বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র থেকে: এবার মোবাইল-কম্পিউটার গেমের মধ্যে নিয়ে আসা হলো মাইক্রো ক্রেডিট বা ক্ষুদ্রঋণ। গেম খেলে মাইক্রো ক্রেডিটের ধারণা বোঝাতে তৈরি করা হয়েছে এটি।
মাইক্রো ক্রেডিট ধারণা তরুণ প্রজন্মকে জানাতে ‘প্রজেক্ট অনির্বাণ’ নামের গেমটি তৈরি করেছে ‘পিসিলিংকআইটিপল্লী’ নামের একটি আইটি প্রতিষ্ঠান। তারা গত ৭ বছর ধরে মাইক্রো ক্রেডিট কার্যক্রমের বিভিন্ন প্রযুক্তি সুবিধা নিশ্চিতের লক্ষ্যে কাজ করছে।
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে পল্লী-কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)-এর রজতজয়ন্তী অনুষ্ঠান ও গ্রামীণ পণ্য মেলায় এ গেমটি প্রথমবারের মতো সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়।
রোববার থেকে শুরু হওয়া এ মেলা চলবে ১ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে। মেলার একটি স্টলে গেমটি প্রদর্শন করা হচ্ছে। একইসঙ্গে দর্শনার্থীরা মাইক্রো ক্রেডিট বা ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে গেমসটি খেলারও সুযোগ পাচ্ছেন।
বাংলানিউজকে গেমটির বিবরণ দিয়ে পিসিলিংক জানায়, এখানে একটি টার্গেট দেওয়া থাকবে। সে অনুযায়ী গেম খেলে পয়েন্ট সংগ্রহ করতে হবে। গ্রাম্যচিত্রের গ্রাফিক্সে গেমের দু’টি চরিত্র থাকে। এরমধ্যে একটি ‘বিজয়’ অন্যটি ‘জয়িতা’।
অ্যান্ড্রয়েড মোবইল ও ডেক্সটপ- দু’টি ভার্সনে গেমটি বাংলা ও ইংরেরি ভাষায় খেলা যায়।
গেমটি খেলতে গিয়ে দেখা যায়, যে পয়েন্ট সংগ্রহের টার্গেট দেওয়া হয় তা অর্জন করতে না পারলে ফের গেমটি শুরু করতে হয়। পয়েন্ট অর্জন করে চার ধাপ পর্যন্ত এগিয়ে যেতে হয়। গেম পয়েন্ট লাভের সঙ্গে সঙ্গে চরিত্রের জীবনযাত্রার মানও পাল্টে যেতে দেখা যায়।
ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের মাধ্যমে কীভাবে লোকজন তার জীবন বদলে দিচ্ছে সেই চিত্র এখানে তুলে ধরা হয়।
এ প্রসঙ্গে পিকেএসএফ’র ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর (ডিএমডি) ড. মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, মানুষ ক্ষুদ্র ঋণ নেওয়ার পর কি কি সুফল পাচ্ছে, কি করে জীবনযাত্রার মান পাল্টে যাচ্ছে- সেই চিত্র বোঝানো হয়েছে এই গেমে।
গেমটিতে চতুর্থ ধাপের পর পঞ্চম ধাপটি আনলিমিডেট করে রাখা হয়েছে। এ পর্যায়ে ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতা অনেক সচ্ছল হন এবং উদ্যোক্তা পর্যায়ে চলে যান। তখন তিনি অনেক মূলধনের মালিকও হন।
গেমটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘প্রজেক্ট অনির্বাণ’। অনির্বাণ শিখা যেমন জ্বলতেই থাকে, তেমনি ক্ষুদ্রঋণ সমাজে আলো জেলে দিতেই থাকবে। দরিদ্রতা ঘোঁচাতে তার ভূমিকা চলতেই থাকবে- সেই ধারণা থেকেই এই নামকরণ। জানালেন গেমটির উদ্ভাবক ইমরান আতিকুল হক। তিনি পিসিলিংকআইটিপল্লী’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
গেমটি তৈরি করতে তার সঙ্গে আরও ছিলেন, পিসিলিংকআইটিপল্লী’র অনলাইন মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ মো. নিশাদুর রহমান, সাদিকুর রহমান শাওন ও মাকসুদুর রহমান।
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মেলার স্টলে গেমটি দেখিয়ে ইমরান আতিকুল হক জানান, গত ৮ বছর ধরে তারা মাইক্রো ক্রেডিট ফার্মগুলো নিয়ে কাজ করছেন।
একসময় তাদের চিন্তায় আসে কি করে একটি গেমের মাধ্যমে মাইক্রোকেডিট মানুষকে বোঝানো যায়। কেননা এটা নিয়ে গ্রামে ও শহরে অনেক ভুল ধারণা আছে। আর তরুণ প্রজন্মরা গেমে আকৃষ্ট হয়ে মাইক্রোকেডিট ধারণা সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান লাভ করতে পারবে। সেই থেকে গেমটি তৈরি শুরু হয়।
পিকেএসেফের অনেকগুলো সহযোগী সংগঠনের সঙ্গে কাজ করেছে পিসিলিংকআইটিপল্লী।
গেমটির মাধ্যমে মাইক্রোকেডিট বোঝা ও জনসচেতনতা জাগাতে ব্যাপক ভূমিকা রাখা সম্ভব বলে মনে করেন ইমরান আতিকুল।
গেমটি তৈরির সঙ্গে জড়িত চারজনই ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ (এআইইউবি)-এর ছাত্র। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে গেমটি প্রদর্শন করে তারা এর আগে প্রথম স্থান অধিকার করেছেন।
মাসখানেক পরে গেমটি বিভিন্ন প্লে-স্টোরগুলোতে ছেড়ে ছাড়া হবে। তবে এখনই গেমটি পেতে হলে পিসিলিংকআইটিপল্লীর ওয়েবাসইটে গিয়ে যে কেউ ডাউনলোড করে খেলতে পারেন- জানান পিসিলিংক ম্যানেজিং ডিরেক্টর ইমরান আতিকুল।
পিসিলিংক আশা করে, পিকেএসেএফের মাধ্যমে গেমটি তৃণমূল পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। আর এতে ক্ষুদ্রঋণ বিষয়টি সহজেই বোঝানো যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩০৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০১৪