ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

অ্যাপোলো হাসপাতালে

অ্যাপোলো হাসপাতালে

নঈম নিজাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪৪ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০১৬
অ্যাপোলো হাসপাতালে

মঙ্গলবার, সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিট। বাংলাদেশ প্রতিদিন অফিসে কর্মব্যস্ত সময়।

পরের দিনের কাগজ সাজানো চলছে। ফাঁকে ফাঁকে টিভি চ্যানেল নিউজ টোয়েন্টিফোরের কাজগুলো পর্যবেক্ষণ করছি। হঠাৎ অনুভব করলাম বুকের বাম পাশে তীব্র ব্যথা।

দুই দিন ধরে বুকটা ভারী ভারী লাগছে। ফোন করলাম অধ্যাপক ডা. রাকিবুল ইসলাম লিটুকে। হার্ট বিশেষজ্ঞ। তাকে জানালাম সবকিছু। পরামর্শ দিলেন এখনই পাশের কোনো হাসপাতালে যেতে। সঙ্গে সঙ্গে অফিস সহকারী ছেলেটিকে নিয়ে গেলাম অ্যাপোলোতে। সবচেয়ে কাছের হাসপাতাল।

আমার পেছনের গাড়িতে প্রশাসন বিভাগের একজন কর্মকর্তাও হাসপাতালে এলেন। ফোন করলাম, আমার স্ত্রী ফরিদাকে। জরুরি বিভাগে প্রবেশ করতেই একজন বললেন, ‘কি চান?’ কণ্ঠস্বরে কাঠিন্য। বললাম, ‘শরীর খারাপ লাগছে। একটু দেখুন। ’ শুরু হলো চিকিৎসা প্রক্রিয়া। পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রথমেই তারা জানালেন, উচ্চ রক্তচাপ। ব্লাড প্রেসার অনেক। নিচেরটা ৯০, উপরেরটা ১৫০। চিন্তায় পড়ে গেলাম। এরই মধ্যে কঠিন চেহারার মোটাতাজা এক যুবক ছুটে এলেন। বললেন, ‘আপনার চিকিৎসা শুরু হয়েছে। টাকা খরচ হবে। ’ বিস্মিত হলাম।

কথাটা আমার সঙ্গের লোকজনকে বললে পারতেন। বিনয়ের সঙ্গে আমার পরিচয় দিলাম। বললাম, ‘সমস্যা নেই। টাকার ক্যাশ কার্ড সব আছে। ’ আমার উত্তরে তার মন গলল না। কথা বাড়ালাম না। শুধু বললাম, ‘বাইরে আমার লোক আছে। বললে আগাম দেবে। আমার অফিসও পাশে। ’ এরই মধ্যে ইসিজি করা হলো। না ভয় নেই আপাতত। তবুও নিশ্চিত হওয়ার জন্য রক্ত পরীক্ষা করা হলো। ইঞ্জেকশন দিলেন। ওষুধ খেলাম। ঘণ্টা দুয়েক হাসপাতালের বেডে থাকলাম।

এরই মধ্যে ফরিদা এলেন হাসপাতালে। কর্তব্যরত চিকিৎসক জানালেন, আজ রাতটা থাকলে ভালো। কোনো ঝুঁকি থাকে না। বললাম, ‘বাসা বেশি দূরে নয়। রাতে সাবধানে থাকব। খারাপ লাগলে চলে আসব। ’ তারা বললেন, গেলে আপনার জিম্মায় যেতে হবে। একটি কাগজও আনলেন। তাতে ফরিদা ইয়াসমিন সই করলেন। অনেক দিন আগে সিঙ্গাপুরে একজন হার্টের ডাক্তারকে দেখিয়েছিলাম। মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালের সেই ডাক্তারের নাম ফিলিপকো। আমাকে দেখেই তিনি গল্প জুড়ে দিলেন। গল্পে গল্পে আমার শরীরের অবস্থার খোঁজ নিলেন। মনে হলো, কতদিনের চেনা! দীর্ঘক্ষণ দেখলেন। বিদায়ের সময় এগিয়ে দিলেন গেট পর্যন্ত।

থাইল্যান্ডেও ডাক্তার দেখানোর অভিজ্ঞতা একই। সারা দুনিয়ায় হাসপাতাল মানে মানুষের নিশ্চিত চিকিৎসা। শুধু আমাদের দেশে আগে টাকা ফেল, তারপর অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা। হাসপাতালের বেডে বসে চিন্তা হলো, আমার পর্যায়ের রোগীর টাকা নিয়ে চিন্তা করলে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে! কোনো কিছু ভাবতে পারি না।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কিছু দিন আগে বলেছেন, দেশে চিকিৎসা করাবেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বিনীতভাবে বলছি, একদিন ছদ্মবেশে আপনার বাড়ির পাশের জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট, সোহরাওয়ার্দী আর পঙ্গু হাসপাতালের জরুরি বিভাগটা দেখে আসুন। খুব ভোরে যেতে পারেন। অথবা যে কোনো সময়ে। অমানবিক দৃশ্যগুলো আপনাকে কাঁদাবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮২৬ ঘণ্টা, মার্চ  ২৪, ২০১৬

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।