স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। যার সবগুলোই রাজধানী ও তার আশেপাশের এলাকাতেই।
বিগত বছরগুলোর ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ও মৃত্যুর পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, ২০০২ সালে সর্বোচ্চ ৬ হাজার ২৩২ জন আক্রান্ত ও ২০০০ সালে সর্বোচ্চ ৯৩ জনের মৃত্যু হয়। এরপর ২০১৬ সালে হঠাৎ করে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৬ হাজার ৬০ জনে বৃদ্ধি পায়। ওই বছর ১৪ জনের মৃত্যু হয়। ২০১৭ সালে আক্রান্তের সংখ্যা ২ হাজার ৭৬৯ জন ও মৃতের সংখ্যা হ্রাস পেয়ে ৮ জনে নেমে আসে।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) মতে, জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার উপদ্রব বাড়ে। বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন জায়গায় ছোট ছোট আকারে হলেও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। আর তাতেই এডিস মশার প্রজনন বাড়ে। ডেঙ্গু নিরাময়যোগ্য রোগ, তবে নারী ও শিশুদের শরীরে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম থাকার কারণে তারা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন ও মৃতের সংখ্যার দিক থেকে তাদের সংখ্যাই বেশি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, সারাদেশে প্রতিদিন গড়ে ১৫ থেকে ২০ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। যাদের অধিকাংশই রাজধানীতে। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ২৬৩২ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ১৩২ জন। আর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু।
ডেঙ্গুতে মৃত ১১ জনের মধ্যে ৬ জন নারী, ২ জন পুরুষ ও ৩ জন শিশু। গত ৯ জুন রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতালে ৩৪ বছরের এক নারী মারা যান। হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে ২৪ জুন ৩১ বছর বয়সী এক নারী মারা গেছেন। বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজে ৩০ জুন ২৬ বছরের এক নারী, সেন্ট্রাল হাসপাতালে ১৫ জুলাই এক বছর সাত মাস বয়সী এক শিশু, ৮ জুলাই ঢাকা শিশু হাসপাতালে একজন, ১৬ জুলাই একই হাসপাতালে ৯ বছরের এক শিশু, বারডেম হাসপাতালে ২৬ জুলাই ২৭ বছরের একজন, পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৮ আগস্ট ৫৫ বছরের এক নারী এবং একই দিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫৪ বছরের এক নারী মারা গেছেন। সবশেষ ১ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ইবনে সিনা হাসপাতালে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে।
রাজধানীর হাসপাতালগুলো থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, প্রথমে জ্বর, বমি ও তলপেটে ব্যথা নিয়ে প্রায় ৪/৫ দিন ভোগার পর হাসপাতালে ভর্তি হন রোগী। হাসপাতালে এসে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, এসব রোগীরা এডিস মশার কারণে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত। এসব রোগীর মধ্যে থেকেই ২ জন ডেঙ্গু শকড সিনড্রোম ও হেমোরেজিক শকডে ৭ জন ও প্লেইন ডেঙ্গুতে ২ জন মারা গেছেন।
আইইডিসিআর’র সহকারী পরিচালক মো. আলমগীর হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা অনুসারে ডেঙ্গুতে মানুষ মারা যাওয়ার কথা না। প্রথমত মানুষ এখনও জানে না ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ কি? তারা নিজেরাই ওষুধ খেয়ে চিকিৎসার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে পরে হাসপাতালে আসেন। প্রায় সব রোগীই বাসা থেকে এ রোগটা বাধিয়ে নিয়ে আসেন। তারা বাসা ও তার আশেপাশের এলাকাকে পরিষ্কার বা মশামুক্ত রাখার চেষ্টা করেন না। অর্থাৎ এই পুরো সমস্যা দূরীকরণে একমাত্র জনসচেতনতাই মুখ্য।
এডিস মশা সাধারণত বাসাবাড়িতে ফুলের টব, টায়ার, ফ্রিজ, এসিতে জমে থাকা পানিতে জন্মায়। এ রোগ থেকে দূরে থাকতে বাড়ির আশপাশে কোথাও পানি জমতে দেওয়া যাবে না ও নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে। ঘুমাতে যাওয়ার সময় অবশ্যই মশারি ব্যবহার করতে হবে। কেননা মশার ওষুধও ইদানিং মশাদের জন্য রেজিস্ট্যান্ট হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন ওষুধ বিশেষজ্ঞরা।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাকির হাসান বাংলানিউজকে, ‘নগরবাসীকে সচেতন করার কার্যক্রম চলছে। এক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনের চেয়ে নগরবাসীর দায়িত্ব বেশী। কেননা তাদের বাড়িঘর মশামুক্ত তাদেরই রাখতে হবে আগে, পরে সিটি করপোরেশন’।
এদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শেখ সালাউদ্দীন বাংলানিউজকে বলেন, আমরা আমাদের শতভাগ চেষ্টা চালিয়েছি এবং অব্যাহত রয়েছে। আমরা পক্ষকালব্যাপী বিশেষ কর্মসূচিতে ৩৩ হাজার ৫০৮টি বাড়িতে পরিদর্শন করি। এরমধ্যে কিছু বাড়িতে এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস করা হয়েছে। তারপরেও ডেঙ্গু ছড়াচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৬৫২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০২, ২০১৮
এমএএম/জেডএস