ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

২০২১ সালে প্রযুক্তিগত পরিবর্তন নিয়ে টেলিনরের ৫ পূর্বাভাস

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২১
২০২১ সালে প্রযুক্তিগত পরিবর্তন নিয়ে টেলিনরের ৫ পূর্বাভাস রাজধানীর বসুন্ধরায় জিপি হাউসে এক অনুষ্ঠানে পূর্বাভাস জানায় টেলিনর

ঢাকা: চলমান বৈশ্বিক মহামারি বিভিন্ন সামাজিক পরিবর্তন ঘটাচ্ছে এবং দেশজুড়ে ডিজিটালাইজেশন প্রযুক্তি সংক্রান্ত বিষয়গুলো গ্রহণের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করছে। টেলিনর রিসার্চ সম্প্রতি প্রযুক্তি নিয়ে পাঁচটি পূর্বাভাস দিয়েছে, যা চলতি বছর মানুষের পথচলার বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিবর্তনে সহায়তা করবে।

গ্রামীণফোন সোমবার (৮ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর বসুন্ধরায় জিপি হাউসে এক অনুষ্ঠানে টেলিনরের প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট এ পূর্বাভাসগুলো নিয়ে গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বিটিআরসি চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, বাংলাদেশ সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল তা বাস্তবে রূপ নিচ্ছে। মানুষকে তাদের প্রয়োজনীয় সমাধান প্রদানে উদ্যোক্তা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বিশেষজ্ঞদের জন্য গবেষণার বিষয়গুলো ভবিষৎ কর্মপন্থা সঠিকভাবে পরিচালিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

টেলিনর রিসার্চের হেড বিয়র্ন তালে স্যান্ডবার্গ ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে গবেষণার বিষয়গুলো উপস্থাপন করেন।

টেলিনর রিসার্চ বলছে, অগমেন্টেড রিয়েলিটি (এআর), ভার্চ্যুয়াল রিয়েলিটি (ভিআর) ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ভিত্তিক অত্যাধুনিক চ্যাট-বটের মতো প্রযুক্তিগুলো মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে; বিশেষ করে, যারা দীর্ঘমেয়াদে একাকীত্ব অনুভব করছেন, তাদের জন্য এগুলো উপকার বয়ে আনবে।

গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী ইয়াসির আজমান বলেন, আমরা সম্মিলিতভাবে ডিজিটাল বাংলাদেশের পথচলাকে ত্বরান্বিত করতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করেছি। ডিজিটাল প্রযুক্তি বৈশ্বিক মহামারি চলাকালীন আমাদের বিভিন্নভাবে সাহায্য করেছে। আমাদের আচরণে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে। এ টেক ট্রেন্ডগুলো দেখাচ্ছে যে, প্রযুক্তি ও কানেক্টিভিটি আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি নিশ্চিত করতে, শিক্ষা ব্যবস্থাকে আধুনিকায়নের মাধ্যমে জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির ভিত্তি তৈরি করবে। একই সঙ্গে গ্রিনটেক-এর মতো বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে, ইন্টারনেটে নিরাপদে থেকে উন্নত বাংলাদেশ গড়তে সাহায্য করবে। এ বিষয়গুলো বাস্তবায়নের জন্য আমরা রেগুলেটর, ইকোসিস্টেম পার্টনার, উদ্ভাবক ও পলিসি মেকারদের সঙ্গে কাজ করতে অঙ্গীকারবদ্ধ।

এটুআই পলিসি অ্যাডভাইজার আনির চেীধুরী, এসবিকে ভেনচার অ্যান্ড এসবিকে ফাউন্ডেশনের ফাউন্ডার সোনিয়া বশির কবির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাউনসেলিং সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মেহতাব খানম আলোচনায় অংশ নেন।

২০২১ সালের পাঁচটি টেক ট্রেন্ড নিয়ে টেলিনরের পূর্বাভাস

ট্রেন্ড ১: মানসিক স্বাস্থ্যজনিত অসুস্থতা মোকাবিলায় প্রযুক্তির ব্যবহার

কোভিড-১৯ মানুষের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা ও একাকীত্বের বিষয়টিকে ব্যাপকভাবে বাড়িয়ে তুলেছে, যা নতুন এক স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। দীর্ঘস্থায়ী বিচ্ছিন্নতা মানুষকে বিষণ্ণ ও উদ্বিগ্ন করে তোলে।

স্যান্ডবার্গ বলেন, ২০২০ আমাদের দেখিয়ে দিয়েছে যে, নিঃসঙ্গতা জনস্বাস্থ্যের একটি মৌলিক সমস্যা। এটি এমন একটি স্বাস্থ্য সমস্যা, যা মোকাবিলায় ২০২১ সালে প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ের প্রয়োজন পড়বে। আমরা অনুমান করছি যে, ই-হেলথ খাত মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়ে নতুন ব্যবস্থাপনা নিয়ে আসবে, যা এ খাতে সেবার বিকাশ ঘটাবে। পুরোপুরি ফাইভ-জি বাস্তবায়নকারী দেশগুলোতে আমরা সম্ভবত হলোগ্রাফিক কমিউনিকেশন টুল হিসেবে অগমেন্টেড ও ভার্চ্যুয়াল রিয়েলিটির ব্যবহার দেখতে পাবো আগামী বছরের মধ্যে।

এছাড়াও, ২০২১ সালে নতুন প্রজন্মের চ্যাট-বটের আবির্ভাব ঘটবে। যারা নিঃসঙ্গতায় ভুগছেন তাদের সাহায্য করার উদ্দেশ্যে এটি বিশেষভাবে ডিজাইন করা হবে। কৃত্রিমবুদ্ধিমত্তা নির্ভর এ ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রশ্নের উত্তর দেওয়া, কল করার সুবিধা, বিনোদনসহ বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে, যা সংযুক্ত থাকার অনুভূতি দেবে।

ট্রেন্ড ২: গ্রিনটেকের জন্য একটি ডিজিটাল বসন্ত

স্যান্ডবার্গ বলেন, মহামারি অতীব প্রয়োজনীয় জলবায়ুবান্ধব কার্যকলাপের সূত্রপাতের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করেছে। আমরা বিশ্বাস করি, বিশ্বের সব সরকার জলবায়ু আইন কার্যকর করার মাধ্যমে ২০২১ সালের সবুজ পুনরুদ্ধারের পথ প্রশস্ত করতে ২০২০ সালে প্রাপ্ত গতি কাজে লাগাবে।

সারা পৃথিবীর শহরগুলোতে ডেটা সেন্টার এবং মোবাইল বেইজ স্টেশনগুলোতে জ্বালানি খরচ সাশ্রয়ের জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ করবে। এমন পদক্ষেপ বায়ুশক্তির মতো নবায়নযোগ্য শক্তিকে আরও অনুমানযোগ্য করবে এবং পরিবহনের অনুকূলকরণ ও বায়ুর গুণমান পূর্বাভাসের মাধ্যমে ‘স্মার্ট’ শহর তৈরিতে সহায়তা করবে। যখন আল্ট্রা-স্মল এবং আল্ট্রা-লো পাওয়ারড ড্রোনগুলি চিত্র-প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে জলবায়ু-উন্মুক্ত অঞ্চলগুলোর ড্রোন পর্যবেক্ষণকে সম্প্রসারণ করতে আকাশে উড়তে শুরু করবে, তখন টাইনি মেশিন লার্নিং (টাইনিএমএল) নামে পরিচিত এআই-চালিত মাইক্রো আইওটি ডিভাইস অপারেশন শুরু করবে। যেসব কৃষকদের কৃষি শ্রমিক খুঁজে পেতে বেশ ঝামেলার মধ্য দিয়ে যেতে হয়, তাদের সহায়তায় শহরের বাইরে নতুন অটোনমাস মডুলার রোবট ক্ষেতে কাজ করবে। মেশিনের মাধ্যমে আগাছা পরিষ্কারের পদ্ধতি কীটনাশকের ব্যবহার কমিয়ে আনবে, ফলে কৃষিকাজের পরিবেশগত প্রভাব হ্রাস পাবে।

ট্রেন্ড ৩: পাসওয়ার্ড আতঙ্ক: সাইবার সুরক্ষা চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হবে

২০২১ সালে যারা সঠিক পাসওয়ার্ড ব্যাবহারের সমাধান সম্পর্কে অবগত নন বা যারা কঠোর ডিজিটাল হাইজিন বজায় রাখছেন না তারা ‘পাসওয়ার্ড আতঙ্ক’ নামক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হবেন। যখন আপনার মন পাসওয়ার্ড ব্ল্যাঙ্কের মতো পরিস্থিতির সামনে পড়ে, তখন এমন প্রচণ্ড হতাশার একটি অনুভূতি তৈরি হয়। প্রতি তিন মাস অন্তর আপনার পাসওয়ার্ড পরিবর্তন এবং পাসওয়ার্ড পুনরায় ব্যবহারের সাধারণ পরামর্শ এ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে। স্যান্ডবার্গ ভবিষ্যদ্বাণী করেন, যেহেতু কর্মীরা তাদের লগইন ডিটেইলস মনে রাখার জন্য মূল্যবান সময় নষ্ট করেন, আমরা ২০২১ সালের মধ্যে ব্যবহারকারী-বান্ধব সুরক্ষা সমাধানের বৃহত্তর বাস্তবায়ন দেখার প্রত্যাশা করি। পাসওয়ার্ড ম্যানেজার সুবিধা বা আইরিস এবং ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানিং সমাধান আরও বেশি প্রচলিত হবে, যার মাধ্যমে দক্ষতা, সুরক্ষা নিশ্চিত হবে এবং শ্রমিকদের ঝামেলার একটি কারণ কমবে।

ট্রেন্ড ৪: কর্ম ও সামাজিক ব্যবস্থাপনা সহজীকরণ হবে

২০২০ সালে অনেক কর্মী বাড়ি থেকে কাজ করেছেন। এ বিস্ময়কর এবং হঠাৎ রূপান্তর নির্বিঘ্নে ঘটেছে, যার ফলে চিরদিনের জন্য এটা নিশ্চিত হয়েছে যে, কানেক্টিভিটি এবং সঠিক ডিজিটাল টুলসের মাধ্যমে যে কোনো জায়গায় যে কোনো সময় কাজ সম্পাদন করা যাবে। এ রূপান্তর কর্মীদের মধ্যে নতুন প্রত্যাশা তৈরি করবে, বিশেষত বাড়ি বা অন্য স্থান থেকে নিয়মিতভাবে কাজ করার ব্যাপারে এবং কাজ ও জীবনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার বিষয়ে। শ্রমিকরা এমন সুযোগ-সুবিধাও প্রত্যাশা করে, যার মাধ্যমে যেকোন জায়গায় তারা কাজ করতে পারবেন। আজকের কফি শপগুলো যদি আগামীকালের সভাকক্ষে পরিণত হয় তাহলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

স্যান্ডবার্গ বলেন, ২০২১ সালে আমরা আশা করি অনেক প্রতিষ্ঠান অফিসের বাইরেও কর্মীদের কাজ সম্পাদনের ব্যাপারে আরও নমনীয়তা প্রদর্শন করবে। ভবিষ্যতের কাজের পদ্ধতির জন্য উপযুক্ত প্রয়োজনীয় দক্ষতা নিশ্চিত করতে পরিচালকরা কর্মীদের সাইবার সুরক্ষা ও ডিজিটাল হাইজিন, ডিজিটাল টুলস এবং প্রযুক্তি ব্যবহার সম্পর্কিত দক্ষতা বাড়ানোর ওপর আরও জোর দেবে।

ট্রেন্ড ৫: শিক্ষা ক্ষেত্রে ব্যবধান নিয়ে ভাবনা

কোভিড-১৯ লকডাউন ডিজিটাল শিক্ষার বিস্তারে এনং নতুনত্ব সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করলেও, বৈশ্বিক শিক্ষা কার্যক্রমে ব্যবধান কমাতে লকডাউন বিশেষ ভুমিকা পালন করতে ব্যর্থ হয়েছে। লকডাউনের কারণে স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় লাখ লাখ শিশু এবং তরুণ ইন্টারনেট সংযোগ না থাকার কারণে পড়াশোনা ঠিকমতো চালিয়ে যেতে পারেনি। ২০২১ সালে আমরা দ্রুত অগ্রগামী ভার্চ্যুয়াল শিক্ষার ক্ষেত্র থেকে উদ্ভাবিত দূরবর্তী, ডিজিটাল শিক্ষার নতুন এবং সৃজনশীল পদ্ধতির একটি ক্রমবর্ধমান প্রবণতা দেখতে পাবো। নেটওয়ার্ক অ্যাক্সেস এবং ইন্টারনেট-সক্ষম ডিভাইস রয়েছে, এমন সবাই এ ডিজিটাল যাত্রায় অংশ নিতে পারবেন এবং এর সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। কানেক্টিভিটি ছাড়া মানুষরা বঞ্চিত হবেন।

সবশেষে স্যান্ডবার্গ বলেন, যদি এ জরুরি সমস্যা আন্তর্জাতিকভাবে দেশগুলোর মধ্যে সঠিকভাবে সমাধান না করা হয়, তবে আমরা আসন্ন বছরগুলোতে উল্লেখযোগ্য বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবো। শিক্ষা ক্ষেত্রে ব্যবধানের ব্যাপক ঝুঁকি বাড়বে। এ ব্যবধানটি কাটিয়ে উঠতে হলে শিক্ষা এবং আইসিটি ক্ষেত্রকে শক্তিশালী এবং দ্রুত নেটওয়ার্ক নিশ্চিত করতে, সবার জন্য ডিজিটাল স্বাক্ষরতা নিশ্চিতকরণ এবং প্রচারের জন্য একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০২১
এমআইএইচ/এফএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।