ঢাকা: স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্পে ক্রমেই বাড়ছে হিমালয় কণ্যা নেপালে নিহতের সংখ্যা। রাজধানী কাঠমুণ্ডুসহ পুরো দেশটাই যেন পরিণত হয়েছে মৃত্যুপুরীতে।
কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে রোববার (২৬ এপ্রিল) এ তথ্য জানিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। এর আগে শনিবার রাতে পুরো নেপালে নিহতের সংখ্যা দেড় হাজার ছাড়িয়ে যায়।
শনিবার (২৫ এপ্রিল) দুপুরে নেপালের পার্বত্য এলাকায় গত আট দশকের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী এই ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। উৎপত্তিস্থলে রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৭.৯।
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস’র তথ্য অনুযায়ী, প্রথম ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল রাজধানী কাঠমান্ডুর অদূরে পোখরার কাছে লামজুং। এর ২৬ মিনিট পর দ্বিতীয় এবং ৮ মিনিট পর তৃতীয় ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। বিভিন্ন মাত্রার মোট ১৫-১৭টি কম্পন অনুভূত হয় বলে স্থানীয়দের উদ্ধৃতি দিয়ে জানায় আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম।
নেপালের মতো এই কম্পন বাংলাদেশের সর্বত্র, ভারত ও পাকিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলে অনুভূত হয়। শনিবার (২৫ এপ্রিল) বেলা ১২টা ১১ মিনিটে শক্তিশালী এই ভূমিকম্পটি বাংলাদেশে আঘাত হানে।
এদিকে, ভূমিকম্পে ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন এমন অনেককে এখনও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। যত সময় যাচ্ছে তাদের জীবিত উদ্ধারের সম্ভাবনা ততই কমে আসছে। এদিকে দেশটির নানা প্রান্ত থেকে প্রতি মুহূর্তেই আসছে প্রাণহানির সংবাদ। চলছে উদ্ধার তৎপরতা।
তবে যারা বেঁচে গেছেন তাদের অধিকাংশই খোলা আকাশের নিচে রাত পার করেছেন। আর দিন পার করছেন কাঠমান্ডু শহরে রাস্তার ধারে শুয়ে, বসে।
খোলা আকাশের নিচে অবস্থান নেওয়াদের মধ্যে কেউ ভূমিকম্পে হারিয়েছেন আপনজন-আত্মীয়স্বজন। কেউ বা নিজের বাড়ি-ঘর ধ্বংস হওয়ায় নেমেছেন রাস্তায়।
মূল কম্পনের পর অনুভূত হয় আরও বেশ কয়েকটি মাঝারি ও মৃদু মাত্রার কম্পন। মার্কিন ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস এর তথ্য অনুযায়ী প্রথম ভূমিকম্পটির ২৬ মিনিট পর দ্বিতীয় এবং এর ৮ মিনিট পর তৃতীয় ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। সব মিলিয়ে বিভিন্ন মাত্রার মোট ১৫-১৭টি কম্পন অনুভূত হয় বলে জানায় স্থানীয়রা। রাজধানী কাঠমান্ডু ছাড়াও নাগরকোট, কোদারি ও পানাওতি সহ পুরো নেপাল জুড়েই অনুভূত হয় এই কম্পন।
এদিকে, এভারেস্ট সংলগ্ন হিমালয়ের বিভিন্ন স্থান থেকে থেকে তুষারধসে চাপা পড়ে নিহত ১৮ জন পবৃতারোহী। তাদের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
পর্যটন মওসুম শুরু হওয়ায় এই মুহূর্তে কমপক্ষে তিন লাখ পর্যটক নেপালে অবস্থান করছেন বলে জানিয়েছে দেশটির পর্যটন কর্তৃপক্ষ।
ভূমিকম্পে কাঠমান্ডুর ত্রিভূবন আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের রানওয়েতে ফাঁটল দেখা দেওয়ায় প্লেন ওঠানামা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। শিডিউল ফ্লাইটগুলো প্রতিবেশী ভারতের বিভিন্ন বিমাবন্দরে অবতরণ করছে। বাতিল করা হয়েছে বহু ফ্লাইট।
পাহাড় ধসের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে কাঠমান্ডুর সঙ্গে নেপালের অন্যান্য অঞ্চলের সংযোগ রক্ষাকারী বেশ কয়েকটি সড়ক। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে টেলিযোগাযোগ ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থা।
নেপাল ছাড়াও ভূমিকম্পে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রতিবেশী ভারত। নেপাল সীমান্তবর্তী ভারতের বিহার ও উত্তর প্রদেশ সহ পশ্চিমবঙ্গ ও সিকিমেও ভূমিকম্প অনুভূত হয়। সব মিলিয়ে ভারতে প্রাণ হারিয়েছেন ৪৬ জনের বেশি মানুষ।
হিমালয়ের অপরপ্রান্তে অবস্থিত চীনের তিব্বতেও ভূমিকম্পে ১২ জনের প্রাণহানির খবর দিয়েছে সংবাদমাধ্যমগুলো।
বাংলাদেশ সময়: ১৩১৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০১৫
আরএইচ
** দফায় দফায় আরও ভূকম্পনের আশঙ্কা