ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

নির্বাচনের আগে তিনদিন যা হলো কলকাতায়

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩০৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৬, ২০১৯
নির্বাচনের আগে তিনদিন যা হলো কলকাতায় ধরনা মঞ্চে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা: রোববার ছিলো বামেদের ব্রিগেড সমাবেশ। ক্ষমতায় না থেকেও বামরা যে জমায়েত দেখালো তা দেখে মুখে স্বীকার না করলেও বিরোধীদের চোখ যে কপালে উঠেছে তা বলাইবাহুল্য।

সেদিন বিকেলেই কলকাতা পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের বাড়িতে হানা দেয় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা-সিবিআই। এরপরই সিবিআইকে বাধা দেয় কলকাতা পুলিশ।

চলে জোর ধ্বস্তাধ্বস্তি দুই বাহিনীর মধ্যে। বলপ্রয়োগ করেই সিবিআই সদস্যদের থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।

এরপরই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলবল নিয়ে হাজির হন রাজীব কুমারের বাড়িতে। অপরদিকে ওই রাতে সিবিআই রাজ্যপালের দ্বারস্থ হয়।  

সোমবার (৪ ফেব্রুয়ারি) সিবিআই যায় দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টে। আর রাজীব কুমারের বাড়িতে সিবিআই’র হানা দেওয়া প্রতিবাদে সেদিন ধরনায় বসেই প্রশাসনিক কাজকর্ম সারেন মমতা। তাকে সংহতি জানাতে একে একে ধরনা (অবস্থান কর্মসূচি) মঞ্চে আসতে থাকেন মমতার জোটসঙ্গীরা। গোটা ভারতের চোখ তখন পশ্চিমবঙ্গের দিকে। পরপর দুই রাত মমতার কাটে কলকাতার রাজপথে।

মঙ্গলবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বেলা বাড়তেই চিত্র পাল্টাতে থাকে। সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয় রাজীব কুমারকে জেরা করতে পারবে সিবিআই। শর্ত, জেরা করা যাবে কলকাতা বা দিল্লি বাদে তৃতীয় স্থান শিলংয়ে। তবে আপাতত গ্রেপ্তার করা যাবে না রাজীবকে। মমতা মঞ্চ থেকে জানালেন নৈতিক জয় হয়েছে তাদের। অপর দিকে বিজেপিরও একই মত। অবশেষে ধরনা তুলে নেন মমতা।

কিন্তু মমতাই ক্ষমতায় এসে বলেছিলেন—রাজপথে রাজনৈতিক কোনো ধরনা করা যাবে না। নিজের সেই নিষেধাজ্ঞা নিজেই ভাঙলেন। রাজপথে ধরনায় বসলেন স্বয়ং মমতা। হয়তো তিনি ভুলে গিয়েছিলেন পুলিশ, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা-সিবিআই বা রাজ্য গোয়েন্দা সংস্থা-সিআইডি গ্রেফতার করলে বা জেরা করলেই কেউ অপরাধী প্রমাণ হয়ে যান না। আদালত যতদিন না কাউকে অপরাধী বলে ঘোষণা করছে, আইনের চোখে তিনি অপরাধী হন না।

এর আগে অনেককেই এসব প্রশাসনিক সংস্থা জেরা করেছে। গুজরাট গণহত্যার পর সিবিআই গুজরাটের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে টানা নয় ঘণ্টা জেরা করেছিলো। মোদী সম্পর্কে একাংশের মানুষের যতই আপত্তি থাক না কেন, তিনি আজকের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো সিবিআই-এর বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করেননি। জেরার মুখোমুখি হয়েছিলেন। আবার ক্ষমতায় এসে এই মমতাই সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে ফাঁসাতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন বসান। বুদ্ধবাবু কিন্তু সেই তদন্ত কমিশনের সামনে হাজির হয়ে সাক্ষীও দিয়েছিলেন। কমিশনকে এড়িয়ে যাননি। এই সারদা চিটফান্ড কান্ডে সিপিআইএম নেতা রবীন দেবকে জড়ানোর কম চেষ্টা করেনি মমতার প্রশাসন। রবীন দেব কিন্তু জেরা এড়িয়ে যাননি।

তাহলে পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারকে ঘিরে কেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই রাজনৈতিক অবস্থানে এলেন। যেখানে রাজ্যের পুলিশ প্রশাসনকেও রাজনৈতিক ধরনা মঞ্চে অংশ নিতে হলো। তাহলে কি রাজীব কুমারকে জেরা করলে ব্যক্তি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোনো সমস্যায় পড়ে যেতে পারতেন? কলকাতার সাধারণ মানুষের মনে এই প্রশ্নই দেখা দিচ্ছে! 

অতীতে মমতার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মী তথা রাজ্যের সাবেক পরিবহনমন্ত্রী মদন মিত্রকে দীর্ঘদিন সিবিআই আটক করে রেখেছিল এই সারদা কেলেঙ্কারির কাণ্ডে। মদন মিত্রের ক্ষেত্রে তখন তিনি সেভাবে কোনো পদক্ষেপ নেননি।

এছাড়া সারদা ইস্যুতেই মমতার দলের তৎকালীন রাজ্যসভার সাংসদ সাংবাদিক কুনাল ঘোষকে গ্রেফতার করে মমতারই গোয়েন্দ সংস্থা-সিআইডি। জেলে এবং আদালতের পথে একজন সাংসদের সঙ্গে চূড়ান্ত অসভ্যতা করে মমতারই পুলিশ। একটি শব্দও শোনা যায়নি সেদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতার কাছ থেকে। নিজের দলের সাংসদ সঞ্জয় বসু, তাপস পাল (অভিনেতা), সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় গ্রেপ্তার হয়েছিলো এই সারদা ইস্যুতেই সিবিআইর হাতে। ধরনা তো দূরের কথা সে সময়ও নীরবতাই পালন করে গিয়েছিলেন মমতা।

রোববার সিবিআই রাজীবের জেরার উদ্যোগ নিতেই মমতা ছুটে গেলেন তার বাড়িতে। অথচ নিজ দলের মন্ত্রী, সাংসদকে যখন এই সারদা ইস্যুতে সিবিআই গ্রেপ্তার করেছিলো তখন তাদের বাড়িতে একবারও ছুটে যাননি মমতা। ২০১৯ ভারতের লোকসভা (জাতীয় নির্বাচন) নির্বাচনের আগে এমনই গুঞ্জন উঠতে শুরু করেছে কলকাতার রাজপথে। মমতার এই পদক্ষেপ পশ্চিমবাংলার মাটি বিজেপির শক্ত ঘাঁটি করে দিলো নাতো? এ প্রশ্ন কিন্তু থেকেই গেলো।

বাংলাদেশ সময়: ২২০১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০১৯
ভিএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।