ঢাকা: রোববার সম্পন্ন হলো আধুনিক সিঙ্গাপুরের রূপকার ও দেশটির প্রথম প্রধানমন্ত্রী লি কুয়ান ইউয়ের শেষকৃত্য। দেশের সর্বস্তরের জনগণের শেষ শ্রদ্ধা জানানোর পর পারিবারিকভাবে দাহ করা হয় তার মরদেহ।
প্রিয় নেতার শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে যোগ দিতে রোববার সকাল থেকেই বৃষ্টি উপেক্ষা করে সিঙ্গাপুরের রাজপথে নামে লাখো মানুষের ঢল। প্রবল বর্ষণের মধ্যে ছাতা, রেইনকোট পরে জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে শবযাত্রার দুপাশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ান জাতি,ধর্ম নির্বিশেষে দেশটির লাখ লাখ নাগরিক।
গত ২৩ মার্চ সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে মারা যান লি কুয়ান। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে গত ৫ ফেব্রুয়ারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি।
দীর্ঘ ৯১ বছরের জীবনে শুধু নিজের কর্মের মধ্য দিয়েই সিঙ্গাপুরই নয় সারা বিশ্বের ইতিহাসেই চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন লি কুয়ান ইউ। যেভাবে অতি অল্প সময়ের মধ্যেই নিতান্ত সাধারণ একটি জেলেপল্লী থেকে সিঙ্গাপুরকে প্রথম বিশ্বের কাতারে তিনি নিয়ে এসেছেন আধুনিক বিশ্বের ইতিহাসে তা তুলনাহীন।
রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য তিনি প্রথাগত পথে না হেটে নেন ব্যতিক্রমী কর্মসূচি। যে সারা বিশ্বের কাছে পরিচিত সিঙ্গাপুর মডেল নামে।
প্রাকৃতিক সম্পদহীন ৭১৮ বর্গ কিলোমিটারের ছোট্ট একটি ভূখণ্ডকে তিনি কীভাবে আজকের সিঙ্গাপুরে পরিণত করলেন তার পুরো বিষয়টি তিনি তুলে ধরেন আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘ফ্রম থার্ড ওয়ার্ল্ড টু ফার্স্ট : দ্য সিঙ্গাপুর স্টোরি’ বইতে।
১৯৫৪ সালে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত তরুণদের নিয়ে সদ্য বিলেত ফেরতা তরুণ আইনজীবী লি কুয়ান গঠন করেন সমাজতন্ত্রী ভাবধারায় পরিচালিত ‘পিপলস এ্যাকশন পার্টি’। ১৯৫৯ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে লি কুয়ান স্বায়ত্তশাসিত সিঙ্গাপুর নগরীর প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। তখন এটি ছিল ব্রিটিশ উপনিবেশের অন্তর্ভুক্ত। প্রধানমন্ত্রিত্বের চার বছরের মাথায় সিঙ্গাপুরকে মালয়েশিয়ান ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত করেন তিনি। কিন্তু ১৯৬৫ সালে মালয়েশিয়া সিঙ্গাপুরকে আর নিজেদের সঙ্গে না রাখার সিদ্ধান্ত নিলে ১৯৬৫ সালের ৯ আগস্ট এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাধীন সিঙ্গাপুর রাষ্ট্রের ঘোষণা দেন তিনি।
স্বাধীন হওয়ার সময় দেশটিতে ছিলো না কোনো প্রাকৃতিক সম্পদ। দারিদ্র্য, বেকারত্ব ছিল নিত্যসঙ্গী। অধিকাংশ মানুষই বাস করতো ঘিঞ্জি নোংরা জেলেপল্লীতে। ছিলো না শিক্ষার আলো। তার ওপর মালয়, চাইনিজ, তামিল এবং আরও অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর লোকের সম্মিলনে সেখানে চরম আকার লাভ করে জাতিগত বিদ্বেষ।
নতুন এই দেশকে নিয়ে অথৈ পাথারে পড়েন প্রধানমন্ত্রী লি কুয়ান। প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদে অপ্রতুল এমন একটি দেশের প্রধান হয়েছিলেন তিনি, যাদের পানযোগ্য পানির জন্যও নির্ভর করতে হতো অন্য দেশের ওপর। দেশটির নিরাপত্তা রক্ষার জন্য ছিলো না কোনো সামরিক বাহিনী। এত সব প্রতিকূলতা স্বত্ত্বেও সিঙ্গাপুরকে তিনি পরিণত করেছেন এমন একটি উদাহরণে যেখানে লজ্জা পাবে প্রথম বিশ্বের অনেক দেশও।
অনেকটা তার সুশাসনের ওপর আস্থা রেখেই উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও বড় বড় কোম্পানি বিলিয়ন বিলিন ডলার বিনিয়োগ করেছে সিঙ্গাপুরে। তাই স্থানীয় বাজার ও কাচামাল না থাকার পরও সেখানে তৈরি হয়েছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তেল শোধনাগার।
এ প্রসঙ্গে নিজের বইয়ে তিনি লিখেছেন ‘জাতি হয়ে ওঠার আবশ্যক উপাদান যেমন সমধর্মী জনগণ, একই ভাষা, একই সংস্কৃতি এবং একই নিয়তি সিঙ্গাপুরে নেই। নেই প্রাকৃতিক সম্পদ। এ পরিস্থিতিতে সিঙ্গাপুরের টিকে থাকার কথা নয়, তবু টিকে গেছে। ’
আর এই টিকে থাকার পেছনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন লি কুয়ান ইউ। তিনি বুঝেছিলেন এরকম বিশৃঙ্খল একটি দেশকে সঠিক রাস্তায় আনতে কঠোর আইনের প্রয়োগের কোনো বিকল্প নেই।
লন্ডনের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে উচ্চশিক্ষিত লি কুয়ান তাই সর্বাগ্রে দেশকে আইনের শাসনে বেধে ফেলার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এ জন্য একনায়ক, ডিক্টেটর, স্বৈরাচারী ইত্যাদি কম সমালোচনাও সহ্য করেননি তিনি।
দুর্নীতি থাকলে যে দেশের সব উন্নয়নই মাঠে মারা যাবে তা ভালোভাবেই জানতেন লি কুয়ান। তাই দুর্নীতি বন্ধ করতে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন করাপ্ট প্র্যাকটিস ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো (সিপিআইবি)। এই সংস্থাটি মন্ত্রী থেকে শুরু করে সরকারি আমলা, ব্যবসায়ী ও সাধারণ জনগণ নির্বিশেষে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। ফলে ধীরে ধীরে দুর্নীতিমুক্ত দেশটি। হ্রাস পায় লালফিতার দৌরাত্ম্য।
জনকল্যাণের কথা মাথায় রেখেই তিনি গণতন্ত্রকে কিছুটা পাশ কাটিয়ে সমাজতান্ত্রিক নীতি অনুসরণ করছিলেন। তবে তিনি এটাও জানতেন পুরোপুরি সমাজতন্ত্র বাস্তবায়ন করতে গেলে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আসবে না। সেক্ষেত্রে দেশ পরিণত হবে উত্তর কোরিয়ার মত।
আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও দুর্নীতি দূর করে লি কুয়ান তার মনোযোগ দেন দ্বীপরাষ্ট্রের অবকাঠামোগত উন্নয়নের দিকে।
দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার আলোকে ভবিষ্যতের জনসংখ্যার কথা বিবেচনায় রেখে তিনি নির্মাণ করেন রাস্তাঘাট, স্কুল কলেজ সহ রাষ্ট্রের ভৌত অবকাঠামো। একই সঙ্গে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা থেকে সিঙ্গাপুরকে দূরে রাখতে তিনি দেশের রাজনীতির ওপর রাখেন কঠোর নিয়ন্ত্রণ।
দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন, উপযুক্ত অবকাঠামো এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনয়ন, এভাবেই বিনিয়োগের মূল শর্তগুলো পূরণ করে সিঙ্গাপুরকে সারা বিশ্বের কাছে আকর্ষণীয় বিনিয়োগ ক্ষেত্র হিসেবে তুলে ধরেন তিনি।
টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন বজায় রাখার জন্য পররাষ্ট্রনীতিতেও নিয়ে আসেন অভিনবত্ব। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় কর্তৃত্ব নিয়ে চীন ও আমেরিকার মধ্যে ঠাণ্ডা লড়াই থাকলেও এই দুটি দেশের সঙ্গেই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলেন লি কুয়ান। সৎ প্রতিবেশীমূলক সর্ম্পক গড়ে তোলেন মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া সহ আশপাশের প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে।
লি কুয়ান জানতেন যেহেতু সিঙ্গাপুরের কোনো প্রাকৃতিক সম্পদ নেই, তাই এর মানব সম্পদই তার সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। তাই এই মানব সম্পদকেই দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য মনোনিবেশ করেন তিনি।
তার এসব পদক্ষেপের কারণেই কয়েক দশকের মধ্যেই সিঙ্গাপুরে তৈরি হয় বিপুল সংখ্যক মেধাবী ও দক্ষ মানবসম্পদ। রাষ্ট্র পরিচালনায় কোনো বিশেষ ভাবাদর্শ বা পন্থা অনুসরণ করেননি বাস্তববাদী লি কুয়ান। তার সব চিন্তা চেতনা ও কার্যক্রমের মূলে ছিলো মানুষের কল্যাণ সাধন।
তার সমালোচকরা বলে বেড়ান, তিনি স্বৈরাচারী ও কঠোর। তিনি কঠোর ছিলেন এটা সত্যি, তবে তা দেশের জন্য। তাঁর কঠোরতাই সিঙ্গাপুরকে আজকের অবস্থানে নিয়ে এসেছে। তার বক্তব্যের মধ্য দিয়েই তার কর্মের যৌক্তিকতা খুঁজে পাওয়া যায়। তিনি বলেছিলেন, ‘আমার শোকগাথাতেই শেষ কথাটি লেখা থাকবে না। পিএইচডি গবেষকরা যখন মহাফেজখানায় খোঁজাখুঁজি করবে, আমার পুরনো কাগজপত্র পড়বে, আমার শত্রুরা কী বলেছিল তা মূল্যায়ন করবে, তথ্য যাচাই বাছাই করে প্রকৃত সত্য বের করে নিয়ে আসবে, তখনই শেষ কথাটা লেখা হবে। আমি বলছি না, আমি যা কিছু করেছি তার সবই ঠিক,তবে আমি যা কিছু করেছি সব একটি মহৎ উদ্দেশ্যের জন্য। ’
সেই মহৎ উদ্দেশ্যের প্রমাণ বয়ে বেড়াচ্ছে বিশ্বদরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো ধনী ও দুর্নীতিমুক্ত সিঙ্গাপুর। দীর্ঘ ৩১ বছর ক্ষমতায় থাকার পর লি কুয়ান যখন স্বেচ্ছায় ক্ষমতা হস্তান্তর করেন, ততদিনে সিঙ্গাপুর বিশ্বের অন্যতম সুন্দর ও উন্নত দেশ। দেশটির প্রবৃদ্ধি বিশ্বের অনেক উন্নত দেশের চেয়েও বেশি।
সিঙ্গাপুর কঠোর নিয়ম-নীতির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত। আইনের প্রশ্নে এখানে কারো জন্য কোনো ছাড় নেই। সবার জন্য আইন সমভাবে প্রযোজ্য। একবিংশ শতাব্দীতেও এ রাষ্ট্রে বেত্রাঘাতসহ মৃত্যুদণ্ডের মতো কঠোর শাস্তি বহাল আছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের হিসাবে ১৯৯১ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত সিঙ্গাপুরে মোট ৪০৮ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। তবে সেদেশে কোনো করপোরেট ক্রাইম নেই, কোনো গ্যাংস্টার নেই, চাঁদাবাজ নেই, মাফিয়া চক্র নেই, মাদক সম্রাট নেই। উপরন্তু মানুষ এবং সম্পদ রাষ্ট্র কর্তৃক সম্পূর্ণরূপে সুরক্ষিত। পুলিশ, প্রশাসন ও বিচার ব্যবস্থা শতভাগ নিষ্কলুষ এবং গণমুখী। ২০০৮ সালের এক জরিপে দেখা গেছে, সিঙ্গাপুরের বিচার ব্যবস্থা এশিয়ায় দ্বিতীয় সর্বোত্তম। শূন্যকে সর্বোত্তম হিসাবের ভিত্তি ধরে চলমান বিচার ব্যবস্থা মূল্যায়নকালে দেখা গেছে, এক্ষেত্রে দশের মধ্যে হংকং-এর অর্জন ১.৪৫, সিঙ্গাপুরের ১.৯২, জাপানের ৩.৫০,দক্ষিণ কোরিয়ার ৪.৬২ এবং তাইওয়ানের স্কোর ৪.৯৩।
সিঙ্গাপুরের পাবলিক সার্ভিসের প্রায় পুরোটাই এখন প্রযুক্তিনির্ভর। কোনো কাজের জন্য কারো দুয়ারে ধরনা দিতে হয় না। ঘরে বসেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত সেবা গ্রহণ করা যায়। দেশটির শতকরা ৮৫ ভাগ নাগরিক এই সেবা সার্ভিস গ্রহণে সন্তুষ্ট।
এছাড়া দেশটি তার নাগরিকদের জন্য নিশ্চিত করেছে সামাজিক সুবিধা। সিঙ্গাপুরের প্রায় সব নাগরিকই আবাসন সুবিধা লাভের পাশাপাশি পান সব ধরনের সামাজিক সুরক্ষা। বৃদ্ধ বয়সে সিঙ্গাপুরের নাগরিকরা পান অবসরকালীন ভাতা। বিয়ের সময় এমনকি বাচ্চা হওয়ার ক্ষেত্রেও দম্পতিরা পান সরকারি প্রণোদন।
সুশাসন প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি সর্বাগ্রে বেকার সমস্যা সমাধানে সচেষ্ট হয়েছিলেন লি কুয়ান ইউ। সে লক্ষ্যে তিনি সবার আগে দৃষ্টি দিয়েছিলেন শিল্প-কারখানা গড়ার দিকে। স্বাধীনতা লাভের পর মাত্র ২০ লাখ মানুষের ক্ষুদ্র বাজার হওয়া সত্ত্বেও সেখানে গাড়ি, রেফ্রিজারেটর, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র, বেতার ও টেলিভিশনের যন্ত্রাংশ,কম্পিউটারসামগ্রী প্রভৃতি তৈরির উদ্যোগ নেন তিনি।
স্বাধীনতার সময় সিঙ্গাপুরের মাথাপিছু আয় ছিল মাত্র ৫১১ মার্কিন ডলার। এখন ২০১৩-এর হিসাব অনুযায়ী মাথাপিছু আয় (পিপিপি) ৬১ হাজার ৫৬৭ মার্কিন ডলার। ২০১০ সালে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ১৪.৫ শতাংশ। জীবনযাত্রার গুণগত মান বিবেচনায় এ দেশের অবস্থান এখন এশিয়ায় প্রথম এবং বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে ১১তম। আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে বিশ্বে এ দেশের অবস্থান যথাক্রমে ১৫ ও ১৪ তম স্থানে। পরিকল্পিত উন্নয়নের জোয়ারে জীবনযাপনে এসেছে অভাবিত পরিবর্তন, সেই সঙ্গে পরিবর্তিত হয়েছে মনোজগৎ। দেশটিতে শিক্ষিতের হার ৯৬ শতাংশ, মানুষের গড় আয়ু ৮০.৬ বছর, আবাসন সুবিধাপ্রাপ্ত নাগরিক ৯০.১ শতাংশ এবং প্রতি ১০০০ জনে ১০৭ জন ব্যক্তিগত গাড়ির মালিক।
২০০৯ সালে দেশটির মোট জিডিপি পরিমাণ ছিল ২৩৫.৭ বিলিয়ন ডলার। খাতভিত্তিক বিভাজন করে দেখা যায়, ওই অর্থবছরে জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান ২৬.৮ এবং সেবা খাতের অবদান ছিল ৭৩.২ শতাংশ। দেশটির মুদ্রাস্ফীতির হারও অত্যন্ত যৌক্তিকভাবে নির্ধারিত। ২০০৯ অর্থবছরে এ হার ছিল মাত্র শূন্য দশমিক ২ শতাংশ। সিঙ্গাপুরে মুদ্রাব্যবস্থার স্থিতিশীলতার কারণে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিও লাগামহীনভাবে ছুটতে পারে না। ফলে আর্থিক সেক্টরে তেমন কোনো অস্থিরতা নেই বললেই চলে।
পর্যটনের ক্ষেত্রেও দেশটি অভাবিত সাফল্য অর্জন করেছে। বর্তমানে ১৭৫টি স্বাধীন দেশের সঙ্গে এ দেশ কূটনৈতিক সম্পর্ক রক্ষা করছে। ২০০৭ সালে এ দেশে ১ কোটি ২ লাখ পর্যটকের সমাগম হয়েছিল। শুধু চিকিত্সা সেবা গ্রহণের জন্যই ওই সময়কালে দুই লাখ বিদেশি রোগী ওই দেশে গিয়েছিল।
সব মিলিয়ে লি কুয়ানের মৃত্যুর সময় পুরো সিঙ্গাপুর তার প্রতি শ্রদ্ধাবনত। বিশ্বের চোখেও তিনি স্বীকৃত একজন বড় মাপের প্রশাসক এবং দূরদর্শী রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা লি কুয়ান ইউকে ইতিহাসের এক সত্যিকারের বিরাট ব্যক্তিত্ব বলে উল্লেখ করে শোক জানিয়েছেন। জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন তাকে 'এশিয়ার কিংবদন্তী' বলে উল্লেখ করেছেন। চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং লি কুয়ানকে চীনা জনগণের পুরনো বন্ধু বলে সম্বোধন করেন।
লি কুয়ানের মৃত্যুর ঘোষণা দিতে গিয়ে টেলিভিশনে তাই সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সেইন লুং বলেন, 'তিনি আমাদের স্বাধীনতার জন্য লড়েছেন। শূন্য থেকে একটি দেশকে গড়ে তুলেছেন। তার মতো আর কাউকে আমরা পাব না। সিঙ্গাপুরের অনেক নাগরিক এবং অন্য অনেকের মতে সিঙ্গাপুর মানেই লি কুয়ান ইউ। '
বাংলাদেশ সময়: ২২২২ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০১৫