গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগীর তথ্য জানায় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)। সে সময় থেকেই সাধারণ জনগণকে যথাসম্ভব লোক সমাগম এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয় ইস্টটিটিউটের পক্ষ থেকে।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় রাইড শেয়ারিংয়ের চালক ও যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে এর বাড়তি চাহিদার বিষয়টি জানা যায়।
বৃহস্পতিবার (১২ মার্চ) দুপুরে গুলশান-১ নম্বর চত্বরে পাঠাও রাইড শেয়ারের মোটরবাইক চালক মমিনুর রহমান বলেন, সাধারণত দুপুরবেলা এই এলাকায় রাইড রিকোয়েস্ট কম পাওয়া যায়। কিন্তু এই সপ্তাহে বসে থাকতে হয়নি। বলতে গেলে সারাদিন এবং রাতেও একটা রাইড শেয়ার করার সাথেই আরেকটা রাইড পেয়েছি। আগের যে কোনো সপ্তাহের চেয়ে নতুন যাত্রী পেয়েছি এই সপ্তাহে বেশি, যারা প্রথমবার রাইড শেয়ারিং ব্যবহার করছেন। অবশ্য নতুনদের নিয়ে একটু সমস্যাও হয়। কয়েকজন যাত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। তারা করোনার কারণে নাকি বাসে যাবেন না। বাইকে যাবেন। তাই নতুন একাউন্ট খুলেছেন।
মালিহা জাবিন বুশরা নামের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএ পর্যায়ের এক শিক্ষার্থী নিয়মিত যাতায়াত করতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে। তবে এখন যাচ্ছেন রিকশা বা রাইড শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে। তিনি বলেন, সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে যাতায়াত করি। তবে এখন কোনো ঝুঁকি নিতে চাই না। সবাই বলছে, জনসমাগম এড়িয়ে চলতে। এটা তো বাসে খুব বেশি; হুড়োহুড়ি, ধাক্কাধাক্কি। অন্য বাসগুলোও তাই। অনেকগুলো নামে সিটিং হলেও আসলে ‘চিটিং’। গাদাগাদি করে যাত্রী ওঠাবেই। তাই রিকশায় যাই আর নয়তো উবার-পাঠাও-সহজে।
এদিকে সদ্য সমাপ্ত সপ্তাহে এর আগের সপ্তাহের তুলনায় অর্থ্যাৎ দেশে করোনা আক্রান্তের খবর প্রকাশের আগের সপ্তাহের তুলনায় রাইড শেয়ারিংয়ের চাহিদা বেড়েছে বলে জানিয়েছে সহজ। দেশীয় এই স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানটির রাইডস বিভাগের প্রধান আদনান খান বাংলানিউজকে বলেন, ‘আগের সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে চাহিদা বেড়েছে। আমরা সঠিক রাইডের সংখ্যা প্রকাশ করতে পারি না। তবে দুই সপ্তাহের তুলনা করলে এই সপ্তাহের কার্যদিবসগুলোতে গত সপ্তাহের কার্যদিবসগুলোর তুলনায় ১৫ থেকে ২০ শতাংশ চাহিদা বেশি এসেছে। করোনার কারণেই এমনটা হচ্ছে কি না সে বিষয়টি এখনই নিশ্চিত করে বলতে পারছি না। তবে রাইড রিকোয়েস্ট বেড়েছে, এটা সত্য। ’
এদিকে সহজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও নারী উদ্যোক্তা মালিহা কাদির বাংলানিউজকে বলেন, ‘এই সময়ে রাইড শেয়ারিং বেড়েছে। যদিও করোনা বা এর মতো রোগ আমাদের কাম্য নয়, তবুও এমন পরিস্থিতিতে রাইড শেয়ারিং প্ল্যাটফর্মের মতো ধারণার প্রয়োজনীয়তা আবার নতুন করে উপলব্ধি করা গেলো। ’
তবে রাইড শেয়ারিং প্ল্যাটফর্মও যে করোনার ঝুঁকি থেকে মুক্ত নয় সে বিষয়েও সতর্ক করলেন মালিহা কাদির। তিনি বলেন, ‘রাইড শেয়ারিংয়ে যাতায়াত করলেই যে করোনার ঝুঁকি থাকে না একথা কিন্তু বলছি না। সেখানেও ঝুঁকি থাকে। পেছনের যাত্রী হাঁচি, কাশি দিলে সেখানে তো ঝুঁকি থাকেই। এরজন্য আমরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ আমাদের স্থানীয় কর্তৃপক্ষগুলো যে ধরনের সাবধানতা অবলম্বন করার পরামর্শ দেন যাত্রী-চালকদের উভয়দের আমরা সেগুলো মেনে চলার জন্য উদ্বুদ্ধ করি। হেলমেট ব্যবহার নিয়ে প্রায়ই একটা কথা শোনা যায়। একই হেলমেট অনেক যাত্রী পরেন। এখন বাইকার তো একাধিক হেলমেট বহন করতে পারবেন না। আমরা পরামর্শ দেই যাত্রীরা মাথায় ক্যাপ বা শাওয়ার ক্যাপ পরিধান করে হেলমেট পরতে পারেন। ’
অন্যদিকে ঝুঁকির এই সময়ে যাত্রীদের অ্যাপের বদলে ‘ক্ষ্যাপে’ যাতায়াত না করারও পরামর্শ দেন মালিহা কাদির। তিনি বলেন, ‘দেখেন এ ধরনের রোগে কেউ আক্রান্ত হলে এটা জানা খুব জরুরি হয়ে পড়ে যে, সাম্প্রতিক সময়ে তিনি কাদের সাথে মিশেছেন। তিনি কারও দ্বারা আক্রান্ত হলেন কি না বা তার থেকে আর কারও আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা আছে কি না সে বিষয়ে ‘ট্রেস’ করা যাবে। আমাদের এই সময়ে সর্বোচ্চ সচেতনতা এবং সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। দেশের মোটামুটি সব রাইড শেয়ারিং প্ল্যাটফর্মের অ্যাপের ভাড়া ক্ষ্যাপের চেয়ে বেশি না। তাই আমি সবাইকে অ্যাপে সতর্কতা এবং সচেতনতার সঙ্গে চলাচলের পরামর্শ দেব। ’
বাংলাদেশ সময়: ১০৪৬ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০২০
এসএইচএস/এজে