ঢাকা: চিকিৎসক নির্যাতনের প্রতিবাদে আগামী ১৪ মে সারাদেশে দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত এক ঘণ্টা কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দিয়েছে চিকিৎসকদের সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ)।
সোমবার দুপুরে রাজধানীর তোপখানা রোডের বিএমএ ভবনের সভাকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন সংগঠনের মহাসচিব ডা. এম ইকবাল আর্সলান।
সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিএমএ’র পক্ষ থেকে ১৪ মে এক ঘণ্টার কর্মবিরতিসহ চার দফা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। কর্মসূচিগুলো হলো- ১৪ মে দেশের সব চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠানে কালোব্যাজ ধারণ, দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত রাজধানীর শাহবাগ চত্বরে মানববন্ধন এবং ১৫ মে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের প্রাইভেট চেম্বারে বিকেল ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন।
সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, বিএমএ’র কর্মসূচি ঘোষণার মাধ্যমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেবেন। যদি তারা তা না করে আরও বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি করেন তাহলে বিএমএ তাদের সঙ্গে থাকবে না। এছাড়া, যারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে বিএমএ তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেবে।
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে বিএমএ মহাসচিব ইকবাল আর্সলান বলেন, একটি গোষ্ঠীর ইন্ধনে চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সম্প্রতি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে। গোষ্ঠীটি পরিকল্পিতভাবে এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে।
গত ছয় মাসে পরিকল্পিতভাবেই চিকিৎসকদের ওপর ২২টি হামলা ও মামলা করা হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, অনেক ক্ষেত্রে এসব হামলা ও মামলার সঙ্গে রোগীর আত্মীয়-স্বজনের কোনো সম্পর্ক নেই। তৃতীয় কোনো পক্ষ হামলা অথবা মামলা করছে।
কর্মসূচির বিষয়ে বিএমএ সভাপতি ডা. মাহমদ হাসান বলেন, চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া এসব ঘটনা যেন সংক্রমণ ব্যাধির মতো সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। পরিস্থিতি যে দিকে যাচ্ছে তাতে চিকিৎসকদের পক্ষে কাজ করা কঠিন হয়ে পড়ছে। তাই চিকিৎসাখাতে সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে শান্ত কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। কর্মসূচির মাধ্যমে চিকিৎসার পরিবেশ ব্যহত না করে প্রতিবাদ করা হবে।
এক প্রশ্নের উত্তরে বিএমএ মহাসচিব বলেন, চিকিৎসা খাতের পরিস্থিতির জন্য ইন্টার্ন চিকিৎসকরাও কিছুটা দায়ী। তবে তাদের ঢালাওভাবে দায়ী করা ঠিক হচ্ছে না।
তিনি আরো বলেন, আমরা চিকিৎসকদের ভোটে নির্বাচিত। আমাদের তাদের পাশে দাঁড়াতেই হবে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০১১ সালে সরকারি হাসপাতালগুলোর বহির্বিভাগে ১১ কোটি ২৫ লাখ রোগী সেবা নিয়েছেন। যার শতকরা ৮৪ ভাগই উপজেলা ও নিম্নপর্যায়ের। আন্তঃবিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন ৪৩ লাখ ২৪ হাজার জন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয, ঢাকা মেডিকেল কলেজের বহির্বিভাগে প্রতি বছর আড়াই লাখ মানুষ সেবা নেন। প্রতিদিন বিনামূল্যে ৯০টির বেশি অপারেশন হয়। এক হাজার ৭০০ শয্যার হাসপাতালে রোগী থাকে তিন হাজারের বেশি। আর রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫৫০ শয্যার বিপরীতে রোগী থাকে এক হাজার ৪০০ জনেরও বেশি। ২০১৩ সালে হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নিয়েছে এক লাখ ৯১ হাজার ৯৫৬ জন। আর অপারেশন করা হয়েছে ১৫ হাজার রোগীর।
কর্মসূচি ঘোষণার সময় সংবাদ সম্মেলনে বিএমএ’র সহ-সভাপতি অধ্যাপক কামরুল হাসান খান, যুগ্ম-মহাসচিব এমএ আজিজসহ বিএমএ’র নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
** ঢামেক বহির্বিভাগ টিকিট কাউন্টারে তালা, দুর্ভোগে রোগীরা
বাংলাদেশ সময়: ১২৩৬ ঘণ্টা, মে ১২, ২০১৪