নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জের করোনার শুরু থেকে আক্রান্তদের চিকিৎসা, তাদের খোঁজ খবর রাখা, পুরো জেলায় করোনা নিয়ন্ত্রণে ডাক্তারদের সমন্বয় করে কাজ করাসহ রোগীদের পাশে থেকে দিনরাত সেবা দিয়ে আলোচিত চিকিৎসক সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির ফোকাল পারসন ডা. জাহিদুল ইসলামের বদলির আদেশ দিয়েছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এদিকে নারায়ণগঞ্জে করোনা ভাইরাসের সংক্রামণ বৃদ্ধির মধ্যে তার এ আদেশে শঙ্কায় পড়েছেন জেলা প্রশাসন, জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ, জনপ্রতিনিধি ও চিকিৎসকরা।
বুধবার (২৮ জুলাই) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ডা. জাহিদের বদলির আদেশের প্রতিবাদে জনপ্রতিনিধিরা ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। নারায়ণগঞ্জে এখন নিয়মিত গড়ে ৩ জনের মৃত্যু ও ২ শতাধিক আক্রান্ত হচ্ছেন করোনায়। এ ছাড়া উপসর্গ নিয়ে আক্রান্ত আছেন অনেকেই। এ অবস্থায় জাহিদের চলে যাওয়া জেলার জন্য ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি ডেকে আনতে পারে।
করোনার শুরু থেকে ডা. জাহিদুল ইসলাম প্রতিটি উপজেলায় চিকিৎসকদের সমন্বয়ে আক্রান্তদের মুঠোফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করে তাদেরকে চিকিৎসা সেবা দেন। তিনি ইতোমধ্যে করোনায় আক্রান্তদের সেবা দিয়ে নারায়ণগঞ্জবাসীর আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছেন। করোনার শুরু থেকেই যখন নারায়ণগঞ্জে বিপর্যস্ত অবস্থা ছিল তখন তিনি হাজারো আক্রান্তদের মুঠোফোনে তার গঠিত টিমের মাধ্যমে সেবা দিয়ে সুস্থ করেছেন এবং নারায়ণগঞ্জের করোনা পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন।
নারায়ণগঞ্জ ৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান বাংলানিউজকে বলেন, এই ব্যক্তি এমন একজন ব্যক্তি যিনি পুরো জেলায় করোনা আক্রান্তদের আস্থা অর্জন করেছেন এবং মানুষ আক্রান্ত হলেই তার দ্বারস্থ হচ্ছেন। তিনি পুরো জেলার করোনার চিকিৎসাকে একটি চেইনে এনেছেন যা তিনি এখান থেকে চলে গেলে ভেঙে পড়বে এবং এখন যে ঊর্ধ্বমুখী করোনা পরিস্থিতি তা সামাল দেওয়া কষ্টকর হয়ে পড়বে। তাকে যেন এখানেই রাখা হয় সেজন্য আমি আগামীকাল স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবো। আশা করি নারায়ণগঞ্জের বর্তমান পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে ডা. জাহিদকে নারায়ণগঞ্জেই রাখা হবে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোস্তাইন বিল্লাহ বাংলানিউজকে জানান, সরকারি চাকরিজীবীদের বদলি একটি চলমান প্রক্রিয়া বাঁ রুটিন ওয়ার্ক। এটি পরিবর্তন হবেনা। তবে যেহেতু এখন করোনা প্যান্ডেমিক চলছে তাই এই পরিস্থিতিতে ডা. জাহিদ নারায়ণগঞ্জেই কাজ করবেন। আমরা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলেছি, এটি আপাতত সিদ্ধান্ত হয়েছে যতদিন এই করোনা পরিস্থিতি নারায়ণগঞ্জে ভয়াবহ থাকছে এবং তার এখানে প্রয়োজন ততদিন তিনি এখানেই থাকছেন। তবে আদেশ পরিবর্তন হবেনা, তার স্থলে যিনি বদলি হয়েছেন তিনি তার আগের স্থানেই আপাতত কাজ করবেন এমনটাই আমরা কথা বলেছি জেলা স্বাস্থ্য বিভাগে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইমতিয়াজ জানান, যেহেতু একটি বদলির আদেশ হয়েছে সেহেতু এখন বদলির প্রক্রিয়াই হবার কথা। তবে জেলা প্রশাসন থেকে আমাকে জানানো হয়েছে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে তাদের কথা হয়েছে এবং মন্ত্রণালয় ডিজি হেলথকে এ ব্যাপারে অবহিত করেছেন যে ডা. জাহিদ এখানেই কাজ করবে। তবে ডিজি হেলথ থেকে আমি কোনো নির্দেশনা এখনো পাইনি।
করোনায় নানা কাজে আলোচিত কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ ও কাউন্সিলর শওকত হাসেম শকু জানান, ডা. জাহিদ নারায়ণগঞ্জবাসীকে যেভাবে আগলে রেখে আস্থা অর্জন করেছেন এবং এখনো রোগীরা তাকে ২৪ ঘণ্টাই পায়। এমন একজন ব্যক্তিকে এখান থেকে সরিয়ে দেওয়া হলে জেলার করোনা পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর হতে পারে। এমনিতেও এখন জেলায় সংক্রামণ অনেক বেশি যা সামাল দেওয়া কষ্টকর।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৪ ঘণ্টা, জুলাই ২৮, ২০২১
কেএআর