পাবনা: গত এক সপ্তাহে দেশব্যাপী বয়ে চলা তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ রয়েছে সবচাইতে বেশি কষ্টে ও অস্থিরতার মধ্যে।
তীব্র গরমে এরই মধ্যে বেড়েছে পেটের পিড়া ও ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। বর্তমানে দ্বিগুন রোগী ভর্তি রয়েছে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে।
আর এই গরমে শিশু মৃত্যুর সংখ্যাও বেড়েছে। প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ জন করে ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হচ্ছে হাসপাতালে। বর্তমানে নারী পুরুষ ও শিশু সব মিলিয়ে রোগী ভর্তি রয়েছে ৬৬ জন। এর মধ্যে শিশু রোগী ১৮ জন আর বেশি ভর্তি রয়েছে পুরুষ রোগী। গত এক সপ্তাহে হাসপাতালে প্রায় ৪শ ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছে। পানি শূন্যতাসহ তাপদাহের কারণে অসুস্থ হয়ে ছুটছেন বিভিন্ন হাসপাতালে। এই সপ্তাহের প্রথম দিকে সর্বোচ্চ ৭০ জন রোগী ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছিলো। আজকে সকাল থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ২৬ জন নতুন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে।
অতিমাত্রায় গরমের কারণে নবজাতকসহ শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে গরম ঠাণ্ডাজনিত নানা রোগে। তাই শিশুদের প্রতি যত্ন নেওয়ার জন্য বিশেষ পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা।
চলতি সপ্তাহে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নবজাতকসহ বিভিন্ন বয়সের শিশু মৃত্যু হয়েছে ৬ জনের। বর্তমানে শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছে ৭১ জন। চলতি সপ্তাহে প্রথম দিকে ৮০ জন রোগী ভর্তি ছিলো এই হাসপাতালে। গত এক সপ্তাহে প্রায় ৫ শতাধিক রোগী ভর্তি হয়েছে হাসপাতালে।
এদিকে হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীদের অবহেলা ও চিকিৎসকদের সঠিক চিকিৎসা ব্যবস্থা না দেওয়ায় এই সব নবজাতক ও শিশুর মৃত্যু হচ্ছে বলে মনে করছেন অভিভাবকরা। হাসপাতালের অব্যবস্থা নিয়ে তাদের রয়েছে নানা ধরনের অভিযোগ।
পাবনা অঞ্চলের ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিসের পাওয়া তথ্য মতে গত এক সপ্তাহে সবচাইতে বেশি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চলতি মাসের ২০ তারিখে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তার পর থেকে একটানা ৩৮/৩৯ ডিগ্রি তাপমাত্রা বয়ে যাচ্ছে পাবনা অঞ্চলের ওপর দিয়ে। গতকাল ২৫ এপ্রিল তাপমাত্রা ছিলো ৩৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সোমবার ২৬ এপ্রিলের তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৮.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরই মধ্যে গত ২৩ এপ্রিল শক্রবার সন্ধ্যার পরে পাবনাতে হালকা ঝড় ও সামান্য পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু তার পর থেকে তাপমাত্রা আরো বেশি অনুভব করছে সাধারণ মানুষ।
হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা নিতে আসা একাধিক রোগীর অভিভাবক স্বাস্থ্যকর্মী ও প্রশিক্ষণরত চিকিৎকদের অনেকের আচরণগত সমস্যার সমালোচনা করে বলেন, একটি বেডে তিন থেকে চারজন করে নবজাতক শিশুর চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে এখানে। শিশুর কোনো সমস্যা হলে ডাক্তারের কাছে গেলে তারা খারাপ ব্যবহার করছেন। ডাক্তাররা নার্সদের কাছে যেতে বলেন। নার্সদের কাছে গেলে তারা আয়া দেখিয়ে দেন। আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি কার কাছে যাবো। স্বাস্থ্যবিধির কোনো বালাই নাই এই হাসপাতালে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নেই বল্লেই চলে।
বর্তমান ডায়রিয়া ওয়ার্ড নিয়ে পাবনা জেনারেল হাসপাতালের দায়িত্বরত সিনিয়ার স্বাস্থ্যকর্মী সেবিকা রওশোনারা খাতুন বলেন, অতিমাত্রায় গরমের কারণে গত এক সপ্তাহ থেকে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা দ্বিগুন হয়েছে। এর মধ্যে বয়স্ক রোগীর সংখ্যা বেশি। আমরা প্রাথমিক চিকিৎসা স্যালাইন ও ওষুধ পত্র দিচ্ছি। একদিন বা দুইদনের মধ্যেই স্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছে। তবে আমাদের পরামর্শ হলো। বেশি বেশি করে পানি পান করতে হবে। শরীর ঠাণ্ডা রাখে এমন খাবার বেশি করে খেতে হবে।
পাবনা জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের দায়িত্বরত ইন্টার্ণ চিকিৎসক ডা. নূরজাহান আশরাফ বলেন, সম্প্রতি অতিগরমের কারণে হাসপাতালে শিশু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে ডায়রিয়া রোগে আক্রান্তর সংখ্যা সবচাইতে বেশি। বর্তমানে আমাদের শিশু ওয়ার্ডে স্বাভাবিকের চাইতে একটু বেশি রোগী ভর্তি রয়েছে। এর মধ্যে গরম ঠাণ্ডাজনিত কারণে নিউমোনিয়া, জ্বর, শ্বাসকষ্ট এই ধরনের রোগীর সংখ্যা বেশি। আমরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছি। শিশু মৃত্যুর ঘটনা এটা স্বাভাবিক। যে শিশুটার অবস্থা ভালো মনে হচ্ছে না তাদের উন্নত চিকিৎসা গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
হাসপাতালে নানা সমস্যা রয়েছে তার পরেও চেষ্টা করছি সঠিক সেবা দেওয়ার। তবে সব মিলিয়ে এক পশলা বৃষ্টি প্রত্যাশা করছেন সব শ্রেণীপেশার মানুষ। বৃষ্টির হলে পরিবেশটা শান্ত হবে। তাই সবাই সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করছেন বৃষ্টির জন্য।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০২১
আরএ