ঢাকা: স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে সরকার ও দাতা সংস্থার অর্থায়ন ক্রমাগতহারে কমছে। অথচ এ খাতে বেড়ে যাচ্ছে ব্যক্তিগত খরচ।
রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে হেলথ নেটওয়ার্ক অব বাংলাদেশ আয়োজিত ‘স্বাস্থ্যখাতে বাজেট পর্যালোচনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে উপস্থাপিত প্রবন্ধে এসব তথ্য জানানো হয়।
বৈঠকে স্বাস্থ্য আন্দোলন জাতীয় কমিটির সভাপতি ডা. রশিদ-ই-মাহবুবের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থ-প্রতিমন্ত্রী আব্দুল মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ড. শামসুল আলম।
বৈঠকের শুরুতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পাবলিক হেলথ বিশেষজ্ঞ ডা. আবদুস সবুর।
প্রবন্ধে গত ৫ বছরের জাতীয় বাজেটের চিত্র তুলে ধরে বলা হয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে ক্রমাগতভাবে বাজেটের পরিমাণ কমে যাচ্ছে।
২০০৯-১০ অর্থবছরে বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিলো ৬.৩৩%, ২০১০-১১তে এসে তা হয় ৬.১৯%, ২০১১-১২তে ৫.৬৪%, ২০১২-১৩তে ৫.৫১% এবং সর্বশেষ ২০১৩-১৪ তে বরাদ্দ ছিলো ৪.২৭%।
প্রবন্ধে গত এক দশকের স্বাস্থ্যখাতে সর্বমোট খরচের চিত্র তুলে ধরে বলা হয় সরকারের খরচ কমে যাওয়ার কারণে সাধারণ মানুষের ব্যক্তিগত খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখানে বলা হয় ১৯৯৭ সালে বাজেটে সরকারের খরচ ছিলো ৩৬.৫% আর ২০০৭ সালে তা কমে দাঁড়ায় ২৫.৮%।
পক্ষান্তরে বেড়ে গেছে ব্যক্তিগত খরচের পরিমাণ। ১৯৯৭ সালে ব্যক্তিগত খরচ ছিলো ৫৬.৯%, ২০০৭ সালে তা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৬৪.৭%। ব্যক্তিগতভাবে খরচ মেটানোর গড় হার বিশ্বে ৩২% হলেও বাংলাদেশে তা প্রায় ৬৫%।
প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে স্বাস্থ্য খাতে বছরে মাথাপিছু ৫৪ মার্কিন ডলার ব্যয় করা দরকার। কিন্তু বাংলাদেশে গত ২০১১ সালে ব্যয় হয়েছে ২৭ ডলার। অথচ প্রতিবেশি দেশ ভারতে তা ছিলো ৫৯, নেপালে ৩৩, শ্রীলংকায় ৯৭, ইন্দোনেশিয়ায় ৯৫, ভিয়েতনাম ৯৬ আর পাকিস্থান ৩০ ডলার।
এদিকে জাতীয় বাজেটের আকার বৃদ্ধি পেলেও স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাজেট বৃদ্ধি পাচ্ছে না বলে প্রবন্ধে জানানো হয়। এতে দেখা যায়, ২০১২-১৩ অর্থ বছরের তুলনায় ২০১৩-১৪ অর্থবছরে জাতীয় বাজেটের আকার ৩.৩৯% বৃদ্ধি পেলেও স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ক্ষেত্রে এ বৃদ্ধি মাত্র ১.৭৪%।
বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার পরামর্শও দেশে প্রয়োগ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান প্রবন্ধকার।
তিনি জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার পরামর্শ মোতাবেক স্বাস্থ্য খাতের বাজেট হতে হবে জাতীয় বাজেটের ন্যূনতম শতকরা ১৫ ভাগ। কিন্তু আমাদের দেশে বাজেটে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাজেট কমলেও অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য খাতের জন্য উল্লেখযোগ্য বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে অর্থ প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান দাবি করেন, গ্রামে স্বাস্থ্য সেবার মান আরও বাড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে।
তিনি বলেন, গ্রামে চিকিৎসা সেবা বাড়ানোর জন্য আমরা চেষ্টা করে যাবো। স্বাস্থ্যখাতে সহজ করে বাজেট প্রণয়নের চেষ্টা চলছে।
অনুষ্ঠানে সবশেষে বলা হয়, বাংলাদেশে স্বাস্থ্যখাতে অযোগ্যতার অন্যতম নমুনা হচ্ছে ওষুধের দোকানের সাথে স্বল্প শিক্ষিত লোকের যোগসাজসে গড়ে ওঠা চিকিৎসা ব্যবস্থা। অনেক সময় ক্ষতিকর ওষুধ বিক্রি হয় চিকিৎসা ব্যবস্থাপত্র ছাড়া। একইভাবে কার্যকর জেনেরিক ওষুধ থাকা সত্ত্বেও প্রায়ই বিক্রি হচ্ছে দামি ব্রান্ডের ওষুধ।
স্বাস্থ্য খাতে হাসপাতালে খরচের পরিমাণ বাড়ছে আর জনস্বাস্থ্য কর্মসূচি খাতে কমছে বলে জানানো হয় গোল টেবিল বৈঠকে। পরিসংখ্যানে উল্লেখ করা হয়, ১৯৯৭ সালে হাসপাতালে খরচের পরিমাণ ছিল ১৭.৯% কিন্তু ২০০৭ সালে বেড়ে হয়েছে ২৭.৩%। জনস্বাস্থ্য কর্মসূচিতে ১৯৯৭ সালে খরচ ছিল ৮.৫%, আর ২০০৭ সালে কমে হয়েছে ১.৩%।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী প্রতিটি ইউনিয়নের হেলথ সেন্টারে চিকিৎসকদের থাকার জন্য ৫শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প হাতে নেয়ার প্রস্তাবনা করেন। এ সময় তিনি, চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণের তাগিদ দেন।
প্রয়োজনে দরিদ্র জনগোষ্ঠীদের জন্য আলাদা একটি বিমার ব্যবস্থার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
বৈঠকের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন আয়োজক সংগঠনের সদস্য ইয়াসমিন আহমেদ।
বাংলাদেশ সময়: ২০০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০১৪