খুলনা: খুলনায় বেড়েই চলেছে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা। করোনা পরিস্থিতি ক্রমে রূপ নিচ্ছে ভয়াবহ।
খুলনা বিভাগে করোনা মোট শনাক্তের সংখ্যা ৩৮ হাজার ছাড়িয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ৬৯৫ জনের।
বৃহস্পতিবার (১০ জুন) দুপুরে বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক রাশেদা সুলতানা এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের দফতর সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় খুলনা জেলার একজন, বাগেরহাটের দু’জন ও কুষ্টিয়ার দু’জন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন।
এদিকে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণে খুলনা বিভাগের ১২৬ ইউনিয়নের ভোট স্থগিত করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
বৃহস্পতিবার (১০ জুন) আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কমিশনের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
করোনা হাসপাতালে রোগীর চাপ বাড়ায় দেখা দিয়েছে শয্যা সংকট। আইসিইউর চাহিদা বাড়ায় হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
খুলনা করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে শয্যা খালি না থাকায় নতুন রোগী ভর্তি স্থগিত রেখেছে কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে ১০০ শয্যার এ হাসপাতালে ১৩০ জন রোগী ভর্তি হওয়ায় এ সিদ্ধান্ত।
করোনা ইউনিটের ফোকাল পারসন ডা. সুহাস রঞ্জন হালদার বলেন, বর্তমানে ১০০ শয্যার হাসপাতালে ১৩০ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। শয্যার অতিরিক্ত রোগী থাকায় নতুন বেড খালি না হওয়া পর্যন্ত রোগী ভর্তি স্থগিত করেছে কর্তৃপক্ষ। শয্যা খালি না হওয়া পর্যন্ত নতুন রোগী ভর্তি করা হবে না।
তিনি আরও বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত খুলনা করোনা হাসপাতালে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়ে দু’জন এবং উপসর্গ নিয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি আছেন ১২৬ জন রোগী। যার মধ্যে ৫৫ জন আছেন রেড জোনে, ২৯ জন ইয়োলো জোনে।
তিনি জানান, আইসিইউতে ১২ জন এবং এইচডিইউতে ৩০ জন আছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ভর্তি হয়েছেন ৫০ জন রোগী। আর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৪৭ জন।
খুলনা সিভিল সার্জন অফিসের মেডিক্যাল অফিসার (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ডা. শেখ সাদিয়া মনোয়ারা ঊষা জানান, খুলনা জেলা ও মহানগরীতে নতুন করে ১২২ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। ৪১২ জনের নমুনা পরীক্ষায় এ শনাক্ত হয়। খুলনায় মোট নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্তের হার ২৯ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় খুলনার রূপসা সেনের বাজারের আইচগাতী এলাকার শেখ আজগর আলী (৫২) নামে এক ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করেছেন। এ নিয়ে খুলনায় মৃত্যু হয়েছে ১৯২ জনের।
এদিকে খুলনা বিভাগের মধ্যে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় চুয়াডাঙ্গায় গত বছরের ১৯ মার্চ। করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে বৃহস্পতিবার (১০ জুন) সকাল পর্যন্ত বিভাগের ১০ জেলায় মোট শনাক্ত হয়েছে ৩৮ হাজার ৯০ জন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৯৫-তে। আর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৩২ হাজার ৫৩২ জন।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের জেলাভিত্তিক করোনা-সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা য়ায়, বিভাগে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যার দিক থেকে খুলনা জেলা শীর্ষে রয়েছে। এ পর্যন্ত খুলনায় শনাক্ত হয়েছে ১১ হাজার ১০১ জন। আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১৯২ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ৯ হাজার ৫৩৬ জন।
বাগেরহাটে করোনা শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৯৯১ জন। আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৫৩ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৪৬২ জন। সাতক্ষীরায় শনাক্ত হয়েছে ২ হাজার ১৫৭ জন এবং মারা গেছেন ৪৮ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১ হাজার ৫২৫ জন।
যশোরে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৭ হাজার ৮৯৯ জন। মারা গেছেন ৮৪ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ৬ হাজার ৬৬০ জন। নড়াইলে শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৯৬১ জন। মারা গেছেন ২৭ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৮৪৪ জন। মাগুরায় করোনা শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ২৯২ জন। মারা গেছেন ২৩ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ২১৫ জন।
ঝিনাইদহে শনাক্ত হয়েছে ৩ হাজার ৩১ জন। মারা গেছেন ৫৭ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ৭৯০ জন। কুষ্টিয়ায় করোনা শনাক্ত হয়েছে ৫ হাজার ৩৯৪ জন। মারা গেছেন ১২৪ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ৪ হাজার ৭৬৬ জন।
চুয়াডাঙ্গায় শনাক্ত হয়েছে ২ হাজার ১৫৪ জন। মারা গেছেন ৬৪ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৮৪৩ জন। শনাক্তের দিক দিয়ে সর্বনিম্নে রয়েছে মেহেরপুর। এখানে শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ১১০ জন। আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২৩ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ৮৮০ জন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৬ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০২১
এমআরএম/এএ