সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালে চারটি আইসিইউ (ইনসেনটিভ কেয়ার ইউনিট) বেড রয়েছে। এর মধ্যে দু’টির ভেন্টিলেটর বিকল হয়ে পড়ে আছে।
এদিকে, এ হাসপাতালে অক্সিজেন সিলিন্ডার থাকলেও নেই সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্ট। ফলে ঝুঁকিপূর্ণ করোনা রোগীদের জন্য কোনো কাজেই আসছে না জেলার প্রধান এ চিকিৎসালয়টি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সারাদেশের মতো সিরাজগঞ্জেও দিন দিন বেড়েই চলেছে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতাল তাদের একমাত্র চিকিৎসাকেন্দ্র। এ হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য ২০ শয্যার একটি ইউনিট স্থাপন করা হয়েছে। যেখানে প্রতিদিনই বাড়ছে করোনা রোগী ভর্তির সংখ্যা। তবে মুমূর্ষু রোগীর জন্য এ হাসপাতালে নেই কার্যকর কোনো চিকিৎসা ব্যবস্থা।
শনিবার (১৭ এপ্রিল) সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, হাসপাতালটিতে ১০টি সিসিইউ (কার্ডিয়াক কেয়ার ইউনিট) বেড ও চারটি আইসিইউ (ইনসেনটিভ কেয়ার ইউনিট) বেড রয়েছে। চারটি আইসিইউ বেডের মধ্যে দু’টির ভেন্টিলেটর বিকল। বাকি দু’টি কার্যকর। তবে বর্তমানে সেখানে কোনো রোগী নেই। সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যবস্থা না থাকলেও ২২৮টির মতো অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে। এর মধ্যে ১৫০টি স্থানান্তরযোগ্য। বাকিগুলো অপারেশন থিয়েটার, আইসিইউ ও সিসিইউও ওয়ার্ডে রোগীদের জন্য রাখা হয়েছে।
৩০ লাখ মানুষ বসবাসের এ জেলার প্রধান হাসপাতালে মাত্র চারটি আইসিইউ বেড থাকাটা মোটেই পর্যাপ্ত নয় বলে মনে করে সচেতন মহল। মহামারি করোনা ভাইরাস সংক্রমণের এ জরুরি মুহূর্তে অপর্যাপ্ত প্রযুক্তিগত সুবিধা নিয়েও প্রশ্ন অনেকের।
সিরাজগঞ্জ স্বার্থরক্ষা সংগ্রাম কমিটির সদস্য নব কুমার কর্মকার এ বিষয়ে বলেন, জেলার অন্যতম এ হাসপাতালে মুমূর্ষু করোনা রোগীর চিকিৎসার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। এটা কখনো হতে পারে না। আইসিইউ থাকলেও সেখানে রোগী নেই। গুরুতর রোগী দেখলেই তাকে রেফার্ড করা হয়।
ওই হাসপাতালের পরিসংখ্যান কর্মকর্তা জেবুন্নেছা বেগম জানান, গত তিন/চারদিনে ১০ জন করোনা রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে পাঁচজন অন্যান্য হাসপাতালে চলে গেছেন। বাকিরা এখনও হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসেসিয়েশন (বিএমএ) সিরাজগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি ডা. জহুরুল হক রাজা বলেন, সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্ট নিজেই অক্সিজেন উৎপাদন করে এবং পর্যাপ্ত সরবরাহ করতে পারে। এতে রোগী দীর্ঘক্ষণ অক্সিজেন পান। অপরদিকে সিলিন্ডার অক্সিজেন নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত প্রতি মিনিটে পাঁচ/ছয় লিটার অক্সিজেন রোগীকে সরবরাহ করে এবং শেষ হওয়ার আগেই দ্বিতীয় সিলিন্ডার বসাতে হয়। যা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য। তাই আইসিইউ বেডে অবশ্যই সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্ট স্থাপন করা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, এর আগে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্ট স্থাপন করার কথা ছিল। কিন্তু কোম্পানির গরিমসির কারণে সেটা হয়নি। করোনার এ সংকটকালে জরুরি ভিত্তিতে অক্সিজেন প্লান্ট স্থাপনের দাবি জানাচ্ছি।
এছাড়া করোনা রোগীদের জন্য হাইপো ন্যাজাল ক্যানোলা বিশেষ কাজে দেয়। সিরাজগঞ্জের হাসপাতালে হাইপো ন্যাজাল ক্যানোলা দিলেও রোগীরা অনেক উপকৃত হবে বলে জানান তিনি।
সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. ফরিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের চারটি আইসিইউ বেড রয়েছে। তার মধ্যে দু’টির ভেন্টিলেটর অকার্যকর। সেগুলো মেরামত করার চেষ্টা চলছে। গুরুতর রোগীদের সিলিন্ডার অক্সিজেন দিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, করোনা রোগীদের চিকিৎসায় এখানে ২০টি বেড স্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে নতুন ভবনে ১২টি এবং পুরাতন ভবনে আটটি বেড রয়েছে। এছাড়া প্রতিটি ওয়ার্ডে মোট ৪০টি আইসোলেশন বেড রয়েছে। করোনার উপসর্গ থাকা রোগীদের সেখানে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্ট নেই। তবে সিলিন্ডার অক্সিজেন দিয়ে চালানো হচ্ছে। সম্প্রতি সিরাজগঞ্জ বিদ্যুৎ কেন্দ্র পাঁচটি অক্সিজেন কনসেন্ট্রেটর দিয়েছে। সেগুলো ব্যবহার উপযোগী করার প্রক্রিয়া চলছে।
বাংলাদেশ সময়: ১০২৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০২১
এসআই