ঢাকা: সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে দেশে প্রথমবারের মতো সৌরবিদ্যুত চালিত ভ্যান ও রিকশা মডেলের একটি নতুন ধরনের গাড়ি উদ্ভাবন করেছেন চুয়াডাঙ্গার সাজ্জাদ হোসেন শান্ত। তিনি এ গাড়ির নাম দিয়েছেন সূর্য গাড়ি।
এককালীন বিনিয়োগ, চার্জিংয়ের কোনো খরচ নেই, আকর্ষণীয় মডেল, চার জন বসার ব্যবস্থা, ব্যাটারির তিন বছরের ওয়ারেন্টি, সৌর প্যানেলের ২৫ বছরের ওয়ারেন্টি, মিউজিক প্লেয়ার সিস্টেম, হেডলাইট, ব্যাকলাইট ও হোমলাইট সমৃদ্ধ এ গাড়িটি ভ্যান ও রিকশা মডেলের।
বর্তমানে ঢাকার বাসাবোতে বসবাসকারী শান্ত বাংলানিউজকে জানান, তিনিই দেশে প্রথমবারের মতো এ গাড়ি উদ্ভাবন করেছেন। দেশের কোথাও এ ধরনের গাড়ির ব্যবহার নেই।
তিনি বলেন, বর্তমানে রাস্তায় যে সমস্ত ব্যাটারিচালিত অটো ভ্যান ও রিকশা চলছে সেগুলোর প্রতিটিতে প্রতিদিন চার্জের জন্য প্রায় ১০০ টাকা ব্যয় হয়। আবার দেশের জন্য অত্যন্ত মূল্যবান বিদ্যুতও খরচ হয়। নবায়নযোগ্য অফুরন্ত সৌর শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুতের খরচ কমানোই সূর্য গাড়ি তৈরির মূল লক্ষ্য।
শান্ত জানান, দুই বছর আগে সূর্য গাড়ি তৈরির ধারণাটি প্রথম তার মাথায় আসে, যখন বর্তমানে বহুল ব্যবহারিত অটো ভ্যান ও রিকশার প্রচলন শুরু হয়।
গত ১ সেপ্টেম্বর শান্ত আশুলিয়ার স্থানীয় একটি কারখানায় প্রথম একটি গাড়ি তৈরি করেন। সেটি এখন আশুলিয়ার কবিরপুরে আব্দুস সাত্তার নামে এক চালকের মাধ্যমে পরীক্ষামূলকভাবে চালানো হচ্ছে। গাড়িটি তৈরি করতে তার সময় লেগেছে এক সপ্তাহ।
শান্ত জানান, গাড়িটি তৈরি করার পর তিনি অনেক সাড়া পাচ্ছেন। কবিরপুরের অনেক চালক গাড়ির ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তার আশা, কিছুদিনের মধ্যেই তিনি বাণিজ্যিকভাবে গাড়িটির উৎপাদন শুরু করবেন।
তিনি বাংলানিউজকে জানান, সম্পূর্ণ গাড়িটি তৈরি করতে তার খরচ পড়েছে প্রায় ৭০ হাজার টাকা। তবে বাজারজাতকরণের সময় প্রতিটি গাড়ির খুচরা মূল্য হবে ৭৫-৮০ হাজার টাকা।
নিরাপত্তার ব্যাপারে তিনি জানান, সতর্কতার সঙ্গে চালালে সাধারণ ভ্যান বা রিকশার মতোই সূর্য গাড়ি সম্পূর্ণ নিরাপদ। গাড়িটি বাংলাদেশের সকল রাস্তায় ব্যবহারের উপযোগী। তবে এর জন্য মসৃন রাস্তার প্রয়োজন হবে। খানা-খন্দপূর্ণ রাস্তায় এটি চলবে না।
সূর্য গাড়ি তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে তিনটি প্রধান উপাদান একটি ভ্যানগাড়ি, একটি ব্যাটারি ও একটি সোলার প্যানেল এবং প্রয়োজনীয় আনুষঙ্গিক আরো উপাদান।
শান্ত জানান, তিনি জার্মানীর সোলার ল্যান্ড কোম্পানির ৫০ ওয়াটের মোট চারটি সোলার প্যানেল লাগিয়েছেন গাড়িটিতে। আর ৬০ অ্যাম্পিয়ারের মোট চারটি ব্যাটারি রয়েছে।
শান্ত জানান, সূর্য গাড়ির ছাদে স্থাপিত সৌর প্যানেলের মাধ্যমে ব্যাটারি চার্জ হয়। সেই চার্জে গাড়িটি চলে। এতে উন্নতমানের চার্জ কন্ট্রোলার ও নিজেদের তৈরি সার্কিট ব্যবহার করার কারণে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গাড়িটি চলবে। রাতে চালানোর জন্য রয়েছে দুই ঘণ্টা চার্জ ব্যাক-আপ সুবিধা।
গাড়ি উৎপাদনের বিষয়ে শান্ত জানান, ঢাকার বাসাবোর একটি কারখানার সঙ্গে তার চুক্তি হয়েছে। সেখান থেকে তিনি চাহিদা অনুযায়ী গাড়ি উৎপাদন করবেন।
শান্ত এখন বর্তমানে যেসব অটো গাড়ি বৈদ্যুতিক চার্জের মাধ্যমে চলে সেগুলোকে তিনি প্লান্টের মাধ্যমে সোলার চার্জের আওতায় নিয়ে আসতে চান। এজন্য তিনি ঢাকার বাসাবো মাদারটেক, গাজীপুর, পাবনা ও চুয়াডাঙ্গায় সোলার প্লান্ট স্থাপন করতে চান। যেখানে প্রতিদিন ৬০ থেকে ১০০টি গাড়ি সোলার চার্জ নিতে পারবে। আর এ কাজে তাকে ঋণ ও কারিগরি সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (ইডকল) নামের একটি বেসরকারী সংস্থা।
তরুণ এ উদ্ভাবক সরকারের কাছে আহবান জানান পরিবেশবান্ধব এই সূর্য গাড়ি চালানোর জন্য স্থানীয় প্রশাসন থেকে যেন সহায়তা করা হয়। প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা পেলে দেশে বিদ্যুত সাশ্রয়ী আরো নতুন কিছু উদ্ভাবন করতে পারবেন বলেও তিনি বিশ্বাস করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১১২০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৪