বৃহস্পতিবার (১৪ মে) শেরে-বাংলা নগর নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরে করোনা ভাইরাস (কোভিড ১৯) সংক্রমণ মোকাবিলায় নবনিয়োগপ্রাপ্ত সিনিয়র স্টাফ নার্সদের বরণ অনুষ্ঠান শেষে মন্ত্রী গাড়িতে উঠে বের হওয়ার সময় এ ঘটনা ঘটে। সকাল থেকেই প্রায় শতাধিক নিয়োগ বঞ্চিতদের নার্সিং অধিদপ্তরের গেটের বাইরে অবস্থান নিতে দেখা যায়।
এসময় রেখা খাতুন মন্ত্রীর গাড়িতে ঝাঁপ দিয়ে পড়ে বলতে থাকেন স্যার আমাদের দুইটা মিনিট সময় দেন। আমাদের দুই মিনিট কথা শুনুন, আমাদের সঙ্গে অবিচার করা হয়েছে। কিন্তু মন্ত্রী গাড়ির গ্লাস খুলেননি। ইসাড়া দিয়ে সামনে থেকে সরে যেতে বলেন। পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়।
অ্যাপোলো হাসপাতালে কর্মরত রেখা বলেন, ৬ হাজার নার্স নিয়োগের সার্কুলার দেওয়া হয়েছে। সেখানে ৫ হাজার ৫৪ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে অথচ এখান থেকে আমাদের ১৭৬ জনকে বাদ দেওয়া হয়। কিন্তু এটা কেন হল এটি জানতেই আমরা দুটো মিনিট সময় চেয়েছিলাম মন্ত্রীর কাছে। কিন্তু তিনি দেননি।
আরেক সিনিয়র স্টাফ নার্স বর্তমানে বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজ ধানমন্ডি শাখায় কর্মরত জাবরুল ইসলাম রবি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৬ হাজার নার্স নিয়োগের ঘোষণা দিয়েছিলেন। সেই ঘোষণা অনুযায়ী বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন ২০১৮ সালে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় এবং ভাইবা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে প্রায় পাঁচ হাজার ২৩০ জন নার্স। সেই থেকে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন সুপারিশ করে ৫ হাজার ৫৪ জন নার্সকে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় আমরা ১৭৬ জন নার্স ২০১৮ সালের লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ভাইবা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা সত্ত্বেও আমাদের চূড়ান্তভাবে সুপারিশ করা হয়নি। দুঃখের বিষয় হলো বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন কয়েকজন নার্সকে লিখিত পরীক্ষার পরে চুড়ান্তভাবে নোটিশ দিয়ে জানায় ওরা ভাইবা দিতে পারবে না বলে তাদের প্রার্থিতা বাতিল করেন। সেই বাতিল করা প্রার্থীদের মধ্যেও (নিম্নলিখিত রোল নম্বরগুলো 015590,300052, 300188,015503, 012496,010572) চূড়ান্তভাবে সুপারিশ করা হয়। যারা কোনোভাবে মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেননি বলে তারা জানান।
তিনি আরও বলেন, আমরা ১৭৬ জন নার্স লিখিত পরীক্ষায় পাস করে ভাইবা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা সত্ত্বেও আমাদের চূড়ান্তভাবে সুপারিশ করা হয়নি। আমরা অনেকবার পিএসসিতে যোগাযোগ করা সত্ত্বেও তাদের কাছ থেকে কোনো উত্তর পাইনি। তারা বলেন, লকডাউনের কারণে অফিস বন্ধ লিখিত আবেদন করতে। আমরা পিএসসির চেয়ারম্যান বরাবর ও পিএসসির দায়িত্বরত সচিব নজরুল ইসলামের কাছে মেইল করেছি। কিন্তু আমরা এখন পর্যন্ত কোনো ফলাফল পাইনি।
তাই আজ আমরা নার্সিং অধিদপ্তরে ১৭৬ জন নিয়োগ বঞ্চিত নার্স এসেছিলাম মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে। এসেও আমরা ব্যর্থ হয়েছি। আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও নার্সিং অধিদপ্তরের লিখিতভাবে আবেদন করেছি। কিন্তু তারা সবাই আমাদের পিএসসিতে যোগাযোগ করার জন্য বলেছেন। আমরা শত চেষ্টা করেও এখন পর্যন্ত পিএসসিতে যোগাযোগ করতে পারিনি। তাই আমরা প্রধানমন্ত্রী ও পিএসসির চেয়ারম্যানের কাছে আকুল আবেদন জানাচ্ছি, এ দুঃসময়ে আমরা মরণের পথে ঝাঁপ দিতে রাজি আছি। যেহেতু নার্সের অনেক সংকট রয়েছে ও ৯৪৬টি পদ ফাঁকা আছে, দয়া করে আমাদের চূড়ান্তভাবে সুপারিশ করলে আমরা মানুষের সেবায় নিজেদের জীবন উৎসর্গ করবো বলে জানান তারা।
বাংলাদেশ সময়: ২০১৭ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০২০
এসএমএকে/আরবি/