ঢাকা: অর্থমন্ত্রীর মাথার ঠিক উপর দিয়ে উড়ে যায় একটি ড্রোন। কোয়াডরোটর এই ড্রোনটি তিনশ’ গ্রামের একটি পণ্য নিয়ে উড়ে গিয়ে মন্ত্রীর সামনেই নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলে আসে।
এই দৃশ্যটি সম্প্রতি একটি ড্রোনের পণ্য আনা নেওয়ার কাজ দেখাতে প্রদর্শন করা হয়। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সিলেটের মেট্রোপলিটন বিশ্ববিদ্যালয়ে এটি দেখেন।
দেশে প্রথমবারের মতো ড্রোন দিয়ে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় পণ্য আনা নেওয়ার এমন ‘ড্রোন অ্যাপ্লিকেশন’ তৈরি করেছেন সৈয়দ রেজওয়ানুল হক নাবিল।
নাবিল শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ড্রোন প্রজেক্ট টিমের প্রধান। একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগে মাস্টার্স সম্পন্ন করে তিনি এখন সিলেটের মেট্রোপলিটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছেন।
বিশ্বে গুগল ও অ্যাম্যাজন এই দুই প্রতিষ্ঠান ড্রোন দিয়ে পণ্য আনা নেওয়ার কাজটি করতে পেরেছে। তবে তাদেরও ড্রোনের সাহায্যে পণ্য আনা নেয়া কাজও পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে। এখনও চূড়ান্তভাবে এর প্রচলন শুরু হয়নি।
এ অবস্থায় নাবিলের উদ্ভাবন করা ড্রোনটির পণ্য আনা নেওয়ার কাজের বেশ কয়েকটি পরীক্ষা সফল হয়েছে। এর মাধ্যমে ড্রোনের পণ্য বা পার্সেল সার্ভিস জনপ্রিয় হতে পারে বলে মনে করেন নাবিল।
মেট্রোপলিটন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে নতুন যোগ দেওয়া নাবিল চলতি সেমিস্টারে ড্রোনের জন্য একটি বিশেষ ল্যাব বাস্তবায়ন করছেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে শিগগিরই অত্যাধুনিক এই ল্যাব থেকে ড্রোনের বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন বাস্তাবয়ানের পাশাপাশি প্রফেশনাল প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করা হবে।
নাবিল জানান, মেট্রোপলিটন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ফান্ডিং করতে রাজি হয়েছেন। আর শিক্ষক হিসেবে ড্রোনসহ প্রফেশনাল প্রযুক্তি উন্নয়ন ও প্রজেক্টে ফান্ড বাড়ানোর একটি সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে।
নাবিল আশা প্রকাশ করে বলেন, চলতি সেমিস্টারেই ড্রোনের জন্য বিশেষায়িত ল্যাব গঠন করে চালু করা সম্ভব। একাডেমিক কাজে শিক্ষার্থীরা এর ব্যবহারের সুযোগ পাবে না। শুধু প্রজেক্ট বাস্তবায়নের সঙ্গে জড়িত শিক্ষার্থীরা এখানে কাজ করবে।
ড্রোনের কাজের পাশাপাশি রোবোটিক্সের কাজও করা হবে।
প্রাথমিক ভাবে প্রায় ১৫ লাখ টাকার একটি বাজেটে এই ল্যাব বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এরকম বিশেষায়িত ল্যাব বাংলাদেশে আর নেই বলে জানান নাবিল।
পরবর্তীতে ল্যাবটি সমৃদ্ধ করার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগে প্রস্তাবের মাধ্যমে আরও সম্প্রসারণের ইচ্ছা আছে বলে জানান নাবিল।
এই মুহূর্তে নাবিল ড্রোন প্রজেক্টে বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন যোগ করতে কাজ করছেন।
তিনি জানান, ড্রোন প্রজেক্টকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে। একটা ড্রোন হবে এরকম যেগুলো অনেক দূরে যেতে সক্ষম এবং তার গতি অনেক বেশি। এই ড্রোন সিভিল ও মিলিটারি উভয় কাজে ব্যবহার করা যাবে। আবার আরেকটি মাল্টি রোটেড ড্রোন যার অনেকগুলো পাখা থাকবে। এটি কোনো একটা জায়গায় স্থির থাকতে পারবে। এটি ইনডোর এবং আউটডোরে কাজ করতে সক্ষম হবে।
উদাহরণ দিয়ে নাবিল বলেন, আগুন নেভানো, প্রাথমিক চিকিৎসা সামগ্রী নিয়ে যাওয়া, বন্যা দুর্গত এলাকায় সাহায্য পাঠানো ইত্যাদি কাজে এটি ব্যবহার করা যাবে।
নাবিলের বাস্তবায়ন করা ড্রোন খুব সাশ্রয়ী জানিয়ে তিনি বলেন, ব্যাটারি চার্জে যে ব্যয় হয় এটার জন্য শুধু তাই লাগবে।
একটা হেলিকপ্টারকে ঘণ্টায় যেখানে এক লাখ টাকা দিতে হয় ড্রোনের খরচ পড়বে মাত্র ১৫ থেকে ২০ টাকা।
নাবিল জানান, শাবিপ্রবিতে ড্রোন কন্ট্রোল স্টেশন তৈরি করা হয়েছে। আপাতত এটি পোর্টেবল ভার্সনে চলছে। এটা যেকোন জায়গায় নিয়ে যাওয়া যায়। এটার কয়েকটা ভাগ থাকবে। একটা ভাগ হবে যেখান থেকে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ৩০-৪০ কিলোমিটারের দূরত্বের এলাকায় যেকোনো অপারেশন পরিচালনা করা হবে। আর অটোনোমাস পদ্ধতিতে ৫০-৬০ কিলোমিটার দূরে এটি পাঠানো যাবে।
নাবিল বলেন, যখন আরও দূরে কোথাও কোনো কাজ বা অপারেশন প্রয়োজন তখন পোর্টেবল গ্রাউন্ড কন্ট্রোল স্টেশন নিয়ে যাওয়া যাবে। সে যদি কোনো ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে তাহলে ফুল অটোনোমাস সিস্টেমে আগের বলে দেওয়া জায়গায় জরুরি অবতরণ করতে পারবে অথবা আবার উড্ডয়ন স্থলে ফিরে আসবে।
নাবিল জানান, শাবিপ্রবিতে তার সঙ্গে ড্রোন টিমে আরও ৫ জন শিক্ষার্থী কাজ করছেন। ড্রোন প্রজেক্টের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে রয়েছেন ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল।
বাংলাদেশ সময়: ০৩৪০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০২, ২০১৪