচেতনতা তৈরির আহবান জানিয়েছে ফিলিপস ইন্ডিয়া। বাংলাদেশের মোট জনগোষ্ঠী একটা বড় অংশ ঘুম সমস্যায় আক্রান্ত বলেও সেখানে জানানো হয়।
দেশের খ্যাতিমান বক্ষব্যাধি, শ্বাস-প্রশ্বাস ও ঘুমের সমস্যা নিয়ে কাজ করা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা তাদের অভিজ্ঞতা থেকে এ সব সমস্যার কথা তুলে ধরেন।
এতে জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী হোসেন, ল্যাবএইড হাসপাতালের ড. মোহাম্মদ জাকির হোসেন সরকার এবং স্কয়ার হাসপাতালের ড. মোহাম্মদ মর্তুজা খায়ের ঘুম নিয়ে মানুষের সমস্যার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।
ফিলিপস হেলথ কেয়ার সাউথ এশিয়ার হোম হেলথ কেয়ারের সিনিয়র পরিচালক বিদুর দৌল বলেন, ঘুমের সমস্যা সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করতে চাই। এটি একটি মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা। এর সাথে কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ, ডায়াবেটিস, স্ট্রোক প্রভৃতির গভীর সম্পর্ক রয়েছে।
বিষয়টি সম্পর্কে সাধারণ মানুষের অসচেতনতার উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ভারতীয় উপমহাদেশে যেখানে নাক ডাকাকে ঐতিহ্যগতভাবে তৃপ্তিদায়ক ঘুমের সহযোগী হিসেবে ভাবা হয়। সেখানে এটি ঘুম বিষয়ক একটি রোগের লক্ষণ সে বিষয়ে মানুষকে সচেতন করাটাই চ্যালেঞ্জিং। তবে, সুখবর হচ্ছে ডাক্তারের সঙ্গে প্রাথমিক পরামর্শের পরই এই সমস্যাটি চিহ্নিত করা যায়।
জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের রেসপেরেটরি মেডিসিন অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী হোসেন বলেন, ৫ থেকে ৯ শতাংশ শহুরে নাগরিক নাক ডাকা, দিনের বেলায় ঘুম ও স্থুলতা সমস্যায় ভুগছে। কিন্তু, সচেতনতার অভাবে সেটি এখনো চিহ্নিত করা হয় না। এটি শুধু জীবন মানকেই প্রভাবিত করে না, দীর্ঘ মেয়াদে এটি রোগীর সার্বিক স্বাস্থ্যের অবস্থাকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে।
ল্যাবএইড হাসপাতালের পালমোনোলজি ও স্লিপিং মেডিসিন বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ জাকির হোসেন সরকার বলেন, ঘুম সমস্যা ডায়াবেটিসের মতোই আমাদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, এমনকি এটি হঠাৎ মৃত্যুরও কারণ হতে পারে। বাংলাদেশে, শহুরে নাগরিকদের ৫-১০ শতাংশ ঘুম সমস্যায় ভোগে, আরো বড় সমস্যার কথা হচ্ছে, সাধারণ মানুষ এখনো এই সমস্যাটি সম্পর্কে সচেতন নয়। এই কারণে অধিকাংশ রোগীরই রোগ চিহ্নিত হয়নি।
স্কয়ার হাসপাতালের পালমোনোলজি ও স্লিপিং মেডিসিনের কনসালটেন্ট ড. মর্তুজা খায়ের বলেন, ঘুম সমস্যা একটি লাইফ স্টাইল রোগ, যা অনেক সময় ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের সাথে সহাবস্থান করে। বাংলাদেশের অধিকাংশ ডাক্তার ও সাধারণ মানুষ এই রোগ সম্পর্কে সচেতন না হওয়ায় রোগটি নির্ণয় করা যায়নি।
যাতে করে বিশাল জনগোষ্ঠী ঘুম সমস্যা সম্পর্কে সচেতন হয় ও এই রোগের চিকিৎসা গ্রহণ করে সেজন্য অবকাঠামো স্থাপন ও সচেতনতা কার্যক্রমে আমাদের সরকারের সহযোগিতা বাড়ানো উচিত।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৮ ঘণ্টা এপ্রিল ২২,২০১৪