মৃতের সংখ্যা ১৫শ’ পার, খোলা আকাশে রাত কাটছে

ঢাকা: ভূমিকম্পে বিপর্যস্ত হিমালয় কন্যা নেপাল। বিধ্বস্ত রাজধানী কাঠমান্ডু।

এখনও ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে আছেন হাজার হাজার মানুষ। এতে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে প্রাণহানির সংখ্যা।

রোববার (২৬ এপ্রিল) রাতে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, শেষ খবর অনুযায়ী পুরো নেপালে নিহতের সংখ্যা দেড় হাজার (১৫শ’) পেরিয়ে গেছে।

এখনও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি অসংখ্য মানুষকে। যত সময় যাচ্ছে তাদের জীবিত উদ্ধারের সম্ভাবনা ততই কমে আসছে। এদিকে দেশটির নানা প্রান্ত থেকে প্রতি মুহূর্তেই আসছে প্রাণহানির সংবাদ। চলছে উদ্ধার তৎপরতা। তবে যারা বেঁচে গেছেন তাদের অধিকাংশই খোলা আকাশের নিচে রাত পার করছেন। কাঠমান্ডু শহরে রাস্তার ধারে শুয়ে, বসে রাত পার করছেন তারা।

খোলা আকাশের নিচে রাত পার করাদের মধ্যে কেউ ভূমিকম্পে হারিয়েছেন আপনজন-আত্মীয়স্বজন। কেউ বা নিজের বাড়ি-ঘর ধ্বংস হওয়ায় নেমেছেন রাস্তায়।

নেপাল পুলিশের মুখপাত্র কমল সিং বাম সরকারি তথ্যমতে জানান, নিহতের সংখ্যা ১ হাজার ১৭০ জন ছাড়িয়ে গেছে। সরকারি সূত্র বলছে, দুর্ঘটনায় বিধ্বস্ত বহু বাড়িঘরের নিচে অনেক মানুষ চাপা পড়ে আছেন। তাছাড়া বাকিরা খোলা আকাশের নিচে রাত পার করছেন।

শনিবার (২৫ এপ্রিল) স্থানীয় সময় বেলা ১১টা ৪১ মিনিটে (বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ১২টা ১১ মিনিট) রাজধানী কাঠমান্ডুসহ নেপালের বিভিন্ন স্থানে আঘাত হানে রিখটার স্কেলে ৭.৯ মাত্রার এ ভূমিকম্পটি। কাঠমান্ডু ও পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর পোখারার মধ্যবর্তী লামজুংয়ের ভূগর্ভের ৯.৩ মাইল গভীরে ছিল এর উৎপত্তিস্থল। কাঠমান্ডু থেকে লামজুং প্রায় ৮০ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত। নেপালে ৮০ বছরের বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্প এটি।

নেপালের বাইরে বাংলাদেশ, ভারত, চীন ও পাকিস্তানের বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে এ ভূমিকম্প অনুভূত হয়।

মূল কম্পনের পর অনুভূত হয় আরও বেশ কয়েকটি মাঝারি ও মৃদু মাত্রার কম্পন। মার্কিন ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস এর তথ্য অনুযায়ী প্রথম ভূমিকম্পটির ২৬ মিনিট পর দ্বিতীয় এবং এর ৮ মিনিট পর তৃতীয় ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। সব মিলিয়ে বিভিন্ন মাত্রার মোট ১৫-১৭টি কম্পন অনুভূত হয় বলে জানায় স্থানীয়রা। রাজধানী কাঠমান্ডু ছাড়াও নাগরকোট, কোদারি ও পানাওতি সহ পুরো নেপাল জুড়েই অনুভূত হয় এই কম্পন।

ভূমিকম্পে কাঠমান্ডুর বিভিন্ন ভবন ধসে পড়েছে। ভেঙ্গে পড়েছে বহু প্রাচীন মন্দির, স্থাপনা ও ঐতিহাসিক ভবন। অসংখ্য মানুষ এসব ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও চাপা পড়ে আছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।

কাঠমান্ডুর প্রাণকেন্দ্রে নয় তলা বিশিষ্ট একটি প্রাচীন টাওয়ার ধসে এর নিচে চাপা পড়েছেন চার শতাধিক মানুষ।

১৮৩২ সালে নির্মিত হয়েছিল ধারাহারা টাওয়ার নামে পরিচিত কাঠমান্ডুর ওই প্রাচীন নিদর্শনটি। প্রতিদিনই প্রচুর দর্শনার্থী ভিড় করতেন টাওয়ারটি দেখতে। এখন পর্যন্ত শুধু ওই ধ্বংসস্তূপ থেকেই ১৮০টির বেশি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম।

এছাড়া ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের অন্তর্গত কাঠমান্ডুর রাজপ্রাসাদ, প্রাচীন বেশ কয়েকটি মন্দিরও এই ভূমিকম্পে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ভূমিকম্পের কারণে নেপালের হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলেও ব্যাপক তুষার ধসের খবর পাওয়া গেছে।

ভূমিকম্পের পরপরই অ্যালেক্স গ্যাভেন নামের এক পর্বতরোহী এভারেস্টের একটি বেস ক্যাম্প থেকে তাৎক্ষণিকভাবে তুষার ধসের বিষয়টি সংবাদমাধ্যমকে অবহিত করেন।

ইতোমধ্যেই এভারেস্ট সংলগ্ন হিমালয়ের বিভিন্ন স্থান থেকে থেকে তুষারধসে চাপা পড়ে নিহত ১৮ পবর্তরোহীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে নেপালের পর্যটন মন্ত্রণালয়।