ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

করোনা ওয়ার্ডে জায়গা না পেয়ে গাছতলায় রোগী

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২২০ ঘণ্টা, জুলাই ৭, ২০২১
করোনা ওয়ার্ডে জায়গা না পেয়ে গাছতলায় রোগী

যশোর: করোনা উপসর্গ নিয়ে যশোর জেনারেল হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি হন রিনা খাতুন (৫৫)। তাকে পাঠানো হয় করোনা ওয়ার্ডের ইয়োলো জোনে।

কিন্তু সেখানে শয্যা খালি নেই। বারান্দাতেও ঠাঁই নেই। বাধ্য হয়ে স্বজনরা তাকে করোনা ওয়ার্ডের বাইরে নমুনা সংগ্রহের জন্য রাখা টেবিলের উপর রাখেন। মঙ্গলবার (৬ জুলাই) সকালে নমুনা সংগ্রহ শুরু হওয়ায় টেবিলের উপর থেকে তাকে নামিয়ে গাছতলায় রাখা হয়।

এমন চরম অসহায়ত্বের কথা জানালেন রিনা খাতুনের স্বামী আবদুল আজিজ। তাদের বাড়ি যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার বারবাগ গ্রামে।  

মুদিদোকানি আবদুল আজিজ বাংলানিউজকে বলেন, সোমবার (৫ জুলাই) দিনগত রাত সাড়ে ১০টা থেকে রোগী নিয়ে ওয়ার্ডের বাইরে বসে আছি। নার্সদের সঙ্গে কথাই বলা যাচ্ছে না। শুধু অক্সিজেন দিয়েই তারা দায়িত্ব শেষ করেছেন। কোনো চিকিৎসা-ওষুধপত্র নেই। ওয়ার্ড বয়রা আমাদের বলছে, আপনাদের রোগীর করোনা পজিটিভ হয়েছে। তাকে রেড জোনে নিয়ে যাবো, অপেক্ষা করেন। যশোর জেনারেল হাসপাতালে এমনিতেই কোনো চিকিৎসা নেই। আমরা রোগীকে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যাবো বলে ভাবছি।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলার ৭৮২ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২৭৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার প্রায় ৪০ শতাংশ। নতুন করে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ছয়জন করোনা রোগী ছিলেন। বাকি ছয়জনের উপসর্গ ছিল। বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি আছে ২৩৫ জন। এ পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ১৩ হাজার ৭৭৯ জন, সুস্থ হয়েছেন ৭ হাজার ৪৬৯জন, করোনা পজিটিভ রোগী মারা গেছেন ১৮১ জন। গত বছরের ২৩ মার্চ থেকে চলতি বছরের ২৯ জুন পর্যন্ত ইয়োলো জোনে করোনার উপসর্গ নিয়ে ১৬৪ জনের মৃত্যু রেকর্ড করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে গত এক সপ্তাহের প্রতিদিনই গড়ে পাঁচজনের বেশি রোগী এ জোনে মারা যাচ্ছেন।

এ প্রসঙ্গে যশোর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. আরিফ আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, করোনায় আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে ভর্তি রোগী বাড়ছেই। শয্যা বাড়িয়েও জায়গার সংকুলান হচ্ছে না। ফলে জায়গা না পেয়ে বারান্দা কিংবা গাছতলায় থাকার মতো ঘটনা ঘটছে। তবে আমরা ইয়োলো জোনের শয্যা ও জায়গা বাড়িয়েছি। আরও বাড়ানো প্রক্রিয়াধীন।  

তিনি বলেন, করোনা ওয়ার্ডের রেড জোনে ১৪৬ শয্যার বিপরীতে ১৩৬ জন ও ইয়োলো জোনের ২২ শয্যার বিপরীতে ৯৯ জন রোগী ভর্তি আছেন।

ইয়োলো জোনে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আখতারুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, হাসপাতালে রেড জোনে জায়গা বাড়ানোর দিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ইয়োলো জোনে নতুন ওয়ার্ড সংযুক্ত করার মতো জায়গা হাসপাতালে ছিল না। তবে রোগীর চাপ সামাল দেওয়ার জন্য হাসপাতালের টিকাদান কেন্দ্র ইয়োলো জোনে সংযুক্ত করে নতুন ২৪টি শয্যা বসানো হচ্ছে। সবমিলিয়ে অন্তত ৬০ রোগীকে এ ওয়ার্ডে রাখা যাবে। তখন ইয়োলো জোনের পরিবেশ অনেক ভালো হয়ে যাবে।

যশোরের অতিরিক্তি জেলা ম্যাজিস্ট্রট কাজী সায়েমুজ্জামান বলেন, যশোর জেনারেল হাসপাতালে করোনা রোগীদের চাপ বাড়ায় শহরের জনতা হাসপাতালে ৩০টি, ইবনে সিনা হাসপাতালে ২০টি, নোভা মেডিক্যাল সেন্টারে ১৫টি, জেনেসিস হসপাতালে ১৫টি, আধুনিক ও কুইন্স হসপিটালে ২০টি শয্যা বাড়ানো হয়েছে। এখন থেকে বেসরকারি এসব হাসপাতালে করোনা রোগীর চিকিৎসার জন্য ১০০টি শয্যা সংরক্ষিত থাকবে। যশোর জেনারেল হাসাপাতাল থেকে এখানে পাঠানো রোগীদের চিকিৎসা চলবে। এক্ষেত্রে অপেক্ষকৃত কম অসুস্থ করোনা রোগীদের বেসরকারি এসব হাসপাতালে পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে। জনস্বার্থে হাসপাতালগুলো নিজস্ব অর্থায়নে সেখানে পাঠানো করোনায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেবে।

বাংলাদেশ সময়: ০২১৮ ঘণ্টা, জুলাই ০৭, ২০২১
ইউজি/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।