ঢাকা: তিন দিন অভিযান চালিয়ে ভূমধ্যসাগরের লিবিয়া ছেড়ে আসা ইতালি উপকূল থেকে প্রায় ছয় হাজার ৮০০ অভিবাসীকে উদ্ধার করেছে দেশটির কোস্ট গার্ড ও নৌবাহিনী। স্মরণকালের সবচেয়ে বড় অভিবাসী দল ধরা পড়ার খবরের চেয়েও এখন অনেক বেশি আলোচিত হয়ে উঠেছে- উদ্ধার ওই অভিবাসীদের মধ্যে এক নারীর নৌবাহিনীর টহল নৌকায়ই সন্তানের জন্ম দেওয়ার ঘটনা।
গত শুক্রবার (১ মে) সকাল থেকে শুরু করে রোববার (৩ মে) সন্ধ্যায় অভিযান শেষ করে ইতালিয়ান নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড। তিন দিনব্যাপী এ সাঁড়াশি অভিযানে এশিয়া ও আফ্রিকা অঞ্চলের ছয় হাজার ৭৭১ জন অভিবাসীকে উদ্ধার করা হয়।
অভিযান পরিচালনাকারী বাহিনীর মুখপাত্রের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম জানায়, অভিযান চালিয়ে লিবিয়া উপকূল ও তৎসংলগ্ন এলাকা ছেড়ে আসা কয়েক ডজন নৌযান থেকে এসব অভিবাসীকে উদ্ধার করা হয়। এসময় নৌযানগুলো থেকে ১০ জনের মরদেহও উদ্ধার করা হয়।
নৌবাহিনীর মুখপাত্র বলেন, রোববার উদ্ধার হওয়া অভিবাসীদের মধ্যে এক প্রসূতি নারীর প্রসব বেদনা উঠলে তাকে নৌবাহিনীর টহল জাহাজে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই নিরাপদে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন তিনি। এখন মা ও কন্যা সন্তান দু’জনেই ভালো আছেন।
জীবিকার সন্ধানে আফ্রিকা ও এশিয়া থেকে ইউরোপমুখী জনস্রোত ঠেকাতে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) যখন কার্যকর পদক্ষেপ খুঁজতে গলদঘর্ম হচ্ছে- ঠিক সেই মুহূর্তে এতো বিশাল অভিবাসী চালান উদ্ধারের খবর এলো।
ইতালিয়ান সংবাদমাধ্যম জানায়, অভিযানে উল্লেখযোগ্য সহযোগিতা করেছে ফরাসি নিরাপত্তা বাহিনী।
উদ্ধার এই বিপুলসংখ্যক অভিবাসীর মধ্যে তৎক্ষণাৎ কারও জাতীয়তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তাই এদের মধ্যে কোনো বাংলাদেশি রয়েছে কিনা তাও জানা যায়নি।
গত ১৯ এপ্রিল রাতে লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার পথে পেলাগি দ্বীপপুঞ্জের লাম্পেদুসা থেকে প্রায় একশ’ ৯৩ কিলোমিটার দক্ষিণে লিবিয়ার জলসীমায় নয়শ’ যাত্রী নিয়ে একটি নৌযান ডুবে যায়। স্মরণকালের মর্মান্তিক ওই দুর্ঘটনায় ভূমধ্যসাগরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
এ প্রেক্ষিতে সাগরে প্রাণহানি ঠেকাতে এবং মানবপাচার বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে দফায় দফায় আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা। এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে না পারলেও ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি বৈঠকে সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যাপারে একমত পোষণ করেন ওই অঞ্চলের নেতারা। সেইসঙ্গে মানবপাচার রোধে ভূমধ্যসাগর এলাকায় নিরাপত্তা জোরদারে মাসিক খরচ বরাদ্দ তিনগুণ করে ৯৭ লাখ ডলার করার বিষয়েও মতামত দেন তারা। নৌযান ডুবির ঘটনাকে সামনে রেখে জীবন বাঁচাতে অতিরিক্ত জাহাজ, প্লেন ও হেলিকপ্টার ব্যবহারের বিষয়েও সিদ্ধান্ত হয় ওই বৈঠকে।
বাংলাদেশ সময়: ০৭২৮ ঘণ্টা, মে ০৫, ২০১৫
এইচএ